“পৃথিবিতে যে কোন অন্যায় সংঘঠিত হলে তুমি যদি ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠো, তবে জানবে, আমরা কমরেড” - চে’ গুয়েভারা।
হ্যাঁ এই হচ্ছেন চে। পৃথিবীর নিরন্ন, অসহায় ও নির্যাতিত মানুষদের প্রতি শোষনের বিরুদ্ধে ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠতেন আর সেই ক্রোধকে ভালোবাসার মহৎ অনুভূতি দ্বারা পরিচালিত করে নিরন্তন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়াকে তিনি তার জীবনের তথা একজন বিপ্লবীর জীবনের প্রকৃত কাজ বলে মনে করতেন। আজ আমরাও অনেকে ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠি এবং এই জ্বলে উঠাই সার। ক্রোধের আগুন ফুঁস করে নিভে যেতে সময় লাগে না। ঘাটে একটু বুদ্ধি থাকলে সেই আগুনে কাবাব ঝলসে দুপয়সা কামাবার ফন্দি ফিকিরও করা যায়। আর তারই নমুনা হচ্ছে আলো ঝলমলে শপিংমলে চে’র টি শার্ট,কফি মগ আর চাবির রিং বিক্রির মহোৎসব। চে পরিনত হয় ছবি বা লোগোতে আর আদর্শ পরে থাকে হিমঘরে।
তবে এটাই শেষ কথা নয়। মৃত্যুর এতো বছর পরও আজো চে অনেক বেশী প্রাসঙ্গিক। এখনো পৃথিবীর নানা প্রান্তে অজস্ত্র নিপিড়ীত মানুষকে প্রতিবাদের শক্তি যোগায় চে। তাই আজকের এই বৈষম্যমূলক মুনাফা ভিত্তিক সমাজে সামগ্রিক পরিবর্তন ঘটিয়ে সম অধিকার ভিত্তিক মানবিক সমাজ গঠন করতে হলে চে’র জীবন ও আদর্শ পর্যালোচনা করা অনেক বেশী জরুরী।
দুনিয়াব্যাপী চে নামে পরিচিত হলেও চে’র প্রকৃত নাম আর্নেস্তো গুয়েভারা ডি লা সেরনা। চে নামটি তার কিউবান কমরেডদের দেয়া। এবং এই নামটিই চে বেশী পছন্দ করতেন। আর্নেস্তো জন্মগ্রহন করেন আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের উত্তর পূর্বে রোসারিও নামক স্থানে। তার বাবা আর্নেস্তো গুয়েভারা লীনচ ও মা সেলিয়া ডি লা সেরনা। দুজনেই ছিলেন মুক্তমনা। তাদের বাড়িতে ছিল শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের আনাগোনা। আর ছিল প্রচুর বই। ফলে চে ছোটবেলা থেকেই একটা সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হয়ে উঠেন। মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হন এবং এই রোগ তাকে সারাজীবন ভুগিয়েছে। তবে খুব ছোট বেলাতেই এই রোগের সাথে যুঝতে গিয়ে তার মধ্যে প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি আর মানসিক দৃঢ়তা বিকাশ লাভ করে। তার বাবা মা তাকে খেলাধুলা ও পড়াশোনাতে উৎসাহ দিতেন ফলে শৈশবেই তিনি সাঁতার, ঘোড়দৌড়, রাগবি, টেবিল টেনিস, স্যুটিং, গলফ ও দাবা খেলায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। এই সময়ে চে বয়সের তুলনায় অনেক অগ্রসর বইপত্র পড়ে ফেলেন এবং সেই সাথে ফরাসি ভাষাটাও রপ্ত করে ফেলেন।
১৯৪৬ সালে আর্নেস্তো বুয়েন্স আয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা শাস্ত্রে ভর্তি হন। প্রথম দিকে এলার্জি গবেষণায় তার আগ্রহ দেখা যায় এবং পরবর্তীতে তিনি একজন প্রখ্যাত গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি এমন কিছু করতে চাইতেন যা মানবতার সেবায় নির্ধারক ভূমিকা রাখবে। তবে এসবই ছিল তখন ব্যক্তিগত অর্জনের ব্যাপার। চে’র ভাষায় - “সকলের মত আমিও ছিলাম পরিবেশের উৎপাদ”।
