পড়ছি আর অবাক হচ্ছি । আমরা কত কিছুই জানি না । বইটি থেকে তিনটি অধ্যায় তুলে দিলাম ।
বই থেকে লেখা শুরু করেছিলাম । কিন্তু নাগরিক ব্লগ থেকে একটা পোষ্টে লেখা টা পেয়ে গেলাম । তাই আর সম্পুর্ন কষ্ট করে লিখতে হল না । লেখাটা পড়ুন । অনেক কিছু জানতে পারবেন আশা করি ।
বাংলাদেশ দালাল অধ্যাদেশ ১৯৭২’ : ঘাতকদের রক্ষাকবচ
শেখ মুজিব ও তাঁর সরকারের অন্যান্য সদস্যদের এ ধরনে বক্তৃতা বিবৃতির পাশাপাশি চলতে থাকে দালালদের সুরক্ষার আয়োজন। বিভিন্ন মহল থেকে দালালদের বিচারের জন্য সংক্ষিপ্ত আদালোতের দাবীকে উপেক্ষা করে ২৪ জানুয়ারী জারী করা হয় ‘বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ ১৯৭২’।দালালদের বিচারের জন্য এই আদেশ অনুযায়ী আসামীর ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করার অধিকার থাকলেও ফরিয়াদীকে ট্রাইব্যুনালের বিচার্য অপরাধের জন্য অন্য কোন আদালতের বিচার প্রার্থনার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
গণহত্যাকারী ও দালাল নেতাদের সুকৌশলে রক্ষার জন্যই প্রণীত হয়েছিল এই আইন। কারণ আইনের ৭ম ধারায় বলা হয়েছিল, থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি যদি কোন অপরাধকে অপরাধ না বলেন তবে অন্য কারো কথা বিশ্বাস করা হবে না, অন্য কারও অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার হবে না ট্রাইব্যুনালে। অন্য কোন আদালতেও মামলা দায়ের করা যাবে না। দালালদের আত্মীয়-স্বজনের ওসিকে তুষ্ট করার মত আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল, স্বজন হারানো নির্যাতিত দরিদ্র জনসাধারণের তা ছিল না।
২৮ মার্চ দালাল আইনে বিচারের জন্য সারাদেশের সমস্ত জেলায় মোট ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যেসব অপরাধের বিচার করা হবে তা অন্য কোন আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে ঘোষণা করা হয়। এপ্রিল মাস থেকে দালাল আইনের বিচার কাজ শুরু হয়।
দালাল আইন কুখ্যাত খুনী দালালদের জন্য রক্ষাকবচ হিসাবে দেখা দেয়। যে শান্তি কমিটির মূল কাজ ছিল নিরপরাধ বাঙ্গালীদের হত্যা তালিকা প্রস্তুত করা এবং তাদের হত্যার জন্য পাকসেনাকে সহায়তা করা, তার সদস্যরা সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদন্ড পেয়ে নিস্তার পেয়ে যায়। শান্তি কমিটির নিজস্ব ঘোষণা অনুযায়ীই এর মূল কাজ ছিল তাদের ভাষায় ‘দুষ্কৃতকারী ও ভারতীয় চরদের তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করে সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদেরকে নির্মূল করা’, সুতরাং যে কোন দালালের সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার জন্য তার শান্তি কমিটির সদস্য প্রমাণিত হওয়াই ছিল যথেষ্ট।
৩০ নভেম্বর ১৯৭৩ তারিখে তথাকথিত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগে ৩১ অক্টোবর ১৯৭৩ পর্যন্ত দালাল-অধ্যাদেশে অভিযুক্ত মোট ৩৭ হাজার ৪ শত ৭১ জনের মধ্যে ২ হজার ৮ শত ৪৮ জনের মামলার নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছিল ৭ শত ৫২ জন, বাকী ২ হাজার জন বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। এর মধ্যে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় মাত্র একজন রাজাকারকে। সুতরাং সহজেই প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি গণহত্যাযজ্ঞের সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে দালালরা কোন মানুষকে হত্যা করে নি, নির্যাতিত লক্ষ কোটি মানুষের জবানবন্দী কি সবই মনগড়া গল্প ছিল? নারকীয় বধ্যভূমিগুলিতে প্রাপ্ত বহুবিধ নৃশংস নির্যাতনের চিত্রসহ বিকৃত লাশগুলির সবই কি ছিল শুধু পাক সেনার শিকার?
