প্রিয় কৃষ্ণচূড়া
একটুকরো জমি আমার, সে জমিতে আজ আধিপত্য দিলাম তোমার।
যখন তুমি বেড়ে উঠবে, আর সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে আকাশ সীমানায়
তখন তুমি মনে রেখ আমার কথা,
যে তোমাকে একদিন অনেক যত্ন করে লাগিয়েছিল-
আপন দু হাতে তুলে দিয়েছিল বাঁশের বেড়া।
আমারও একটি গোপন ইচ্ছা আছে যেন,
আমিও আমার পরিবারকে বলে যাব-
আমার শেষ ঠিকানা যেন এই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই হয়।
অচেনা মানুষের ভিড়েও অচেনা হতে পারিনি কোন দিন-
শেষ ঠিকানা তাই অচেনা জায়গায় হবে কেন বল।
আমার সন্তানদেরকে আমি বলে যাব,
যখন বুঝব আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে।
ওদের জন্যতো এই এক জীবনে আর কম করিনি-
চাকুরী নামক চাকরের বোঝা টেনেছি টানা পঁয়ত্রিশ বৎসর-
কখনও কোনদিন বলিনি, এটি আমার-
বলেছি এটা তোদের, এটা তোদের জন্য করলাম।
কখনও বুঝতে দেইনি, কিন্তু মিটিয়েছি সবার চাওয়া-আব্দার-আহ্লাদ।
ওরা নিশ্চয় রাখবে আমার কথা, আমাকে চিরশান্তিতে আশ্রয় দিবে এখানে।
ওদের আমি অনেক ভালবাসা দিয়েছি, শিখিয়েছি বন্ধন
আশা করি সে বন্ধন রাখবে আমার মৃত্যুর পরেও।
এই এক টুকরো জমি খণ্ড-বিখন্ড হয়ে ভাংচুর হবে না।
আমার শেষ চিহ্ন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেনা লোভ আর টাকা পয়সার কাছে।
ওরা তো স্বার্থপর নয়, আমি তাদের সেভাবে গড়ে তুলিনি।
যেদিন আমি থাকবনা, আমাকে মনে করুক আর নাই করুক
আমার সৃতিফলকে শ্যাওলা জমে মুছেও যায় যদি কথামালা
তবুও আমি চাইব, সুখে থাকুক আমার সন্তানেরা।
যখন আমার হাড়-মাংস পচে গলে মিশে যাবে মাটির সাথে
তখন তুমি হয়ে যাবে আমার অস্তিত্ব কৃষ্ণচূড়া।
আমি ফুল গুলোকে আরও রক্তাভতা এনে দিব-
আমার সন্তানেরা মুগ্ধ হয়ে যাবে,
যেমন মুগ্ধ ঠিক অতীতেও আমি করে রেখেছিলাম।
সেদিন তারা ভাববে, হয়ত বহুদিন পরে হলেও-
একটি বারের মত মনে পড়বে-
তাদের একজন পিতা ছিল, একজন সাধারন পিতা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৫