ছাত্রবস্থায় নিজের খরচ চালানোর জন্য তাকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। তিনি দক্ষিন আমেরিকায় ভ্রমনরত কার্গোশিপে নার্সের কাজ করেন। একটি এলার্জি ক্লিনিকে বেশ কবছর গবেষণা সহকারীর কাজও করেন। ১৯৫২ খৃষ্টাব্দে দক্ষিন আমেরিকায় ভ্রমনের সময় তিনি এবং তার বন্ধু আলবার্তো গ্রানাডো পেরুর কুষ্ঠ কলোনীতে কাজ করেন। স্নাতক পাশ করার পর আর্নেস্তো গুয়েতমালায় ভ্রমন করেন এবং সেখানে তিনি দুবছর গ্রাম্য ডাক্তার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এসময় তিনি লাতিন আমেরিকার বিপ্লবে ডাক্তাররা কি ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে একটি বই লিখেন। তিনি চিকিৎসাকে পেশা হিশেবে না নিলেও এই পেশার মাধ্যমেই জনগনের সাথে তার প্রথমিক যোগাযোগ গড়ে উঠে।
ডিসেম্বরের পরীক্ষার পর যখন অন্যান্য ছাত্ররা মার্চের পড়া ঝালিয়ে নিত তখন বইয়ের পাতায় বুদ হয়ে থাকার বদলে স্বপ্নে বিভোর চে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়তেন। অভিজ্ঞতা লাভের উদ্দেশ্যে ভ্রমন করতেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। ১৯৫০ সালে নিজের বাইসাইকেলে মোটর লাগিয়ে আর্নেস্তো বেরিয়ে পড়েন আর্জেন্টিনার ৩,০০০ মাইল ভ্রমনে। ১৯৫১ সালে তেইশ বছর বয়সী আর্নেস্তো ও তার বন্ধু উনত্রিশ বছর বয়সী আলবার্তো গ্রানাডো লাতিন আমেরিকা ভ্রমনে বের হন। প্রথমে তারা একটি নরটন ৫০০সিসি মোটর সাইকেল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন, যার নাম তারা দিয়েছিলেন ‘লা পদারসা’। পরে এই মোটর সাইকেলটি ভেঙে পড়লেও স্বাপ্নিক তরুন দুজন ভেঙ্গে না পড়ে অন্যান্য যানবাহনের সাহায্যে তাদের ভ্রমন চালিয়ে যান।
লাতিন আমেরিকার এই ভ্রমনের মাধ্যমে আর্নেস্তো শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ কষ্ট স্বচক্ষে দেখতে পান। এই সময় একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। চিলিতে ওদের সাথে এক দরিদ্র শ্রমিক দম্পত্তির দেখা হয় যারা কমিউনিস্ট হওয়ার কারনে পুলিশের নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। তাদের অবস্থা এতই করুন ছিল যে শীতের রাতে গায়ে দেয়ার জন্য একটিও কম্বল ছিল না। সেই রাতের ঘটনা আর্নেস্তোকে অসহায় মানুষগুলোর সাথে নৈকট্য অনুভবের সুযোগ করে দিয়েছিল। নিছক আনন্দের জন্য শুরু হয়েছিল যে ভ্রমন তা পরবর্তীতে শেষ হয় সমাজ পর্যবেক্ষনের এক গভীর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যা তাকে ঐক্যবদ্ধ আমেরিকার সাধারন লক্ষ্যের প্রতি বিশ্বাসী করে তুলেছিল।
চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ১৯৫৩ সালের জুলাই মাসে আর্নেস্তো তার দ্বিতীয় লাতিন আমেরিকা ভ্রমন শুরু করেন। এবার তার সঙ্গী হলেন কার্লোস ‘কালিকা’ ফেরার। তারা বলিভিয়া ও পেরু হয়ে ইকুয়েডর পৌছেন। সেখান থেকে কালিকা কারাকাসে চলে যান আলবার্তো গ্রানাডোর সাথে দেখা করতে। আর আর্নেস্তো নৌকায় করে পানামায় পৌছান এবং সেখান থেকে কোস্টারিকা ও হন্ডুরাস হয়ে গুয়েতমালায় যান।