দালাল আইনের অধীনে ট্রাইব্যুনালের বিচারও ছিল প্রহসন মাত্র। একটি দৃষ্টান্ত এ প্রসংঙ্গে দেয়া যেতে পারে। সাংবাদিক সাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সারের অপহরণকারী আল বদরটির বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে শহীদুল্লা কায়সারকে অপহরণের অভিযোগ সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছিল, কিন্তু তবু তাকে মাত্র ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। গণহত্যার উদ্দেশ্যে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর ইত্যাদি দলে যোগদানকারী ব্যক্তিদের এইভাবে লঘু শাস্তি দিয়ে কিছু দিনের জন্য কারাগারে রেখে বিক্ষুব্ধ জনতা এবং তাদের হাতে নির্যাতিতদের রোষানল থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
দালাল রক্ষার এই ষড়যন্ত্র কুখ্যাত দালালদের তথাকথিত বিচার হওয়ার পূর্বে জনসাধারণের কাছে ধরা পড়ে নি। তবে সচেতন বুদ্ধিজীবী শেণী প্রথম থেকেই এই চক্রান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। এরপর যখন দেখা গেল সরাসরি গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী দালালরা নামমাত্র শাস্তি পেয়ে নিষ্কৃতি পাচ্ছে তখন এ ব্যাপারে সচেতনতা আরো বৃদ্ধি পায়।
২৩ জুলাই ১৯৭২ তারিখে দৈনিক বাংলায় এ বিষয়ে ‘দালাল আইন সংশোধনের প্রয়োজন’ শীর্ষক একটি রিপোর্টে লেখা হয় — ‘দেশ স্বাধীন হবার পর দালাল বলে যাদের আটক করা হয়েছে তদের শতকরা ৭৫ জনেরই মুক্তি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এই বিপুল সংখ্যক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
‘পুলিশের সংখ্যা এমনিতেই অপ্রতুল। তদুপরি কোলাবরেটরস অ্যাক্ট-এ অভিযোগ তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে শুধু থানার ওসিকে। কিন্তু ওসির পক্ষে একা অসংখ্য মামলার তদন্ত করা এক প্রকার অসম্ভব।
‘এ ছাড়া দালাল আইন সম্পর্কেও কিছু বক্তব্য রয়েছে আইন বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা বলেছেন, দালাল আইন করা হয়েছে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার জন্য। কাজেই সে অপরাধ প্রমাণের জন্য অনুসরণ করতে হয় একশ বছরের পুরনো ‘এভিডেন্স অ্যাক্ট’। এই অ্যাক্ট হয়েছে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার জন্য। কাজেই বিশেষ পরিস্থিতির অপরাধের প্রমাণের জন্য প্রণীত এভিডেন্স অ্যাক্ট অনুসরণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে নানা জটিলতা। ফলে অপরাধ প্রমাণ করা হয়ে উঠেছে অনেক ক্ষেত্রে দুঃসাধ্য।
‘একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে পরিষ্কার ভাবে। ধরা যাক একজন রাজাকার অপহরণ করেছে কোন এক ব্যক্তিকে, তার পর থেকে সে ব্যক্তির আর সন্ধান মেলেনি। এই অবস্থায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এই সিদ্ধান্ত করা যায় স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু যদি সেই রাজাকারটির বিরুদ্ধে মামলা চলে দালাল আইনে, তবে তার বিরুদ্ধে আনা যাবে না হত্যার অভিযোগ। অভিযোগ আনা হবে হত্যার জন্যা অপহরণ করা হয়েছে। কারণ এভিডেন্স অ্যাক্টে হত্যার চাক্ষুষ সাক্ষ্য প্রমাণ না এনে খুনের অভিযোগ প্রমাণ করা যায় না। সুতরাং এক্ষেত্রে যদিও লোকটি খুন হয়েছেন তবুও আইনের মার-প্যাচে আসামীকে খুনী প্রমাণ করা যাবে না।’
বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার বাধ্য হয় এ বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য। ৪ আগস্ট ১৯৭২ তারিখে মন্ত্রীসভা সাব কমিটির এক বৈঠকে অপরাধীধের সর্বোচ্চ শাস্তি দানের বিধান রাখার জন্য দালাল আইন সংশোধনের বিষয় নিয়ে আরোচনা করা হয়। তবে বৈঠকে কোন সদ্ধান্ত নেয়া হয় নি।
