somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুষার বনের নেকড়ে'র ডায়েরি-১

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোথায় তুমি?

ছাদে।

এতো রাতে ছাদে কেন? আজ তো আকাশে চাঁদ নেই। অমাবশ্যা চলছে। চারদিকে অন্ধকার।

তাতে কি হয়ছে। আলোকে ভালোবাসা গেলে অন্ধকার কে কেন যাবে না?

এখানে ভালোবাসার কথা আসছে কেন? অনেক রাত, বাড়ির সবাই নিশ্চয় ঘুমিয়ে।এইজন্য বলছিলাম।

সমস্যা নেই। আমি কালো। অন্ধকারে আমি মিশে যেতে পারি। আপনি ফর্সা তো, এইজন্য আধার ভালোবাসেন না।

এইভাবে কথা বলছ কেন? তুমি এভাবে বললে আমাকে খুব দূরের মানুষ মনে হয়।

সবসময়-ই তো দূরে ছিলেন। কাছে আসতে পারেননি কখনো। এখনো তো দূরেই আছেন। অনেক দূরে।

এসব কি বলছ, কাছে ছিলাম না মানে। এতগুলো বছর একসাথে ছিলাম আমরা। তারপরেও বলছ দূরে। কেন? তোমার কেন এমন মনে হচ্ছে?

হুম কাছেই ছিলেন। তবে একই বাড়িতে, একই ঘরে, একই বিছানায়। বিয়ে করেছিলেন পরিবারের চাপে পড়ে। দূরত্ব ছিল সবসময়ই। বেড়াতে যেতে নিতেন না। কারন আমি আপনার বন্ধসমাজে মানিয়ে চলার অযোগ্য। আমি কালো, অশিক্ষিত আর মোটামুটিভাবেও সামাজিক না।

তোমার কথা ঠিক আছে। কিন্তু কেন তোমাকে সাথে করে নেই নাই? তার বড় কারন তুমি জানো না। ওখানে নেওয়ার পরে আমার বন্ধুরা তোমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করুক সেটা আমি চাইনি। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার কিসে কষ্ট হবে সেটা আমি বুঝি।

আমাকে ভালোবাসেন। এটা শুনে খু্ব হাসি পেল। যাহোক রাতে খেয়েছেন?

হ্যা খেয়েছি। অনেক রাত হয়েছে। ঘরে গিয়ে ঘুমাও।

আচ্ছা ঠিক আছে। আপনিও ঘুমান। আমার এখান থেকে বেশি রাত এখন আপনার ওখানে।

হ্য। ঠিক আছে সকালে কথা বলব। নিজের যত্ন নিও। আল্রাহ হাফেজ।

আল্লাহ হাফেজ।

লাইন কেটে দেওয়ার পরে ছাদে-ই দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। নিরব, নিঃস্তব্ধ রাত। ঘন আধারে নিজের হাতের তালুও দেখা যায় না। অন্ধকারকে আমার ভালো লাগে সেদিন থেকে যেদিন থেকে আমি এ বাড়িতে পা রেখেছি। কারণ আমি কালো। পড়াশোনা না জানা এক আধারে ঘেরা মানুষ। আর আমার স্বামী একজন শিক্ষিত, আধুনিক রূচিশীল মানুষ। দু’জনের মধ্যে অনেক ব্যবধান। সব-ই ঘুচে যেত যখন সে ঘরে থাকতো। যেন তার মত একজন প্রেমিক পুরুষ দুনিয়াতে আর একটিও নেই। আমার পড়াশোনা নিয়ে তার মধ্যে একটু এলার্জি থাকলেও, গায়ের রং নিয়ে সে কখনো কথা বলেনি। আমি কখনো এ প্রসঙ্গে কিছু বললে সে বলতো, তুমিতো পোড়ামাটি। পুরোদমে বাঙালী মেয়ে। আমেরিকান তো না।