গুয়েতমালায় পৌছার পর আর্নেস্তোর সাথে ছ’জন কিউবান গেরিলার দেখা হয় যারা ১৯৫৩ এর ২৬ জুলাই ‘সান্টিয়াগো ডি মানকাদা’ ব্যারাকের ব্যর্থ আক্রমনে অংশ নিয়েছিলেন। আর্নেস্তো তখন এই অভিযানের নায়ক ফিদেল ক্যাস্ত্রোর কথা শুনে অভিভূত হন। ফিদেল তখন পাইনস দ্বীপে বাতিস্তার জেলে বন্দী ছিলেন। গুয়েতমালাতেই হিলদা গাদিয়ার সাথে আর্নেস্তোর পরিচয় হয়। হিলদা ছিলেন পেরুর রাজনৈতিক কর্মী। তিনি ছিলেন বয়সে চে’র থেকে তিন বছরের বড় এবং রাজনৈতিক ভাবে অনেক অভিজ্ঞ। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে হিলদা ও চে বিয়ে করেন। হিলদাই চে’কে রুশ ধ্রুপদী সাহিত্য, জ্যাঁ পল সাত্রে ও চীনা বিপ্লবী মাও সে তুংয়ের লেখার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
গুয়েতমালায় তখন তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্ট জ্যাকোবো অরবেঞ্জ মার্কিন ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির জমি অধিগ্রহন করেন, তার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালে হন্ডুরাস থেকে সিআইএ এর সমর্থন পুষ্ট হানাদার বাহিনী গুয়েতমালায় আক্রমন করে। আক্রমন প্রতিরোধ আন্দোলনে চে অংশগ্রহন করেন। কিন্তু সেই প্রতিরোধ ব্যর্থ হয়। অরবেঞ্জ পদত্যাগ করেন ও পালিয়ে মেক্সিকো দুতাবাসে আশ্রয় নেন। গুয়েতমালার এসব ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে চে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করেন এবং আগ্রাসন বিরোধী সংগ্রামে আরো দৃঢ় প্রতৃজ্ঞ হয়ে উঠেন। অরবেঞ্চ সরকারের পতনের পর আরো অনেকের সাথে হিলদা গাদিয়ার জেল হয়। কিন্তু হিলদা খুব দ্রুত জেল থেকে বেরিয়ে মেক্সিকোতে চলে যান। চে’ও সেসময় আলাদাভাবে মেক্সিকোতে পৌছান এবং ১৯৫৪ সালের অক্টোবরে হিলদার সাথে মিলিত হন।
১৯৫৫ সালে মেক্সিকোতে রাউল ক্যাস্ত্রোর সাথে চে’র পরিচয় হয়। ফিদেলের ভাই রাউল মনকাদা ব্যারাকের আক্রমনে অংশ নিয়েছিলেন। ৮ জুলাই ফিদেল ক্যাস্ত্রো কিউবার জেল থেকে মুক্ত হয়ে মেক্সিকো আসেন। দু’দিন পর ফিদেল ও চে’র দেখা হয় এবং প্রথম সাক্ষাতেই তারা প্রায় দশ ঘন্টার বৈঠকে মিলিত হন। এই সাক্ষাতের পর ফিদেল চে’কে তার গেরিলা বাহিনীতে গ্রহন করেন এবং চে তার ভাগ্যকে কিউবানদের সাথে পাকাপাকি ভাবে গেঁথে ফেলেন।
কিউবায় হামলার উদ্দেশ্যে ১৯৫৬ সালের মার্চে ফিদেল ক্যাস্ত্রো তার গেরিলাদের প্রশিক্ষন দেয়া শুরু করেন। তাদের প্রশিক্ষন ক্যাম্পটি ছিল মেক্সিকো সিটির বাইরে এক পশু খামারে। কিন্তু মেক্সিকোর পুলিশ খবর পেয়ে হামলা চালিয়ে প্রশিক্ষনরত গেরিলাদের বন্দি করে এবং ‘মিগুয়েল সুলজ’ বন্দিশিবিরে তাদের আটকে রাখে। পরে ফিদেল ক্যাস্ত্রো এক সপ্তাহ পর মুক্তি পেলেও চে’ ৫৭ দিন পর মুক্তি পান। সেসময় চে’ মেক্সিকোতে একজন অবৈধ বিদেশী হিসেবে ছিলেন এবং তাকে বিচারের জন্য বিদেশী সরকারের হাতে অর্পনের সম্ভাবনা ছিল। চে চাইছিলেন যাতে তার জন্য বিপ্লবের কোনো ক্ষতি না হয়। তাই তিনি ফিদেলকে বলেন সে তাকে ফেলে যেতে পারে এবং তাকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন তিনি সেখান থেকেই লড়াইয়ে যোগদানের চেষ্টা করবেন। কিন্তু চে’র প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ফিদেলের দৃঢ় উত্তর ছিল “আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না”। এবং ফিদেল তাই করেছিলেন। মূল্যবান অর্থ এবং সময় ব্যয় করে তাকে জেল থেকে বের করে আনেন। এই ঘটনায় তার সহযোদ্ধার প্রতি ফিদেলের গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার প্রমান মেলে।
