না বুঝি দুনিয়া, না বুঝি তোমায়,
আমার কি দোষ... খালি পাপ জমাই.....
সিনেমাটা মাত্র শুরু হলো, কয়েকটা দৃশ্য দেখে কেন জানি আমার মাথায় খালি ঘুরতে লাগল পাঁচ বছর আগে দেখা ব্ল্যাক হক ডাউন এর কথা !!! না সেটার কোন কপি দেখছি তা না, দৃশ্যায়নের কিছু সাদৃশ্যের কারনে হয়ত । অবশ্য সে অর্থে সাদৃশ্য বলাটাও যুক্তিযুক্ত হয়না, এ্যাকশান নির্ভর বেশীরভাগ হলিউড মুভীতেই এরিয়াল ভিউর অত্যাধিক একটা ব্যবহার থাকেই, টপ ভিউ বা বার্ডস আই ভিউ থেকে দেখানোর জন্য । । পরবর্তীতে আরেকটা দৃশ্যে একটা ছোট ছেলের পথ দেখানোর ভঙ্গীর কারনে ব্ল্যাক হক ডাউন যেন আরো বেশী মাথায় গেঁথে গেল , যদিও পুরোপুরি ভিন্ন ধারার দুটি মুভী -- না বুঝি দুনিয়া, না বুঝি তোমায়,আমার কি দোষ...
ফটোগ্রাফীতে ডেপথ অব ফিল্ড বলে একটা ব্যাপার আছে, যেটার কম বেশী করে সাবজেক্ট কে শার্প রেখে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে দেয়া যায় কিংবা সবকিছুই শার্প করা যায় । ফটোগ্রাফীতে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে দেয়ার এই বিষয়টি যারা নতুন নতুন শিখে, কিছুদিন দেখা যায় তাদের সব ছবিই এক রকম, কেবল সাবজেক্ট টা পরিষ্কার, আর আশে পাশে পুরা দুনিয়া ঝাপসা, সেটার প্রয়োজন হউক আর না হউক । আয়নাবাজির ভিডিওগ্রাফার কে নিয়েও একই কথা বলা যায় । তিনি সম্ভবত ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে দেয়ার এই বিষয়টিতে ব্যাপক মজা পেয়েছেন, না হলে একটা সিনেমার ৫০% দৃশ্য এমন হতে পারেনা । অনেক জায়গায় মনে হয়েছে অপ্রয়োজনীয় ভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে দেয়া হয়েছে, যেটার কোন দরকার ছিলনা, বরং ওপেন ফ্রেম হলেই দৃশ্যটা অনেক বেশী ভাল লাগত, ব্যাকগ্রাউন্ড পরিষ্কার থাকলে দৃশ্যায়নটা আরও সুন্দর হত । তবে ভিডিওগ্রাফার ওয়াইড এঙ্গেলে ঢাকা শহরের যে এরিয়াল ভিউগুলো নিয়েছেন কেবল মাত্র তা দেখার জন্য হলেও এই মুভীটা দেখা যেতে পারে । মনে হয়না আর কোন বাংলা মুভীতে এত সুন্দর করে এরিয়াল ভিউ এর ব্যবহার করা হয়েছে । । সদরঘাটের সেই রুফ টপে বসে (খাওয়া দাওয়ার চিন্তা করা না লাগলে ) একটা জীবন এমনিতেই পার করে দেয়া সম্ভব !!!
