ফ্রিল্যান্সিং কথাটার সাথে সর্বপ্রথম পরিচিত হয়েছিলাম ২০০৯ সালে। তখন ও পর্যন্ত টাইপ এর জন্য যতগুলো কী আছে তার সবগুলোর সাথে আঙ্গুলের মিলন হয়নি। তবে কম্পিউটার শেখার প্রতি ছিল মারাত্নক আগ্রহ। নিজের কোন পিসি ছিল না। অফিস এর কম্পিউটার একটু ফ্রি হলেই বসে পড়তাম। প্রথমে টাইপিং এর পর নেট ব্রাউজিং । বছর খানেক গেল এভাবে। পত্রিকায় বা বন্ধুদের মুখে ফ্রিল্যান্সিং এর ব্যপারে বিভিন্ন কথা শুনলেও কি কাজ করতে হয়, কিভাবে করতে হয়, টাকা অদৌ পাওয়া যায় কি না এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর পাইনি। তাই আগ্রহটাও ওভাবে বেড়ে ওঠেনি।
জোবায়েদ হোসেন আমার সাবেক অফিস কলিগ, বড় ভাই, বন্ধু, মেন্টর । চাকরির পর থেকে উনার কাছ থেকে যে পরিমাণ সাহাজ্য পেয়েছি তা বলে শেষ করা যাবেনা। কাজটা কম্পিউটার রিলাটেড হওয়াতে উনি কম্পিউটারে বেশ দক্ষ ছিলেন।
আমাদের অফিস থেকে চাকরি ছেড়ে যাওয়ার পরও তার সাথে যোগাযোগ ছিল। এখনো আছে। ২০১১ সালের এপ্রিল কি মে মাসে তিনি আমাকে ফোন করে বললেন ওডেস্ক এর কথা। বললেন, উনার নতুন অফিসের এক কলিগ মাসে ৫০ হাজার এর বেশি আয় করেন। শুনে বিশ্বাস হইনি । উনি বললেন, তোর বিশ্বাস হোক আর না-ই হোক একটা একাউন্ট ওপেন কর। প্রোফাইলটা কমপ্লিট কর। পরীক্ষা দে।
আমি সেদিনই একাউন্ট খুললাম। কয়েকটা পরীক্ষা দিলাম। ইংরেজি বানান, বেসিক ইাংলিশ এসবের উপরে। ও পরীক্ষাগুলো বেশ সহজ। কয়েকদিন ঘাটাঘাটির পর অনেক কিছু বুঝতে না পেরে বাদ দিলাম।
২০১২ সালে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে লেখা দেখে আবার ও আগ্রহ জমলো। প্রথম আলো পত্রিকায় আমিনুর রহমান নামে একজন ওডেস্ক নিয়ে নিয়মিক লিখছিলেন। উনার লেখা পড়ে সে অনুযায়ী প্রোফাইল কম্পিলিট করলাম। ব্যাংক স্টেটমেন্টট এর কপি ও ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর স্ক্যান কপি পাঠালাম। মানিবুকার্স এ একাউন্ট করলাম।
এরপর শুরু করলাম বিড। প্রথমে এসইও, ক্রিয়েটিভ রাইটংএর জবগুলোতে বিড করলাম। প্রতিদিন পাঁচ সাতটা। কিন্তু এক মাসেও কোন রিপ্লাই না পেয়ে হতাশ হয়ে চুপ মেরে গেলাম।
২০১২ এর মার্চ মাসে একদিন মেইল চেক করতে গিয়ে দেখি ওডেস্ক একটা নোটিফিকেশন পাঠিয়েছে। যাতে লেখা ছিল, ইউ হ্যাভ এ্যন ইনভাইটেশন ফর প্রেস রিলিজ রাইটিং। সাথে ক্লায়েন্ট এর একটা বিশাল মেসেজ। পুরোপুরি উৎসুক হয়ে পুরো মেসেজটা পড়লাম। ক্লায়েন্ট আমাকে প্রতিটি ৩৫০ শব্দের প্রেস রিলিজ এর জন্য ২ ডলার পে করবে। আমি রাজি কি না। থাকলে প্রতিদিন কয়টি লিখতে পারব। এক সপ্তাহের ট্রেনিং করতে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি.................
আমি রাজি হয়ে গেলাম। এই ক্লায়েন্ট এর হাত ধরেই পরিচিত হলাম পিআরওয়েব, ড্রপবক্স আর অনলাইন পাবলিক রিলেশন এর সাথে।
শেষ পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ ডলার এর কাজ করে ওনার সাথে আমার কন্ট্রাক্ট এর ইতি হল। কারণ, আমার ইংলিশ নেটিভদের মত নয়। ওটা হওয়ারও কথা নয়। বাপ-মা বাংলাদেশি হওয়াতেই আমিও বাংলাদেশি। এখনও বাংলাতে দশটা শব্দ লিখলে তার পাঁচাটতেই ভুল থাকে। আর ইংরেজির উপর ১২ বছরের ইংলিশ ফর টুডে'র পিএইচডি ছাড়া আমার অন্য কোন জ্ঞান নেই।
২২ ডলার জমা হওয়া পরে আমার এই ভার্চুয়াল আয়ের সত্যতা প্রমাণ করতে তা উঠানোর জন্য রিকোয়েস্ট করলাম। ওডেস্ক পাঠালো মানিবুকার্স এ । কেটে নিল ১ ডলার। মানিবুকার্স পাঠালো ব্যাংকে । সে কেটে নিল ২.৩ ডলার। ব্যাংক এ গেলাম। সব খুলে বললে আমাকে একটা সি ফরম দিলেন। ফিল আপ করার সময় ১৮ ডলার লিখতে খুব লজ্জা লাগছিল।
যাহোক তিন দিন পরে ব্যাংকের ব্যালান্স চেক করলাম। ১৪শ টাকার কিছু বেশি এসেছে। আমার বিশ্বাস দৃঢ় হলো। ব্যালান্স চেক করার পরই মা'র ফোন। তোর আব্বার খুব জ্বর। তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
ব্যাংক থেকে ১ হাজার টাকা তুলে নিয়ে বাসায় এসে দেখি আব্বা জ্বরে কাতরাচ্ছেন। উনি জ্বর হলে একদম ভেঙে পড়েন। যাহোক টাকাটা আব্বার পেছনে ব্যয় করলাম। মনে মনে কত যে খুশি হয়েছিলাম তা বলে বোঝাতে পারবো না।
আরো অনেক কথা বলার আছে। এখন দু'চোখ ভরা ঘুম। সময় নিয়ে আবারো লিখবো। কিভাবে সামান্য যোগ্যতা নিয়ে ওডেস্ক এ কিছু মানুষ মাসে কাড়ি কাড়ি আয় করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৫০