এইভাবে কালক্ষেপণের খেলা চলতে থাকে। ১৯৭৩ সালের ১৩ জুলই তত্কালীন আইন মন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর গণহত্যাকারীদের সহায়তাকারীদের বিচারের জন্য রাষ্ট্রকে ক্ষমতা দেবার উদ্দেশ্যে আনীত সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপন করেন। বিলটিতে বাংলাদেশ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করে গণহত্যাকারীদের দোসরদের বিচার করার জন্য রাষ্ট্রকে নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেবার কথা বলা হয়।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা : শেখ মুজিবের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ
১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর একটি আকস্মিক সরকারী ঘোষণায় দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন সকল আটক ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। ইতিপূর্বেকার সমস্ত প্রতিশ্রুতি, জনসভায় ক্রন্দন, মানব সমাজ ও ইতিহাসের কাছে দায়ী থাকার ভীতি প্রকাশ করে দেয়া বক্তব্য প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি বিস্মৃত হয়ে শেখ মুজিবর রহমান ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ নির্দেশ দেন যেন এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত দালালকে ছেড়ে দেয়া হয়, যাতে তারা দেশের তৃতীয় বিজয় দিবস পালনের উত্সবে শরীক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এই দালালদের দেশ গড়ার কাজে সামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যেই মালেক মন্ত্রীসভার সদস্যবর্গ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি এবং শান্তি ও কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার চক্রান্তকারী দালালসহ মূল স্বাধীনতা বিরোধীরা জেল থেকে বেরিয়ে আসে।
এভাবেই মানবেতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড পরিচালনাকারী উম্মাদদের আবার স্বজন হারানো জনতার মাঝে ছেড়ে দেয়া হয়। এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও সরকারী গেজেটে আত্মগোপনকারী দালালদের নাম ঠিকানাসহ আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ এবং অন্যথায় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুঁশিয়ারী জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারী করা সমন প্রকাশিত হতে থাকে, কারণ ইতিমধ্যেই তা মুদ্রিত হয়ে গিয়েছিল।
একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের কেন ক্ষমা করা হল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ মহল ও বিরোধী মহলের ধারণা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। আওয়ামী লীগের আবেগাক্রান্তরা মনে করেন দালালদের ক্ষমা করাটা ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর মহনুভবতা’, দালালদের পুনর্বাসনের জন্য তাঁকে কোন ভাবেই দায়ী করা যাবে না। অপেক্ষাকৃত যুক্তিবাদীদের বক্তব্য—পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙ্গালীদের উদ্ধার করার জন্য নাকি দালালদের ক্ষমা করতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন। বিরোধী পক্ষ অবশ্য এ যুক্তি খন্ডন করে বলেছেন, আটকে পড়া বাঙ্গালীদের মুক্তির জন্য ৯৬ হাজার যুদ্ধবন্দী পাক বাহিনী যথেষ্ট ছিল। বিরোধী পক্ষের কেউ এভাবেও মুল্যায়ন করেছেন
‘........আওয়ামী লীগের মধ্যে সামগ্রিকভাবে যদি সাম্প্রদায়িক, ভারত ও সোভিয়েত বিরোধী ও মার্কিনপন্তী শক্তি সমূহের বৃদ্ধি না হতো তাহলে এই ক্ষমা প্রদর্শন আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা সম্ভব হতো না। এই পরিবর্তন যদি না ঘটতো তাহলে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭২ সালের প্রথমে যাদেরকে বাংলাদেশের ‘জাতশত্রু’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো, সেই জাতশত্রুদেরকে দেশগড়ার কাজে আহ্বান জানানো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা কিছুতেই সম্ভব হতো না।’ (বদরউদ্দিন উমর : যুদ্ধোত্তর বালাদেশ, পৃ:১১৯। প্রথম প্রকাশ : ঢাকা, মার্চ ১৯৭৫)
