ভাষার মাসে আজ আমি ভাষাহীন। অবাক করা কথা তাই না ? বাংলা-উর্দু -ইংরেজি –আরবি ভাষার হিসাব মিলাতে গিয়ে আর যাই হোক এইটা উপলব্ধি করতে পারলাম উন্নতি করতে হলে আগে ভাষার প্রসার ঘটাতে হবে।
এই বিশ্বায়নের যুগে আমাদের বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি দিয়ে একটু **বাংলায়ন** করা অত্যাবশ্যিক।
আপনি জানেন কি? শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষার বিস্তৃতি আর প্রসারের কারনে ইংরেজ আর আমেরিকানরা এখনও সমগ্র বিশ্ব শাষণ করছে।
আসলে ঘটনার শুরুটা একটু ভিন্ন দিক থেকে। ইউরোপিয়ানদের মধ্যে সব থেকে ক্ষমতাশালী ছিল বৃটিশরা। তারা পয়দা করল মহাপরাক্রমশালী আমেরিকা নামক দেশটিকে সাথে তাদের পুজিবাদি-উদারপন্থি-গনতন্ত্রকে। যাইহোক ২ টা আণবিক বোমা ফাটিয়ে তারা নিজেদেরকে যাহির করল। ছিল বাকি সাম্মবাদি-মার্কসবাদী-সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু আমি যে বছর জন্মালাম সেই বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে অনেক গুলা দেশ জন্মাল। দখল-দারিত্ত আর কলোনি করা বন্ধ হল। তাই বলে কি শোষণ নিষ্পেষণ থেমে গেল ?
মোটেও না। সেই পুরানো মদ আবার নতুন বোতলে করে বাজারজাত করা হল। পুরানো মদ বলে কথা ...আহ ! স্বাদেও পরিবর্তন আসল।
শুরু হল এক নতুন ইতিহাস, এক নতুন যাত্রা, এবং তৈরি হল শোষণের এক নতুন হাতিয়ার।
বিশ্বায়ন !!!!
সাথে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এ যেন মড়ার উপর আরও এক খড়ার ঘা।
কি এই বিশ্বায়ন ? আর বিশ্ব বাণিজ্য ??
আরে ভাই এর মানে হল ভাষা হবে ইংরেজি আর আমরা হব পশ্চিমা সংস্কৃতির গোলাম। পণ্য তাদের বাজার আমাদের। কষ্ট করব আমরা আর লাভ ?? ওটা তো সেই কলোনি ছিল যে সময় তখন ও যা হত এখনও তাই। লাভ সব যাবে তাদের ঘরে।
তারমানে ?? ইনিয়ে-বিনিয়ে হোক আর ছিনিয়ে হোক অর্থ সম্পদ আর সুখ শান্তি সব পাবে তারা। আর আমরা?? কি আর করব ? দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাতের বুড়ো আঙ্গুল খানায় চুষব। বেটা আপদ বোঝে না। বোকা ছেলে কোথাকার।
আরে আমরা তো শুধু খেয়ে পরে একটু বেঁচে থাকব মাইরি । আরে আর কি চাস বেটা গোলামের বাচ্চা ?
ওহ দুঃখিত !! সেই আসল প্রসঙ্গ থেকেই তো দূরে চলে গেলাম।
বায়ান্নতে আমার ভাইয়েরা রক্ত দিয়ে আমার মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেছে। আর একাত্তরে আমার বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ এনেছে। তাইতো আজ বুক ফাটিয়ে বলতে পারি ***জয় বাংলা***।
“জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো
এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাকো।।
তোমার কথায় হাসতে পারি
তোমার কথায় কাঁদতে পারি
মরতে পারি তোমার বুকে
বুকে যদি রাখো মাগো।।
তোমার কথায় কথা বলি
পাখির গানের মতো
তোমার দেখায় বিশ্ব দেখি বর্ণ কত শত।”
কিন্তু, কোথায় বাংলা? কোথায় বাঙালি ? কোন স্বপ্নে বুক বেঁধেছি আমরা? কোথায় চলেছি আমরা? হাহ –হাহ-হাহ......... দুর্নীতির মহা-স্বর্গে নতুবা অনিশ্চিত কোন এক দুর্বিষহ গন্তব্যে। তাই নয় কি ???
আহারে !! আজ আমাদের নিজস্ব সত্তা বলে কি বাকি থাকল? শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা আর একুশ ফেব্রুয়ারি?? সাথে পহেলা বৈশাখে এক বেলা পান্তা ইলিশ?
আমাদের দরকার বাংলা ভাষা আর বাঙালি সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। বুকে হাত দিয়ে বলেন তো কয়জন বিদেশী বাংলা ভাষা পারে?? আমাদের শিক্ষা আর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে?
আসুন আমরা আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করি,
যদি বাংলা মায়ের এক চিমটি নিমক খেয়ে থাকি তাহলে আমরা বাংলায়ন করেই ছাড়ব, ইনশাল্লাহ ।
টীকাঃ ***বাংলায়ন**--- বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি আর আমাদের দেশীয় বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্বায়নের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকেই লেখক এখানে বাংলায়ন নামে অভিহিত করেছেন। সারা পৃথিবী চলবে বাংলা ভাষার মাধ্যমে। সারা বিশ্বের প্রতিটা মানুষ ব্যবহার করবে বাংলাদেশী পণ্য।