কিউবাতে আক্রমন করার জন্য ৬৩ ফুট লম্বা সাত কেবিনেটের একটি নৌকা কেনা হয়। নৌকাটির নাম ছিল ‘গ্রানমা’। ১৯৫৬ সালের ২৫ শে নভেম্বর গ্রানমায় চড়ে মেক্সিকো উপসাগরের টাক্সপান থেকে ৮২জন গেরিলা কিউবা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। বিপ্লবিদের হিসেব মতে পূর্ব কিউবার দক্ষিন পশ্চিম প্রান্তের লা কলোরাডায় পৌছতে তাদের পাঁচ দিন লাগার কথা, তাই সেনাদের দৃষ্টি এড়াতে ৩০ নভেম্বর এক গনআন্দোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারনে বিপ্লবীরা গন্তব্যে পৌছেন ২রা ডিসেম্বর। ফলে গেরিলাদের পূর্ব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। উপকূলে পৌছার সাথে সাথে গেরিলাদের উপর বিমান থেকে মেশিনগান দিয়ে আক্রমন করা হয়। পরে গেরিলারা সিয়েরা মায়েস্ত্রো পর্বতে গিয়েও মেশিনগানের আক্রমনে পরেন। চে গলায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ডিসেম্বরের শেষদিকে ৮২ জন গেরিলার মধ্যে শেষপর্যন্ত মাত্র ১৫ জন টিকে থাকে।
বিপ্লবী নেতা ক্যাস্ত্রো বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানোর জন্য সিয়েরা মায়েস্ত্রো পার্বত্য অঞ্চলকে বেছে নেন। ৬,০০০ ফুট উচু এই পার্বত্য অঞ্চলটির বিশাল সবুজ বনাঞ্চল ছিল গেরিলাদের গা ঢাকা দিয়ে থাকার পক্ষে সম্পূর্ন উপযুক্ত। তারপর এখান থেকেই শুরু হল গেরিলাদের কঠিন, সংগ্রামী ও কষ্টকর বন্য জীবন। ক্রমাগত হেটে জঙ্গলের মধ্যেদিয়ে পথ করে এগিয়ে যাওয়া, অপ্রতুল খাবার আর ওষুধের অভাব এই নিয়ে ছিল গেরিলাদের নিত্যদিনের সংগ্রাম।
সিয়েরা মায়েস্ত্রার অধিকাংশ কৃষক চরম দারিদ্র সীমার নিচে মানবেতর জীবন যাপন করত। চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ বিহীন এসব মানুষের জীবন ছিল আদিম ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। অপর পক্ষে বিদ্রোহী সেনারা ছিল শহুরে শিক্ষিত যুবক যাদের গ্রাম্য জীবন সম্পর্কে বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু দীর্ঘ সময় লাতিন আমেরিকায় ভ্রমনের অভিজ্ঞতার কারনে গ্রামীন জীবন ও মানুষের সঙ্গে চে’র পরিচয় ছিল। ফলে তিনি সহজেই সিয়েরা মায়েস্ত্রার দরিদ্র কৃষকদের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেন। তিনি গ্রামের লোকদের জন্য সাক্ষরতা অভিযান ও চিকিৎসা সেবা চালু করেন। ডাক্তার চে’র সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
কিউবান বিপ্লবে চে’ ডাক্তার হিসেবে যোগদান করেন। গেরিলা ডাক্তারের ভূমিকা সম্পর্কে চে’ বলেন - “ডাক্তার (গেরিলা) পূর্নমাত্রায় একজন ধর্মযাজকের ভূমিকায় অবতীর্ন হন, যিনি তার সামান্য ঔষধপত্রের ব্যাগে মানুষের জন্য সান্তনা বয়ে বেড়ান। একজন রোগাক্রান্ত মানুষের কাছে একটি অ্যাসপিরিনের মূল্য কত তা হিসেব করে বলা যাবে না। বিশেষত সেটি যখন এমন বন্ধুত্বপূর্ন হাতে দেয়া হয় যিনি তাদের দুর্ভোগকে অনুভব করেন ও নিজের করে নেন”।
