প্রিয় ঘাস ফুল এবং প্রজাপতি-
আজ তোমাদের নিয়েই লিখতে বসলাম এ কবিতা।
আমার তো আর কেউ নেই-
যাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে পারি।
এই মরুভূমির শহরে
বেঁচে থাকার তাগিদে ধুকে ধুকে বেঁচে থাকা জীবন থেকে-
বিদায় নিয়ে চলে গেছে সবাই,
যাকে আমি একটি কবিতা উৎসর্গ করত পারি।
প্রিয় ঘাস ফুল
সকালের সোনা রোদ্দুর অথবা
কুয়াশার শিশির বিন্দু গায়ে মেখে তুমি অপেক্ষায় থাক কার জন্য? পথিকের?
তোমাকে মাড়িয়ে সে চলে যাবে-
মানুষ দেবতার পদস্পর্শে আশীর্বাদীত করতে চাও নিজেকে?
আমার তো ও পথ ধরে যাওয়া হয়না আজ কতকাল হয়ে গেল।
জীবনের কত শত পথ পেড়িয়ে আজ গৃহ হারা ভবঘুরে পথিক আমি
কত শত পথের ধূলা জমা হয়ে আছে আমার শত ছিন্ন গাত্র চাদরে-
কিন্তু ঘাস ফুল, শেষ বার যখন তুমি
আমায় আলিঙ্গন করেছিলে গায়ের মেঠো পথ ধরে-
তারপর কতদিন পেড়িয়ে গেছে-
ভালোবাসার স্পর্শ আর কোনদিন পায়নি এ ভবঘুরে পথিক।
আমার হতাশা গুলো, যন্ত্রণা কিংবা
আমার বিপরীতে চলা সময়ের পথে-
কতবার হোঁচট খেয়েছি, রক্তাক্ত হয়েছি
তারপর আবারও উঠে দাঁড়িয়েছি-
প্রিয় ঘাস ফুল, তুমিই ছিলে আমার একমাত্রও প্রেরণা,
একমাত্র তুমিই ভালবাসতে আমায়।
মানুষই দেবতা, কিন্তু মানুষ মানুষের দেবতা নয়;
প্রিয় ঘাস ফুল,
যখন তুমি মানুষের পদস্পর্শ কর তখন মানুষ হয় দেবতা,
কিন্তু মানুষ যখন তোমাকে মাড়িয়ে যায়-
তখন কিভাবে তাকে দেবতা বলি?
দেবতার সন্ধান তাই পাইনি কোনদিন। অথচ আমিই সেই পথিক।
প্রিয় প্রজাপতি
রঙ্গিন ডানা মেলে যখন তুমি ফুলে ফুলে উড়ে যাও,
আমার যে কি ভাল লাগে দেখতে!
আমার সাদাকালো জীবনটা যদি তোমার ডানার উপর-
মেলে দিতে পারতাম।
হয়ত আমার জীবনটিও রঙ্গিন হয়ে যেত ঠিক তোমার ডানার মত।
মানুষের এই রঙের দুনিয়ায়
আমার সাদাকাল ধূসর জীবনটি বড়ই বেমানান।
মানুষ চায় রংধনুর সপ্তরঙ্গে- সেই সাথে রঙগুলোর একটির সাথে অন্যটির মিলিয়ে আরও কত শত রঙ-
চাওয়ার এ শেষ নেই-
একটি চাওয়া একটি রঙ; কতশত চাওয়া কতশত রঙ
অথচ লাল বেগুনি হলুদ সবুজ ... কিছুই নেই আমার,
পথিকের পথ হয় ধূসর- সাদাকালো
রঙ্গিন পথের যাত্রীরা কখনও হয়না পথিক, তারা পথচারি মাত্র।
তোমার রঙ্গিন ডানার রঙ মাখিয়ে এই অচেনা পথিকের
কখনও বা ইচ্ছা জাগে একটু ভালবাসার কথা বলতে;
সুখের কথা না হোক, একটু দুঃখের কথা কাউকে শোনাতে-
প্রিয় প্রজাপতি তাদের সাথে-
বিদায় নিয়ে একে একে চলে গেছে যারা সবাই।
প্রিয় ঘাসফুল এবং প্রজাপতি
আমি দেবতার সন্ধান করে পাড়ি দিয়েছি কত শত হাজার মাইল,
কিন্তু দেবতার সন্ধান পাইনি।
আবারও বলছি-
তোমাদের মাড়িয়ে যে চলে যায়, তাকে কিভাবে দেবতা বলি?
তবে আমি একজন পথিক হতে পেরেছি, একজন ভবঘুরে পথিক।
আমার পদচিহ্ন আমি রেখে গেলাম তোমাদের ডানায় ডানায় ।
নতুন দিনের কোন নতুন পথিক-
তাকে আমার মত করে কোন দেবতা খুঁজে বের করতে হবে না,
দেবতার সন্ধান সে পেয়ে যাবে-
তোমাদের ডানায়, তোমাদের ঘাসের শিশির বিন্দু কণায় -
আমার সে পদচিহ্ন দেখে দেখে।
যারা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, তাই আজ তারা থাক-
তারা থাক তাদের সবকিছু নিয়ে।
আজ তোমাদের নিয়েই লিখলাম প্রিয় ঘাস ফুল এবং প্রজাপতি ।
তোমরা ভাল থেক।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৪১