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, ব্যক্তিগতভাবে শেখ মুজিবর রহমান দারলালদের ক্ষমা করার ক্ষেত্রে মহনুভবতা দেখাতে পেরেছেন শ্রেণীস্বার্থ অভিন্ন বলে। ’৭১ এর এই নৃশংস ঘাতকদের সঙ্গে এক যুগ পরেও আওয়ামী লীগের সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কের অবনতি যে ঘটেনি গত কয়েক বছরে তাদের কার্যকলাপই সেটা পমাণ করেছে। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার নামে আওয়ামী লীগ জামাতে ইসলামের মতো ঘাতকদের দলকে শুধু রাজনৈতক মর্যাদাই প্রদান করে নি, জামাতের নতুন করে শক্তিবৃদ্ধির পথও প্রশস্ত করেছে।
সাধারণ ক্ষমা প্রসঙ্গে শহীদ পরিবারবর্গ
’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের মাতা, পিতা, স্ত্রী, ও পুত্ররা শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাকে কিভাবে দেখেন ঢাকার একটি সাপ্তাহিকে পরবর্তীকালে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ তরুণ মুক্তিযোদ্ধা রুমির মা লেখিকা জাহানারা ইমাম বলেছেন, ‘গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যায় যাদের ভূমিকা সস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছিল, স্বাধীনতার পর পরই তাঁদের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সাধারণ ক্ষমার জন্য তা হয় নি। তত্কালীন সরকারের সাধারণ ক্ষমার সিদ্ধান্ত ছিল মারাত্মক একটি ভুল। সেদিন ক্ষমা ঘোষণা না করা হলে ঘাতকরা নিজেদের সমাজে পুনর্বাসিত করার সুযোগ পেত না।.......
‘প্রখ্যাত সাংবাদিক শহীদ শহীদুল্লাা কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার বলেন, বর্তমানে রাজাকার, আল বদরদের যে দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে তা শেখ মুজিবের সাধারণ ক্ষমারই ফল। ওই ক্ষমা ছিল বিচার-বুদ্ধি হীন। সেদিন সরকার যদি ঘাতকদের বিচার করে সাজা দিত, তাহলে আজ এ অবস্থা হত না।
‘পান্না কায়সার বলেন, আওয়ামী লীগের প্রথম সারির কোন নেতা যুদ্ধে আপনজন হারান নি। ফলে স্বজন হারানোর ব্যথা তাদের জানা ছিল না। ঘাতকদের তারা সহজেই ক্ষমা করে দিতে পেরেছিলেন। তাই আজ খালেকের মত ঘাতকরা বুক ফুলিয়ে সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নতুন হত্যার ইন্ধন যোগাচ্ছে। আমার মেয়ে যখন ঘাতক খালেকের বই পড়ে নানা প্রশ্ন করে, আমি উত্তর দিতে পারি না।...
‘দেশ স্বাধীন হবার একদিন আগে, ১৫ ডিসেম্বর আলবদর, রাজাকাররা এক পরিবারের তিন সহোদর ভাইকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। পরদিন ১৬ ডিসেম্বর, যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দিনে রায়ের বাজার বধ্যবূমিতে তিন ভাইয়ের লাশ পাওয়া যায়। এই তিন ভাই হচ্ছেন শহীদ বদিউজ্জামান বদি, শহীদ শাহজাহান ও শহীদ করিমুজ্জামান ওরফে মল্লুক জাহান।
‘তিন শহীদ ভাইয়ের পিতা-মাতা অনেক আগেই মারা গেছেন। এখন শুধু শহীদ বদি’র বিধবা স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে বেঁচে আছে। অপর দু’ভাই অবিবাহিত ছিলেন। বর্তমানে শহীদ বদি পরিবাদেরর সার্বিক দেখা শোনা করেন তাদের ফুপাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হুদা। তিনি ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের অধীনে যুদ্ধ করেছেন।
‘শহীদ বদি পরিবাবেরর মুখপাত্র হয়ে মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হুদা আওয়ামী লীগ সরকারের সাধারণ ক্ষমা সম্পর্কে বলেন, রাষ্ট্র প্রধান যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু যারা লাখ লাখ স্বাধীনতাকামী লোককে হত্যা করেছিল তাদের ক্ষমা করে দেয়া অমার্জনীয় অপরাধ ছিল। ছিল একটি চরম ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, শুধু ক্ষমা নয়, ঐসরকার শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি ন্যূনতম কৃতজ্ঞতাও প্রদর্শন করেনি।