দেড় বছর ধরে সংগ্রামের পর ১৯৫৮ সালের ২১ শে জুন বিদ্রোহীরা এল জিগুতে এক বিশাল বিজয় অর্জন করেন। ২১ শে আগষ্ট ফিদেল চে’কে তার ৮ নং সেনাদল নিয়ে লাস ভিলাসের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। চে’র দলে সদস্য ছিল ১৪২ জন। কামিলো নেতৃত্ব দেন ২ নং সেনাদলকে। তিনি পশ্চিমের পিনাল দেল প্রদেশের দিকে ৮২ জন যোদ্ধা নিয়ে রওনা হন। চারদিনের মধ্যে গন্তব্যে পৌছার পরিকল্পনা থাকলেও ভ্রমনের জন্য নির্ধারিত ট্রাক গুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ঘোড়ায় চড়ে ,তিনটি মাত্র লন্ঠনের সাহায্যে পায়ে হেটে গন্তব্যে পৌছতে চে’র সেনাদলের ৪৭ দিন সময় লাগে। ১৬ অক্টোবর চে এস্কেমব্রে পর্বতে পৌছান। পরিকল্পনা ছিল সান্তাক্লারা দখলের মাধ্যমে দেশটিকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলা।
চে ১৮ ডিসেম্বর ফোমেন্টোতে এবং ২৩ ডিসেম্বর প্লাসাটাসে গুরুত্বপূর্ন দুটি যুদ্ধ জয় করেন। চারদিন পর চে সান্তাক্লারায় পৌছান। ২৯ ডিসেম্বর চে বাহিনী হাভানা থেকে আগত সেনা ও অস্ত্র বোঝাই একটি রেলগাড়ি লাইন চ্যুত করে বিস্ফোরিত করে। ১ লা জানুয়ারি সান্তাক্লারা পদানত হয় এবং এর দুদিন পর চে হাভানায় উপস্থিত হন। হাভানা গেরিলাদের দখলে চলে যায়। সফল হয় কিউবান বিপ্লব। কিন্তু প্রকৃত বিপ্লব তখনো শেষ হয়নি। গেরিলাদের কর্তৃক হাভানা দখল ছিল মূলত বিপ্লবের শুরু। বিপ্লবীদের কাছে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ ছিল নতুন সরকার গঠন করা ও দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পরাজিত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জনগনের মনে যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক আকাঙ্খা গড়ে উঠেছিল তা মেটানোর দায়িত্বও ছিল বিপ্লবীদের উপর।
১৯৫৯ এর জুনে চে’কে বিদেশ সফরে পাঠানো হয়। তিন মাসে তিনি ১২ টি দেশ সফর করে দেশে ফিরে ‘জাতীয় কৃষি সংস্কার ইনস্টিটিউটের’ অধীনে শিল্পায়নের দায়িত্ব গ্রহন করেন। নভেম্বরে চে সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হন। পরের মাসেই তিনি কৃষি সংস্কার আইন পাস করেন, এর ফলে ৪০০ হেক্টরের অধিক কৃষিখামার গুলো দখলিচ্যুত হয়। ফলশ্রুতিতে ইউনাইটেড ফ্রুটের মত মার্কিন একচেটিয়া কোম্পানিগুলোর সম্পদ জাতীয়করন হয়ে যায়। ঠিক একই সময় কিউবার চিনির বিনিময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্থঋন ও ভারী শিল্প তৈরীর প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসে। ফলে চে’কে মন্ত্রী করে শিল্পমন্ত্রনালয় স্থাপন করা হয়। এসব কারনে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিউবার তিক্ততা বাড়তে থাকে যা অর্ধশতব্দী পর আজও বিদ্যমান।
বিপ্লব পরবর্তী এই সময়টিতে বিপ্লবকে সুসংহত করতে চে তার মন প্রান ঢেলে কাজ করেছেন । তিনি দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা কাজ করতেন। শুধু রবিবার বিকেলটা ছিল সন্তান ও পরিবারের জন্য। চে সবসময় দৃষ্টান্ত স্থাপনে বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব শেষে স্বেচ্ছা শ্রম হিসেবে আখ খামারে কাজ করতেন। তিনি জানতেন জনগনের কাছাকাছি পৌছুতে হলে নিজেকে তাদের একজন ভাবতে হবে, জানতে হবে তারা কি চায়, তাদের কি প্রয়োজন।
