আমি চুপ করে দেখেছি, ১ প্লেট ভাত আর ৫ টাকা দামের আলু ভর্তার জন্য বিচলিত প্রতীক্ষা। ধোঁয়া উঠা গরম ভাতের প্লেট দেখে বৃদ্ধা তার নোংরা হাত না ধুয়েই কচলিয়ে সমস্ত ভাত এক মুহূর্তে মেখে ফেললেন আর তাড়াহুড়ো করে কিছুটা না চাবিয়েই গিলতে লাগলেন। তার শরীরের গন্ধ আমার নাকে এলো। তিনি আমার সামনের চেয়ারে বসা। আমি পরোটা আর ভাজি না খেয়ে বৃদ্ধার খাওয়া মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম। ২-১বার মুখে দিলাম। আবার তাকালাম। কিন্তু উনি আমার দিকে একবারও ভুলেও তাকালেন না...খেয়েই চলেছেন। খাওয়ার শেষের দিকে আমি ডাকলাম...
-চাচী কি এইখানেই থাকেন ?
= না, কিছুটা দূরে। লক্ষ্মীপুর।
রাজশাহীতে লক্ষ্মীপুর নামে একটি জায়গা আছে, উনি সেখানেই কোন একটা কাজে এসেছেন অসুস্থ প্রতিবন্দী ছেলেকে নিয়ে। ছেলেটাকে রাস্তায় শুইয়ে রেখে তবেই তিনি খেতে এসেছেন। তিনি সাহায্য তুলছেন ছেলের চিকিৎসার জন্য। তার খাওয়া শেষের দিকে। বললাম... বিল দিবেন, টাকা আছে?
= আমি ঢুকার সময় অরা আমার কাছ থাইকা ১০ টাকা নিছে। আর দেওয়া লাগব না।
আমি অবাক হলাম। আমরা আগে পেট ভর্তি করে খাই তারপর বিল দেই এসব নরমাল টাইপের হোটেলে। আর এই বৃদ্ধা ভাল পোশাক পড়ে আসে নি, এজন্যই কি তার থেকে আগে আগে ১০ টাকা রেখে দেয়া হয়েছে? যে হোটেলে দিন গেলে হাজার হাজার টাকা ইনকাম হয়,কি ক্ষতিহতো এই ১০ টাকা না নিলে ? বলতে লজ্জা হয় তাও বলি...এই বৃদ্ধার বিবেক আছে ওই বড় বড় হোটেল মালিকদের চেয়ে। তিনি খাবার চেয়ে খান নি হোক সে ভিক্ষুক। নিজের ভিক্ষার টাকায় খেয়েছেন। ফকির তো তাদের বলতে হয় যাদের পকেটে ১০৳ না গেলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।
= মা, আমি আসি। রাস্তায় আমার ছেলেটা আছে, দেইখা যেও।
আমি উনাকে কিছু টাকা দিলাম। কিছু বলতে গিয়েও তিনি বললেন না, চলে গেলেন।
আমার খাওয়া হয় নি। খাওয়া শেষ করলাম। আমি সত্যি খুব তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছিলাম ওই বৃদ্ধার খাওয়ার অনুভূতির কথা মনে করে। আমি বড় বড় হোটেলে লাল-নীল আলোতে খেয়ে যে শান্তি পাই আজ এই সস্তা হোটেলে খেয়ে তার চেয়ে বেশি স্বস্তি পেয়েছি। এয়ার ফ্রেশনার ছিল না কিন্তু বৃদ্ধার ঘামের গন্ধ আমাকে বিন্দু পরিমাণ সংকুচিত করে নি।
ঈদ আসছে। গরিব-ধনী সবাইকে মিলিয়ে দিতে ঈদ আসছে প্রতি বছর ২ বার করে। আসছে পূজা, আসছে জন্মাষ্টমী। কিন্তু আজও বেশির ভাগ ধনীদের কাছে ঈদএর অর্থ রূপক অর্থেই রয়ে গেছে। সাহায্য ছোট মাপের হতে পারে কিন্তু অবহেলা কেন???
আজও সমাজের বেশিরভাগ লোকের কানে অসহায়ের নীরব ক্ষুধার ভয়ংকর আর্তনাদ পৌঁছে না যতক্ষণ না পর্যন্ত গরিবেরা মুখ খুলে বলছে... " ভাত দে হারামজাদা। "