বিশ্বাস কর, আমার কোন যন্ত্রণা হয়নি
কেউ কেউ কষ্ট বলতে পার, বলতে পার ব্যথা, কাতর অনুভূতি-দহন।
কিন্তু আমি বলছি, কিছুই হয়নি আমার।
অবশ্য আমার চেতনা ছিল, বলতে পার পূর্ণ সজাগ ছিলাম আমি।
আমি সবকিছু ঠিক-ঠাক দেখে গেছি, সময় যে রকম হয় প্রবাহমান।
প্রথমে ওরা আমার আঙ্গুল কাটল, গোলাপের ডাল যেভাবে-
কেটে আলাদা করা হয় গাছ থেকে।
আমি ঝিম মেরে শুধুই দেখছিলাম লাফাতে থাকা কাটা আঙ্গুলগুলো,
যেন একঝাক শুঁয়োপোকা লাফিয়ে খেলা করছে টেবিলের উপর।
ফিনকি দিয়ে বয়ে চলা রক্তের শিরায় অথবা
বলতে পার আহত সে স্থানে যখন তপ্ত লোহার পরশ বুলানো হল,
পোড়া মাংসের গন্ধ সুড়সুড়ি দিতে পারেনি ইন্দ্রিয়ে।
আমার নির্লিপ্ততা ওদের খেপিয়ে তুলল,
কেউ একজন এসে ছুরি চালাল আমার পেটে।
আমি শুধু দেখেছি আমার রুগ্ন নাড়িভুঁড়িকে,
যেন ফারাক্কার বাঁধে শুকিয়ে যাওয়া বহমান কোন নদী।
আমাকে হাত-পা বেঁধে ফেলা দেয়া হল বাথটাবে, কতক্ষণ ছিলাম জানিনা-
তারপর টেনে হিঁচড়ে বসানো হল একটি চেয়ারে, ইলেকট্রিক চেয়ার।
আমার শরীরের প্রতিটি অনু কণায় যন্ত্রণা দিতে চাইল উচ্চ বিদ্যুৎ প্রবাহ-
কিন্তু বিশ্বাস কর কোন যন্ত্রণ হয়নি আমার, হয়নি কোন কষ্টকর অনুভূতি।
আমার অপেক্ষা ছিল শুধুমাত্র মৃত্যুর, অনুভূতিহীন একটি মৃত্যুর।
আমি জানি ওরা সবাই খেলছে আমার সাথে;
আমার মৃত্যুর সাথে সাথেই শেষ হবে ওদের খেলা।
ওরা তাই খেলে চলল, একের পর এক খেলা-
আমার দেহটিকে নিয়ে, ঠিক মধ্যযুগীয় বর্বরতায়।
আমার জীর্ণ দেহে প্রাণশক্তিও অফুরন্ত-
চলুক খেলা।
আমি হাজার মাইল পথ হেঁটেছি- বিধাতার পথে- সরল পথ।
কত মানব-মহামানব রক্তাক্ত হয়েছে তবুও পিছপা হয়নি- সরল পথ।
আমার কিভাবে যন্ত্রণ হবে বল? কিভাবে আমাকে দিবে কষ্ট।
কিন্তু কেউ একজন যখন আমার সে সৃষ্টিকর্তাকে তুলে গালি দিল,
ঠিক তখনই মৃত্যু হল আমার।