কিউবার মহান বিপ্লবকে চে লতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে বিশেষ করে তার মাতৃভূমি আর্জেন্টিনাতে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ ছিল সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটানো এবং এর জন্য তিনি পৃথিবীর যেকোন স্থানে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
১৯৬১ খৃষ্টাব্দে চে লাতিন আমেরিকায় বিপ্লব পরিচালনার জন্য গেরিলা যোদ্ধাদল সংঘটিত করতে শুরু করেন। সে সময় মুক্তিকামী লাতিন আমেরিকানরা দলে দলে হাভানায় আসতে শুরু করে। কিউবান সবকারও চে’র আগ্রহে আলজেরিয়া, নিকারাগুয়া, পেরু, গুয়েতমালা, ভেনিজুয়েলা ও আর্জেন্টিনার আন্দোলনে সহযোগিতা করতে থাকে। চে তখন চাইছিলেন লতিন আমেরিকা অভিযানে যেতে। কিন্তু সেখানে তখন গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য অনুকুল পরিবেশ ও পরিস্থিতি ছিল না। অপরপক্ষে কঙ্গোর মাটি ছিল গেরিলা যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ন প্রস্তুত। তাই ফিদেলের অনুরোধে চে কঙ্গো যেতে রাজি হলেন।
পরিকল্পনা ছিল চে কঙ্গো থাকাকালীন পিনেইরোর লোকেরা লাতিন আমেরিকাতে গেরিলা যুদ্ধের জন্য পরিবেশ তৈরী করে রাখবে। অপরদিকে চে’র গেরিলা যোদ্ধারা সেইসময় কঙ্গোতে সংঘর্ষের সময় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করবে এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধের জন্য নিজেদের দূর্বলতা গুলো দূর করার সুযোগ পাবে। সেই সাথে লতিন আমেরিকার যুদ্ধের জন্য কারা উপযুক্ত চে তাদেরও বাছাই করতে পারবেন।
১৯৬৫ সালের ১লা এপ্রিল চে তার কঙ্গো অভিযানের জন্য ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েন। আর ফিদেলের জন্য রেখে যান তার সেই ঐতিহাসিক চিঠি। আবেক ভারাক্রান্ত সেই চিঠিতে চে লিখেছেন “আমি পার্টি নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করছি, আমার মন্ত্রীর পদ, কমান্ডারের পদবি এবং কিউবার নাগরিকত্ব ত্যাগ করছি। কিউবার সঙ্গে আমার কোন আইনি সম্পর্কই থাকলো না, টিকে রইলো শুধু সেই বন্ধন যা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করা যায় না।” চে আরো লিখলেন “অন্যকোন ভূমি, অন্যকোন দেশ আমাকে আহবান করছে যথাসাধ্য কাজের জন্য। সে আহবানে আমি সাড়াদিতে পারি, কিউবার অগ্রনায়কের দায়িত্ব পালনের কারণে তুমি তা পার না। তাই আমাদের বিচ্ছেদের সময় ঘনিয়ে এসেছে”। কিউবা ছেড়ে যাওয়ার সময় চে তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেননি এবং এর জন্য তার কোন দুঃখও ছিল না কারন তিনি জানতেন ওদের খাওয়াপরা ও শিক্ষার ভার রাষ্ট্রই নেবে।
১৯৬৫ সালের ১৯ শে এপ্রিল চে মস্কো, কায়রো ইত্যাদি শহর ঘুরে এসে নামেন দার-এস-সালামে। অবশ্য তখন তাকে চে হিসেবে চেনার কোনো উপায় নেই। মসৃনভাবে দাড়ি কামানো, চোখে সুদৃশ্য চশমা পড়া র্যামন বেনিৎজ্ নামে চে কঙ্গোতে প্রবেশ করেন। তবে চে কঙ্গোতে ছিলেন মাত্র ছ’মাস। কঙ্গোর স্থানীয় কমিউনিস্ট পর্টি সহযোগিতা না করায় এবং স্থানীয় ভাষা ও মানুষের চরিত্র বুঝে উঠতে না পারায় চে’র কঙ্গো অভিযান পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। তিনি অভিযানের ব্যর্থতা স্বীকার করে গেরিলা বহিনীকে দেশে ফেরত পাঠান। আর প্রাগ হয়ে হাভানায় ফিরে আসার পথে ডায়রিতে লিখেন, “যে জতির স্বাধীনতা সংগ্রামে মনোবৃত্তি নেই আমরা তাদের মুক্ত করতে পারি না।”