‘সাধারণ ক্ষমার কারণে ৭১-এর ঘাতকরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে—এ কথা উল্লেখ করে শামসুল হুদা বলেন, এই দেশ যদি সত্যি স্বাধীন হেয়ে থাকে, তাহলে এই স্বাধীন দেশে ঘাতকদের রাজনীতি করার অধিকার বন্ধ করে দিতে হবে।
‘দশম শ্রেণীর ছাত্র শহীদ বদির পুত্র তুরানুজ্জামানের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধ, আল বদরদের হত্যাকান্ড সবই একটি ধোঁয়াটে ব্যাপার। কিছুটা বিভ্রান্তও সে। তবে ১৬ বছরের তুরান এ কথা বলেন যে, আমার পিতার হত্যাকারীদের বিচার না হওয়ায় আমি স্তব্ধ।
‘ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ও প্রগতিশীল আন্দোলণের অন্যতম সৈনিক শহীদ ডাঃ মর্তুজার স্ত্রী মিসেস মর্তুজা বলেন, যাদের প্রাণ গেছে , তাদের আত্মীয়- স্বজনরাই বুঝতে পেরেছেন, শেখ মুজিবের সাধারণ ক্ষমার মর্মান্তিক মর্ম।
‘স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রারম্ভে হানাদার বাহিনীর দোসরদের হাতে নিহত, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙারোর একুশে ফেব্রুয়ারী’ গানের অমর সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্ত্রী সারা মাহমুদ বলেন, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা কোন ভাবেই উচিত হয় নি। সেদিন সাধারণ ক্ষমা না করা হলে, অন্তত: আমার স্বামীকে হত্যা করে কোথায় দাফন করা হয়েছিল তা জানতে পারতাম। কিন্তু সাধারণ ক্ষমার ফলে আমার স্বামীর বধ্য ভূমির ঠিকানা পাই নি।
‘তিনি বলেন, ঘাতকদের অনেকেকে আমরা চিনি। সেদিন যদি তাদের ফাঁসি দেয়া হতো তাহলেও কিছুটা শান্তি পেতাম । অন্তত: বুঝতাম যে, হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। তবে আখনও তাদের শাস্তি দেয়া যায়। আমি আশা করবো সরকার এটা বিচনা করবেন। মিসেস সারা মাহমুদ ঘাতকদের বর্তমান তত্পরতা সম্পর্কে বলেন, ’৭১ সালে পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে মিলে যারা একের প এক হত্যাকান্ড চালিয়েছে, তারাই আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একইভাবেব কাজ করছে। আর এটা ঐ সাধারণ ক্ষমারই ফল।
‘শহীদ অধ্যাপক মোফাজ্জণ হায়দার চৌধুরীর স্ত্রী মিসেস মনোয়োরা চৌধুরী বলেন, ঘাতকদের সাধারণ ক্ষমা করা হবে তা আমরা ভাবরতই পারিনি। কিন্তু সরকার সাধারণ ক্ষমা করে দিলেন। আমরা ভেবেছিলাম শেখ মুজিবুর বহমান ঢাকায় এসে ঘাতকদের বিচার করবেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। শেখ মুজিব তো ব্যক্তিগতভাবেও আমদের চিনতেন। সে চেনা-জানাটুকুও কাজে লাগালো না।
‘স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুতে নিহত জ্যোতির্ময় গুহ ঠকুরতার বিধবা স্তী বাসন্তী গুহ ঠকারতা সাধারণ ক্ষমা সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রথমেই প্রশ্ন তোলেন যে, ১শ’ ৯৫ জন যুদ্ধ অপরাধী পাক সামরিক অফিসারদের কোন বিচার হলো না? শেখ মুজিব তো বহুবার বললেন, যুদ্ধ অপরাধী পাক সামরিক অফিসারদের বিচার করবেন। কিন্তু পারলেন না। আবার তিনি এ দেশীয় ঘাতকদেরও ক্ষমা করে দিলেন। আর এই ক্ষমাটাই সবকিছু এলোমেলো করে দিলো। সেদিন যদি ক্ষমা না করে অন্তত: দু’একজন ঘাতকেরও যদি সাজা হতো তাহলে অনেক শহীদ পরিবারই শান্তি পেতেন। তাছাড়া ঘাতকরাও আজ আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারতো না।
‘শহীদ অধ্যাপক সিরাজুল হকের স্ত্রী বেগম সুরাইয়া খানম বলেন, ঘাতকদের আমরা তো ক্ষমা করিনি। ক্ষমা করেছে সরকার। আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু তা পাইনি। এতে বছর পরে বিচার চাইবোই বা কার কাছে?’
