বাচ্চুর মরনের খবর শুনে এক মুহুর্তেই সকল স্মৃতি নিয়ে ছোটকালে ফিরে যাই। কিছু গান দেখবেন আপনি জানেনও না কিভাবে যেন গুনগুন করে গাইতে থাকেন। "আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেবো আকাশে" এই গান আমি এইভাবে গাইতাম। শিবলু ভাইদের বাড়ির পেছনে আর আদর্শ স্কুলের মাঠে দাড়িয়াবান্ধা খেলার সময় এই গান জোরে জোরে গেয়ে প্রতিপক্ষরে কটাক্ষ করতাম তখন। সবুজবাগে জুয়েল ভাই এর তখন সাউন্ড বক্স ছিল। তার বাসার সামনে দিয়ে গেলে শুনতাম এক চালা টিনের ঘর, এক আকাশের তারা তুই, মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেনো চেনো না গান বাজাতেন। তার কাছে শুনে শুনে এই গান গুলি এত প্রিয় হয়ে গিয়েছিল তখন! এই গানগুলি ত আমি ছোটকালের স্মৃতি হিসেবেই মনের কোণে জমা করে রেখেছিলাম।
তারপরে ফিরে যাই কলেজে পড়াকালীন স্মৃতির কাছে। কিশোর আমি তখন সারারাত জেগে থাকতাম আর "সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে" গান শুনতাম। কেউ হয়তো বুঝবেও না এই গান কতটা তীব্রভাবে প্রিয় গান হয়ে উঠেছিল।
২০১০ সালের দিকে আমি যখন ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যে কোচিং করতে গিয়েছিলাম তখন সেই তারা ভরা রাতে, হাসতে দেখো গাইতে দেখো, এই রুপালি গিটার ছেড়ে, আমি তো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার উপরে পড়েছে, কবিতা তুমি এখনও রাত হলে কি তারাদের গোনো, আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি এই গানগুলি রাতের পরে রাত এক নাগাড়ে বেজে চলতো।
"আম্মাজান আম্মাজান আপনি বড় মেহেরবান
জন্ম দিছেন আমায় আপনার দুগ্ধ করছি পান।"
আম্মাজান গানের কথা মনে পড়ে। পাড়ার দোকানে কিংবা কারোর বাসা কোথাও এই গানটি শুনলে রাহিম হাত পা ছুড়ে তার তালে তালে নাচতে শুরু করতো। দুই বছর বয়েসী শিশু রাহিমের এমন উচ্ছ্বাস দেখে আমরা হাসতাম। গানটি চলার সময় একদিন দেখি আম্মা আড়ালে চোখ মুছতেছে। আমার তখন সাত অথবা আট বছর হবে। মনে আছে, আমিও এত মনযোগ দিয়ে গানটি শুনতাম। একটা অদ্ভুত মোহ ছড়িয়ে গেছিল আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া আম্মাজান গানটি বের হবার পরে।
বাচ্চু বেঁচে থাকলেও কী আর মরে গেলেও কী, আমি তো জানতামও না তার শারীরিক অবস্থা কেমন ছিল। কিন্তু এখন তার মরনের খবর শুনে ওই বুড়ো গানগুলো, ছোটবেলায় ফেলে আসা স্মৃতিগুলো আবার ফিরে এসেছে। কেউ সারাজীবন বেঁচে থাকেনা জেনেও কারোর মৃত্যুর খবর আমাদেরকে এতটা অসহায় করে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৭