চে সত্যিকার মার্ক্সবাদীদের মত আত্মবিশ্লেষন করতেন। নিজের ভুলগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিশ্লেষন করে লিখে রাখতেন। কঙ্গোর ব্যর্থতার কারন বিশ্লেষন করে তিনি বই লিখেছেন যার নাম তিনি দিয়েছেন ‘পর্সাজাস ডি লা গুয়েরা রেভ্যুলুসানিয়া কঙ্গো’, প্রথম পাতায় লিখেছেন ‘ব্যর্থতার ইতিহাস’।
চে’র পরবর্তী গন্তব্য ছিল বলিভিয়া। বলিভিয়ার উদ্দ্যেশে কিউবা ছেড়ে যাওয়ার আগে চে’ তার স্ত্রী আলাইদা ও তার সন্তানদের সাথে দেখা করার জন্য আসেন। পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে চে তার সন্তানদের কাছে নিজেকে তাদের পিতার বন্ধু র্যামন বলে পরিচয় দেয়।
সিআইএ’র চোখে ধুলো দেয়ার জন্য চে মস্কো, প্রাগ, প্যারিস, মাদ্রিদ, সাও পাওলো হয়ে ১৯৬৬ সালের ৩ রা নভেম্বর বলিভিয়ার রাজধানী লাপাজে এসে পৌছেন। বলিভিয়া ছিল লাতিন আমেরিকার কেন্দ্রে, তাছাড়া তখন পর্যন্ত গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বলিভিয়ার মাটিই ছিল সবচেয়ে উপযুক্ত, তাই বিপ্লব পরিচালনার জন্য বলিভিয়াকে বেছে নেয়া হয়। ফিদেল ক্যাস্ত্রোর নির্দেশে আগে থেকেই বলিভিয়ার দক্ষিন পূর্ব অঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার হেক্টরের বনভূমিতে একটি পশুখামার গড়ে তোলা হয় যার আড়ালে চে তার লাতিন আমেরিকার গেরিলাদের প্রশিক্ষন দেবেন বলে ঠিক হয়। বন জঙ্গলের আড়ালে গেরিলাদের বেস ক্যাম্পটি ছিল খুব সাদামাটা। সেখানে ছিল কাদামাটির তৈরী উনুন, হাতে তৈরী কাঠের টেবিল ও বেঞ্চ। মাটি খুড়ে তৈরী করা হয়েছিল পায়খানা। অস্ত্রশস্ত্র, ওষুধ ও নথিপত্র রাখা হতো হাতে তৈরী সুরঙ্গে। চে তার এই বিবর্ন ক্যাম্পে বসেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন বলিভিয়ার বিপ্লব দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়বে লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে। বিপ্লবের সেই আগুনে পুড়ে ছাড়খার হবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। বলিভিয়া হবে আরেকটি ভিয়েতনাম।
তবে চে’র এই স্বপ্ন সত্যি হয়নি। দুঃখজনক ভাবে বলিভিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি চে’র গেরিলা যুদ্ধের কৌশলকে সমর্থন করেনি। বিশেষ করে পার্টির সেক্রেটারী মোঞ্জের বিশ্বাসঘাতকতা, বলিভিয়া সেনবাহিনীর আতর্কিত আক্রমন, স্থানীয় কৃষকদের অসহযোগিতা, রসদ ও ওষুধপত্রের অপ্রতুলতা ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে চে’র বলিভিয়ার বিপ্লব ব্যর্থ হয়।
দীর্ঘ ১১ মাস সংগ্রামের পর ১৯৬৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে চে’র গেরিলারা অসুস্থ হয়ে পরলো। চে নিজেও তখন অনেক অসুস্থ। ওষুধ আর খাবারের অভাবে গেরিলাদের অবস্থা মৃতপ্রায়। এমন অবস্থায় ৭ ই অক্টোবর গেরিলা দল লা হিগুয়েরার কাছেই এক গিরিখাতে অবস্থান নেয়। দলে তখন মাত্র ১৭ জন গেরিলা। ৮ ই অক্টোবর গেরিলারা সেনাবাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়লে যুদ্ধ করে সেনাদের কেটে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। যুদ্ধ শুরু হলে কিছুক্ষনের মধ্যে চে’র কার্বাইনের ব্যারেলে গুলি লাগলে কার্বাইনটি অকেজো হয়ে পরে। দ্বিতীয় গুলিটি লাগে চে’র বা পায়ে। চে’র পিস্তলের ম্যাগজিনের গুলিও তখন শেষ। সম্পূর্ন নিরস্ত্র ও অসহায় অবস্থায় চে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। কিন্তু অল্প সময় পরেই আহত অবস্থায় চে ও তার সঙ্গী উইলি ধরা পড়েন। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় লা হিগুয়েরাতে। ৮ ই অক্টোবর বলিভিয়া সেনাবহিনীর কর্নেল সেলিচ ও ৯ ই অক্টোবর সিআইএ এজেন্ট, এক দেশত্যাগী কিউবান ফেলিক্স রড্রিগ চে’কে জেরা করে। তাদের পরবর্তী স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চে তাদের সম্পূর্ন উপেক্ষা করেছিলেন এবং লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে বিপ্লব সফল হবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন।
বলিভিয়ান হাই কমান্ড থেকে চে’কে হত্যার নির্দেশ আসে। মেজর মিগুয়েল আইয়ো ও কর্নেল সেলিচ চে’কে হত্যা করার জন্য নন কমিশন্ড অফিসার মারিও টেরানকে আদেশ দেয়। মদ্যপ টেরান চে’র কোমরের নিচে তাক করে গুলি করে। গুলি করার পর চে’ আরো ঘন্টাখানেক বেঁচে ছিলেন। চে’কে যন্ত্রণা দেয়ার জন্যই ওর মাথায় বা বুকে গুলি না করে কোমরে গুলি করা হয়েছিল। এভাবে পরিকল্পিত ভাবে চে’র মৃত্যু যন্ত্রনাকে র্দীঘায়িত করা হয়। পরে এক মদ্যপ সার্জেন্ট পিস্তল দিয়ে বুকের বাঁদিকে গুলি করে এই মহান বিপ্লবীকে হত্যা করে। মৃত চে’র দৃষ্টান্তমূলক শক্তির ভয়ে সামরিক কর্মকর্তারা চে ও অন্য গেরিলাদের গোপনে গনকবর দেয়। কবর দেয়ার পূর্বে চে’র দেহ থেকে ওর হাত বিচ্ছিন্ন করে রাসায়নিকের বোতলে ডুবিয়ে রাখে। চে’র মৃতদেহকে বিকৃত করে শত্রুরা বর্বরতার শেষ সীমাও লঙ্ঘন করে ফেলে। আসলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চরিত্রটাই এমন। ওরা পৃথিবী জুড়ে মানবাধিকার ও শান্তির বার্তা প্রচার করে আর খনিজ তেল ও অস্ত্র বিক্রির স্বার্থে দেশে দেশে যুদ্ধ ও গনহত্যা চালিয়ে যায়।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চেয়েছিল চে’কে হত্যা করে চে’র আদর্শকে এই পৃথিবী থেকে মুছে দিতে। কিন্তু চে’কে দৈহিক ভাবে হত্যা করা সম্ভব হলেও তার আদর্শকে ধ্বংস করতে পারেনি লুটেরা শক্তি। আজো পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী ও মুক্তিকামী মানুষ চে’র আদর্শকে ধারন করে। চে’র দ্বারা অনুপ্রানিত হয় শোষিত মানুষ, জন্ম হয় হুগো শ্যাভেজ বা ইভো মোরালেসদের মত নেতাদের। চে’র আদর্শ দ্বারা অনুপ্রানিত হয়েই একদিন পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হবে শোষনহীন মানবিক সমাজ। চে বেঁচে থাকবেন গনমানুষের হৃদয়ে।
“...............................
তিনি মৃত তবু জীবিতের চেয়ে
অনেক সজীব এবং কান্তিমান
ভবিষ্যতের জন্য হেলায়
দিয়েছেন ছুড়ে আপন বর্তমান।
বুলেট বিদ্ধ মোহন গেরিলা
প্রসারিত আজ নিখিল ভূমন্ডলে।
লেখার টেবিলে, কপাটে, দেয়ালে
চে গুয়েভারার সুবিশাল চোখ জ্বলে।” (চে গুয়েভারার চোখ, শামসুর রাহমান)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৫৯