‘শহীদ অধ্যাপক মোহাম্মদ সাদেকের স্ত্রী শামসুন্নাহার হতাশায়, ভয়ে কাতর। তিনি গভীর উদ্বেগ নিয়ে মেখ মুজিবের সাধারণ ক্ষমা সম্পর্কে বলেন, যাদের ক্ষমা করা হয়েছে তাদেরকে আমরা ঘৃণার চোখে দেখি। সেই ক্ষমার জোরে আজ সেই সব দালাল রাজাকাররা এখন আমাদের বাড়ি থেকে উত্খাতের চেষ্টা করছে।
‘তিনি বলেন, সাধারণ ক্ষমা একটা গুরুতর অপরাধ ছিল। সে সব ঘাতককে আমরা সবাই চিনি এবং জানি। তারা আমাদের চারপাশেই আছে। কিন্তু আমাদের করার কিছুই নাই।
‘এদেশের সংবাদপত্র জগতের উজ্জল ব্যক্তিত্ব এবং দৈনিক ইত্তেফাকের ‘মঞ্চ নেপথ্য’ কলামের লেখক সিরাজউদ্দিন হোসেনের জ্যৈষ্ঠ পুত্র শাহীন রেজা বলেন, শুধু সাধারণ ক্ষমা নয়, এর আগে বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছিল। হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সুকৌশলে রেহাই দেয়া হয়। অথচ যাদের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের কোন প্রমাণ ছিলনা তাদেরকে জেলে ঢোকানো হয়। এছাড়াও যারা হত্যার মূল পরিকল্পনা করেছিল তারাও অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায় সকল দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এরকম প্রহসনমূলক বিচারর পর আবার আসলো সাধারণ ক্ষমা।
‘শাহীন রেজা বলেন, এ ধরনের হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এর সাথে একমাত্র তুলনা হয় জার্মান একনায়ক হিটলারের ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের হত্যাকান্ডের। অথচ তত্কালীন সরকার জঘন্য হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিলেন। এটা অত্যন্ত গর্তিত কাজ হয়েছিল। আর এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তত্কালীন সরকারের অদুরদর্শিতাই প্রমাণিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছিল বলেই আজ তারা সমাজ ও রাজরীতিতে পুনর্ববাসিত হয়েছে।
‘ইউনিট কমান্ডার শহীদ শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহের বাকির বৃদ্ধ পিতা শেখ মোহাম্মদ আবদুল বারী বলেন, শহীদদের রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতে আওয়ামী লীগ সরকার ’৭১-এর ঘতকদের ক্ষমা করে দিল। এই ক্ষমা ছিল এক অদ্ভুত খেয়ালীপনা। পৃথিবীতে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। খুনীদের ক্ষমা করে দিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত সাধারণ বিষয় যে, যারা হত্যা করে, তাদের বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু তা হয়নি। আর এই না হওয়াটা অমার্জনীয় অপরাধ হয়েছে।’(বিচিত্রা:স্বাধীনতা দিবস ’৮৭ বিশেষ সংখ্যা, পৃ: ২৮-৩৩)
মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি জিয়ার অবদান: ঘাতক ও দালালদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হবার পর রুশ-ভারত বিদ্বেষী, শার্কিনপন্থী আওয়ামী লীগ নেতা খোন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় আসেন। এ’সময় বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বদলিয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র করার এবং দালালীর কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত দলগুলি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলে। তবে এই সরকার ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় তা কার্যকরী করে যেতে পারে নি। ১৯৭৫ এর ৭ই নভেম্বর আরেকটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে মোশতাক সরকারের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেন। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারী মাসে নতুন সামরিক সরকার একটি বিশষ অধ্যাদেশ জারী করে দালাল আইন তুলে নেয়।
