গতকাল ১২ ফেব্রুয়ারী “আমারদেশ” পত্রিকায়” ‘ব্ল্যাক’ ছবিটি দেশ ও ইসলামের মর্যাদা নষ্ট করবে” শিরোণামে একটি লেখা পড়েছি। কথিত “ব্ল্যাক” ছবির পরিচালক সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী নামটি দেখে লোকটির বিষয়ে অনেকদিন পর কৌতুহলী হলাম। ২০০৩ সালের পর এ ব্যক্তির যবনিকাপাত হয়েছে ধারনা করে তার বিষয়টা প্রায় ভুলেই গেছি। যাই হোক শিরোণামটি পড়া শেষে গুগলে “সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী+ইসরাইল” লিখে সার্চ করে যে সব তথ্য পেলাম তাতে আশ্চর্য, শংকিত ও স্তম্ভিত হলাম। ব্লগারদের সাথে ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো শেয়ার করলাম......
কে এই সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী?
২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত এই লোকটি দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক ও কলামিষ্ট ছিল। ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে তার অগ্নিঝরা কলাম পড়ে রীতিমত তার ভক্ত হয়ে গেছিলাম। সে সময় শোয়েব চৌধুরী অন্যান্য অনেককে এমনকি শাহরিয়ার কবিরকেও ইসরাইলের চর বলে আখ্যায়িত করে। ইনকিলাব হাতে নিয়েই তার কলামের খোজ করতাম প্রতিদিন। ২০০৩ সালের নভেম্বরে পত্রিকার হেডলাইনে দেখলাম সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ইসরাইল যাওয়ার পথে বিমান বন্দরে গ্রেফতার। খবর পড়ে আশ্চর্য একই সাথে স্তম্ভিত হলাম। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এদেশীয় এজেন্ট এই সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী। জিজ্ঞাসাবাদে সে সেমিনারে অংশগ্রহনের কথা বলে। তার সাথে থাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ডকুমেন্ট ও অনেকগুলো ডকুমেন্টারী সিডি জব্দ করা হয়। তার বিরূদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে মামলা করে জরুরী ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার করা হয়। তার গ্রেফতারে আন্তর্জাতিক ইসরাইলী লবিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে। পরবর্তী সময়ে শোয়েব চৌধুরীর ইসরাইল সংশ্লিষ্টতা নিয়ে পত্রিকাগুলো অনেকদিন যাবৎ সংবাদ বিশ্লেষণ লিখে। তার মুক্তির বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক চক্র সোচ্চার হয়ে উঠে-যার অগ্রনী ভূমিকায় ছিল আমেরিকার ইহুদী লবিস্ট ড: রিচার্ড বেনকিন। এই লোকটি তখন শোয়েব চৌধুরীর মুক্তি ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ও ইসরাইলী মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করে।
আজ গুগলে সার্চ দিয়ে যা জানলাম-তার সার সংক্ষেপ হচ্ছে ২০০৩ সালে আগের ও আজকের সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরীর অনেক তফাৎ। আজকের শোয়েব চৌধুরীর ভিত অনেক শক্ত। কাগজের দুনিয়ার বাইরে ওয়েব দুনিয়ায় তার আনাগোনা অবিশ্বাস্য। তার ব্যক্তিগত ওয়েব সাইটে তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পাওয়া যায়। আগে ইসরাইলের পক্ষে তার তৎপরতা ছিল গোপন। কিন্তু এখন সে প্রকাশ্য ভূমিকা অবলম্বন করছে ইসরাইলের পক্ষে। ২০০৮ এর সেপ্টেম্বরে উগ্রবাদী জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ ও ইসরাইলের কিছু প্রতিনিধি মিলে (সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরীসহ) "ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি" নামক নতুন একটি দল তৈরী করে এবং নির্বাচন কমিশনে অন্তুর্ভুক্তির জন্য আবেদন করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলটি অনুমোদন পায়নি। এ ব্যাপারে ২৯ সেপ্টেম্বর ডেইলী স্টার পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। তবে তারা থেমে নেই। শেষ পর্যন্ত কমিউনিটি মিডিয়াতেও তারা বিষাক্ত নখর বসিয়েছে। এই সামহোয়্যার ইন ব্লগে নামে বেনামে অন্তত ৩ জনকে আমি জানি যারা সরাসরি ইসরাইলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি ও দালালী করছে। এই শোয়েব চৌধুরী ও তার চামচাদের সর্বশেষ পদক্ষেপ হচ্ছে “ব্ল্যাক” ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করা।
ব্ল্যাক (BLACK) ছবির বিষয়বস্তু:
২০১০ এর ডিসেম্বরে শুরু হওয়া ব্ল্যাক (BLACK) ছবিটি এবছরেই মুক্তি পাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এই ডকুমেন্টারী মুভিটি বাংলা ভাষায় হলেও ইংলিশ, হিন্দি, ফ্রেন্স, উর্দু সহ বিভিন্ন ভাষায় সাব টাইটেল করে সারা বিশ্বে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব ছড়িয়ে দেয়া হবে। ছবিতে নায়িকা হিসেবে থাকছে নতুন মডেল নায়িকা শতাব্দি। এ ছবিতে গান গাইবেন প্রখ্যাত সংগিত শিল্পী রুনা লাওয়া, এন্ড্রকিশোর, এস আই টুটুল, ফকির শাহাবুদ্দিন প্রমুখ। ছবির মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- জিহাদ, বোরখা, পাথর ছুড়ে হত্যা, বহু বিবাহ, বাল্যবিবাহ, ইসলামী শরীয়াহ আইনের বিরুদ্ধে দেশে ও বিদেশে জনমত গঠন করা।
৭টি সিরিজে সমাপ্য এই সিরিজগুলোতে তুলে ধরা হবে- ইসলামী শরিয়া কিভাবে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে?
সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি
ব্ল্যাক (BLACK) ছবির পরিচালক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী একজন বিতর্কিত ব্যক্তি এবং ইসরাইলি লবির লোক বলে প্রমানিত। তার তৈরীকৃত ছবিটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হলে তা সারাবিশ্বে বাংলাদেশ ও ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছে দেবে। আরব বিশ্বেও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে, যা মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী জায়নবাদী স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠীর এ ধরনের হীন অপচেষ্টা প্রতিরোধে সময়োচিত পদক্ষেপ নিন।