ভেঙ্গেছে পিঞ্জর
মেলেছে ডানা
উড়েছে পাখি
পথ অচেনা...................
আমরা আট জন । দীর্ঘ অনেকদিন পর সবাই একসাথে বিবাহিত ব্যাচেলর হবার মাঝে আলাদা একটা মজা আছে । সেই মজা উপভোগ করার জন্য সবাই মিলে রওয়ানা দিলাম সাজেক ভ্যালীর দিকে । এই জায়গাটায় যাব যাব করেও যাওয়া হচ্ছিলনা । অবশেষে তিন দফা সময় পরিবর্তনের পর সবার সময় এক জায়গায় এসে মিলেছিল ।
সেন্টমার্টিন পরিবহনে চড়ে বসার পর জনৈক ব্যক্তি আমাদের সাজেক যাবার কথা শুনে শুরুতেই ভাব নিলেন, যেহেতু আমরা কোন বুকিং দেই নাই তাই কোন জীপ পাবনা, হোটেল পাবনা ইত্যাদি নানা রকম ভবিষ্যতবানী সে করে গেল । মনে মনে হাসলাম, বেচারা মনে হয় ভেবেছিল আমরা জীবনে প্রথম ঘুরতে বের হয়েছি, না জানি কত বিপদ সংকুল এই ঘুরে বেড়ানো ব্যাপারটা । তাকে আশ্বস্ত করলাম টেনশন নিয়েননা, বিপদে পড়লে আপনাকে ফোন দিব
বাস থেকে নামার পর দেখি জীপ ওয়ালারাই আমাদের পেছনে ঘুরছে । ঠিকঠাক করে উঠে পড়লাম একটায় । সমতল থেকে ধীরে ধীরে উপরে উঠে যাচ্ছি আমরা, বদলে যাচ্ছে দুপাশের দৃশ্যাবলী । দুপাশ যত না উপভোগ্য তার চেয়ে বেশী উপভোগ্য আসলে বন্ধুদের সংস্পর্শ । তাই সাজেক হউক আর টং দোকান হউক বন্ধুরা থাকলে যেকোন সময়ই উপভোগ্য । ভ্রমনটাকে ডেজার্ট বলা যেতে পারে ।
চলতি পথের নীলাকাশ যেন মাথা নস্ট করে দেয় । কেউ জনে বালতি ভরে নীল ছিটিয়ে দিয়েছে আকাশে । সাজেক পৌঁছে থাকার জন্য হোটেলেরও বন্দোবস্ত হয়ে গেল। দুপরের খাওয়া শেষে আমরা কাছাকাছি আর্মীর একটা পার্কের মত জায়গা আছে, সেখানে গিয়ে পাহাড়ের ভ্যালীর দিকে পা দুলিয়ে বসে বসে ভাবছিলাম ইস এই জায়গায় যদি একটা লেক থাকত কতইনা সুন্দর হত । প্রকৃতি মনে হয় হেসেছিল তখন, পরদিন সূর্যোদয় দেখার জন্য ঐ জায়গায় গিয়েত মাথা নস্ট, মেঘের/কুয়াশার সমুদ্র চোখের সামনে । উফ এই সৌন্দর্য লিখে কিংবা ছবিতে বলে বোঝানো যাবেনা........................বিশাল সাজেক ভ্যালী পুরোটা যেন চাদর পরে বসে আছে , নৈস্বর্গীক সৌন্দর্য তার । দূরে পাহাড়ের মাথার উপর হঠাত করে এসে হাজির হবে আগমনী সূর্য আর সে সোনালীচ্ছটা মেঘের চাদরে লেগে মোহনীয় করে তুলবে চারপাশ ।
রাতের সাজেকের রুপ অন্যরকম । পরিষ্কার আকাশে লাখো তারার সমাবেশ । মুখ ফসকে বলে ফেললাম আহা দেখ কত তারা গিজগিজ করছে । পাশে থাকা বন্ধু বলল তারার এই সমাবেশের জন্য গিজগিজ শব্দটা বিশেষন হিসেবে মোটেই সুন্দর না । নতুন কোন প্রতিশব্দও খুজে পেলামনা । হঠাত হঠাত ধুমকেতু খসে পড়ার দৃশ্যটাও চমতকার ভাবে দেখা মিলবে সেখানে ।
রাতে খাবার টেবিলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল ব্যাম্বুচিকেন । বাঁশের ভেতরে মশলা মাখানো মুরগী ঢুকিয়ে সেটাকে তাপে রান্না করা । কাঁচা বাঁশের মাঝে করা সে রান্নার স্বাদও অন্যরকম । আসার সময়ও খাগড়াছড়ি শহরের মোহছেন আউলিয়া রেস্টুরেন্টে (নামটা যেমনই হউক) হাঁসের ভুনা আর রুপচাঁদার স্বাদ এখনও লেগে আছে মুখে ।
সাজেক- শব্দহীন সৌন্দর্যের নাম । সব রকমের কোলাহল মুক্ত নৈস্বর্গীক নিরবতা উপভোগের জন্য চমতকার এক অভিজ্ঞতা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৫