আমাদের ভালোবাসা, ভালো লাগার মূহুর্তগুলো একবছরের মত স্বপ্নের আবেশে পরিপূর্ণ ছিল। একবছর পর থেকে ওর মাঝে পরিবর্তন শুরু হয়। চাকরি, পড়াশোনা আর পরিবার। এই তিনটা জিনিস ওকে তিনদিক থেকে টানা শুরু করে। আমি বুঝি। কিন্তু কিছু বলতে পারি না। বাতলে দিতে পারি না কোন পথ। জীবনে একটা পর্যায়ে পারিবারিক টানাপোড়েন এর কারণে ও পড়াশোনাটা শেষ করতে পারেনি। কিন্তু শেষ করার একটা তীব্র আকাঙখা আছে ওর মধ্যে। কিন্তু সেটা করতে গেলে ওর চাকরি ছাড়তে হবে। আর চাকরি ছাড়লে পরিবার অভুক্ত থাকবে।

ওর এই ত্রি-সংকটের মাঝে আমি আরেক নতুন সংকট। ভাত-কাপড় ও যতদূর পারছিল ততদূরই দেয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু হটাৎ করে ওর মাঝ থেকে এক বছর আগেকার মানুষটাকে যে হারিয়ে ফেলেছি, তাকেই তো খুঁজে পাচ্ছিনা।

রাত জেগে ইন্টারনেটে পড়ে থাকে। সারাদিন অফিস। সন্ধ্যায় টিউশনি। উইকেন্ড এ ক্লাশ করে। বিকালে বন্ধুদের সাথে আড্ডা। আমার জন্য ওর কোন সময় নেই। সারাদিন ঘরে টিভি দেখে আর রান্না বান্না করেই দিন পার।

হটাৎ একদিন বলল চাকরি ছেড়ে বিদেশ চলে যাবে। পড়াশোনা করতে। এরপরে অনেকদিন চলে গেল। ও দেখি চুপচাপ । ভাবলাম। বিদেশ যাওয়ার ভুৎ মনে হয় নেমেছে। আবার ভাবতাম, ওতো হুজুগে না। আজগুবি কথা বলে না। কারণ চাকুরি হওয়ার দুই-দিন পরে সবাইকে জানিয়েছিল ওর চাকরি পাবার খবরটা। আমি জানতে চাইলে বলেছিল, পুরোপুরি কনফার্ম না হয়ে বললে, পরে কোন সমস্যা হলে সবাই আমাকে অন্য চোখে দেখবে।

একদিন রাতে ঘুমিয়ে ছিল। রাত বারোটারও পরে কা্র ফোন পেয়ে উঠে ল্যাপটপ চালু করলো। কিছুক্ষণ পরে বলল আমার বিদেশ যাওয়া কনফার্ম।

দেড় মাসের মাথায় চলে গেল। এয়ারপোর্টে বিদায় জানাতে গিয়ে দেখেছিলাম ওর চোখের কোথাও আমি নেই। আমিও নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম নিজের মধ্যে।এয়ারপোর্টে অনেক কে কান্নাকাটি করতে দেখলাম। আমার হাসি পাচ্ছিল দেখে। হায়রে প্রেম।

আশেপাশের অনেককে দেখেছি আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটলে চরিত্র বদলে যায়। পুরুষের ক্যারিয়ার আর নারীর ফিগার। এই দুইটা জিনিস একে অন্যের পরিপুরক। আমার স্বামী বিদেশ যাচ্ছে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে। হয়তো কোন ভালো ফিগার এর মেয়ের জন্য এমন ক্যারিয়ার ওয়ালা ছেলের দরকার। আমার জন্য তাকেই দরকার যে আমাকে ভালোবাসবে।কাছে থাকবে। হয়তো সে কোন দিনমজুর।

ও চলে যাওয়ার পরে আমার জীবনটা আরো বেশি একাকী হয়ে গেছে। গায়ের রং আরেকটু কালো হয়েছে। মনটাও। নিস্তরঙ্গ আর শীতল জীবন যাপন।

দিনে সে কমপক্ষে ৫ বার ফোন দেয়। স্কাইপে কথা বলে। অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে সে আমাকে ভালোবাসে। অনেক। আমি জানি তার মধ্যে চাতুর্য আছে, কিন্তু অসততা নেই।দুষ্টুমি আছে, কিন্তু নোংরামী নেই। কিন্তু সেটা পাল্টাতে কতক্ষণ?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×