চঞ্চল - শুধু মাত্র এই ছেলেটার অভিনয় দেখার জন্য হলেও এই মুভীটা দেখতে পারেন । নায়ক হবার জন্য সবসময় সিক্স পেক আর ঠোঁটে লিপিষ্টিক লাগানোর দরকার পড়েনা, যদি গল্পটা ভাল হয় আর আপনি অভিনয় জানেন ! আয়নাবজির গল্প অবশ্যই চমতকার, নতুনত্ত্ব আছে , কিন্তু কেন জানি মনে হয়েছে পরিচালক গল্পের পেছনে তত সময় ব্যয় করেননি যতটা করেছেন দৃশ্যায়নের পেছনে । গল্পের গাঁথুনি অতটা শক্তিশালী না যতটা ডিরক্টর হিসবে অমিতাভ রেজা ! আমাদের পুলিশ আর যায় হউক বেকুবনা, খোলা রাস্তায় দিনের আলোতে আসামি বদলের মত বেকুব অন্তত বাংলার পুলিশ না । পুলিশকে এত বোকা দেখানোর জন্য নির্মাতাকে ধিক্কার ব্যাপারটা আরো স্মার্টলি দেখানো যেত ।
নায়িকার চরিত্রটিকেও পরিপূর্ণ মনে হয়নি, দর্শকের মনে নায়িকার সম্বন্ধে জানার যে আগ্রহ সেটা মেটানো হয়নি, কারন তাকে কখনো পাশের বাড়ির মেয়েও মনে হয়নি , অবশ্য পাশের বাড়ির মেয়েরা কেমন সেটাও আমার খুব একটা জানা নেই, আমার আশে পাশের বাড়িতে অমন কেউ কখনো ছিলনা । ট্রাফিক জ্যামে পড়ে নায়িকার বাবার মৃত্যু- পরিচালক কি আমাদেরকে সচেতন করতে চাইলেন, না এমনিতে নায়িকার বাবাকে মারা দরকার তাই মারলেন ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলোনা । সিনেমার কিছু টেক এওয়ে মাঝে মাঝে খারাপনা, একবারে হুদাই একটা দৃশ্যায়ন এর থেকে সেটা ভাল । কে জানে পরিচালক হয়ত ছোট গল্পে যেমন পাঠকের জানার আকাংখা ধরে রেখে শেষ করে দেয়া হয়, তেমন কিছু করতে চেয়েছেন ।
নায়কের বাইরে পার্থর চরিত্রটিকে নিয়ে পরিচালকের কাজ করার চরম সুযোগ ছিল । এইখানেও কেমন যেন উদা সীনতা রয়ে গেছে । নায়কের পাশাপাশি এই চরিত্রটিকে আরো গুছিয়ে কাজ করার সুযোগ দেয়া যেত। সিনেমায় পুরোটা সময় জুড়ে দর্শক কে মোহগ্রস্ত করার মত কোন টুইস্ট ছিলনা ( তবে সিনেমা দেখার সময়টা আপনি আগ্রহ নিয়েই উপভোগ করবেন নিশ্চিত ) অথচ পার্থ আর আরেফীন শুভর চরিত্র দুটো দিয়ে পুরো অন্যরকম একটা টুইস্ট বানানো হয়ত সম্ভব হত । তাহলে শেষে ধুম করে এমন ভাবে ছবিটা শেষ করে দেয়া লাগতোনা ।
সিনেমাটা আরো অনেক ভাল করা যেত মানে এইনা যে এটা ভাল হয় নাই । আমাদের বর্তমান সিনেমা জগতের প্রেক্ষাপটে এইটা যথেষ্ঠ ভাল , নতুনত্ত্ব আছে অনেক খানি । অযথা পুরো গান শুনিয়ে সিনেমার দৈর্ঘ্য লম্বা করা হয় নাই, এইটা একটা ভাল জিনিস । গাড়িতে বসে নায়িকার গান শোনার দৃশ্যায়নটা আরো সুন্দর করা যেত, বিশেষ করে ঐ সময়ও ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে দেয়া দেখে সত্যি সত্যি মেজাজ খারপ হয়ে গিয়েছিল । পেপারের সম্পাদকের ভিডিও ক্লীপ চাওয়ার মত সস্তা রসিকতা না দেখালেও চলত, দর্শক আকর্ষন করার মত যথেষ্ঠ ভাল এই মুভী এমনিতেই চলবে।
আপনি টুইষ্টের অপেক্ষায় থাকবেন আর এর মাঝে ধুম করে সিনেমাটা শেষ হয়ে যাবে এইটাও এক ধরনের টুইস্টই বটে !!!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২