১৯৭৬ সালের জুন মাসে জিয়াউর রহমান যখন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, তখন জারি হয় ‘রাজনৈতিক দলবিধি’ নামে এক অভিনব অধ্যাদেশ। এতে বলা হয় কোন দল যদি রাজনীতি করতে চায় তাহলে সরকারের দেয়া কতিপয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে তারা রাজনীতি করতে পারবে। এই শর্ত পূরণ করে রাজনীতির বৈধ লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য দালালরা বিশেষভাবে তত্পর হয়। জামাতে ইসলামীর ঘাতকরা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ এবং অন্যান্য দালালরা মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম সহ কয়েক ডজন পার্টিতে সংগঠিত হয়। বাংলাদেশে মৃতপ্রায় মৌলবাদী রাজনীতিতে জিয়াউর রহমান নতুন প্রাণ সঞ্চার করেন।
১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতাসীন হন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ ছিল সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে বাদ দেয়া। ফলে ’৭১ এ বাঙ্গালী হত্যায় নেত্যত্ব দেয়ার কারণে যে সমস্ত দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল সেগুলি পুনরুত্থিত হওয়ার সুযোগ পায়। যাদের রক্তে স্বাধীন হয়েছিল এই দেশ, তাদের খুনীরা এ দেশে রাজনীতি করার হারানো অধিকার ফিরে পায়। ইতিপূর্বে ’৭৬ সালের প্রথম দিকে একটি বিশেষ মহল থেকে বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা এবং পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন গঠনের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। এই দাবীর সপক্ষে ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ গোলাম তওয়াব এবং গোপনে সংগঠিত জামাতে ইসলামী এক গণজমায়ে ও বিক্ষোভের আযোজন করে।*
আওয়ামী লীগ সরকার দালালদের পুনর্বাসরন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও স্বাধীনতাবিরোধী খুনীদের সরকারী উচ্চপদেআসন দেয় নি। জিয়াউর রহমান এসে শান্তি কমিটির সদস্য, রাজাকার, আল বদরদের নিয়ে দল গঠন করেন। একজন মুখ্য দালাল শাহ আজিজুর রহহমানকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। নিরপরাধ বাঙ্গালীদের বেয়নেট চার্জ করে এবং লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত আবদুল আলিমের মত খুনীসহ বহু দালালকে মন্ত্রীসভায় নেয়া হয়।
দালাল পুনর্বাসনের এই ধারা আজও চলছে। আজও মন্ত্রীসভায় স্থান পাচ্ছে অসহায় বাঙ্গালীদের হত্যাকারী খুনী দালালরা।
বিশ্বের ইতিহাসে গণহত্যা পরিচালনাকারী দালালদের এভাবে ‘ক্ষমা’ করে দিয়ে জনসমাজে বিচরণের জন্য ছেড়ে দেওয়ার অপর কোন নজীর রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আমাদের জানা নেই কোন দেশ স্বাধীনতার এক দশক অতিক্রান্ত হওয়ার আগে স্বাধীনতাবিরোধীদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। বিশ্ব জুরী পরিষদ আজও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধপরাধীদের বিচার করার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। নাত্সী যুদ্ধপরাধীর কঙ্কাল পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে সত্যিসত্যিই তা কথিত যুদ্ধাপরাধীর কঙ্কাল কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। বেঁচে থাকলে তাদের নিশ্চয়ই বিচার হত। গণহত্যাকারীদের বিচারের জন্য তাদের এই আগ্রহ ও সতর্কতা কোন বিদ্বেষ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবসমাজের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপরাধর সুবিচার এবং এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধের জন্যই এই ব্যবস্থা।
-------------------------------------------------------------------
*বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পুনরুত্থান, ডঃ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ১৩ বর্ষ সংখ্যা, ৩০ নভেম্বর ’৮৪, পৃঃ—২৩।