গত রাত্রে নির্মম ভাবে খুন করা হয়েছে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। তার অপরাধ কি জানেন? সে আমাদের দাদাদের মহানুভবতা কিছু নমুনা তুলে ধরে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন। দেশের পক্ষে সামান্য একটি পোস্ট দেবার কারণে একটি মেধাবী শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হচ্ছে তাও একটি স্বাধীন দেশে?
যে পোস্টটির জন্য খুন হলেন আবরারঃ
কিছুদিন পুর্বে এক জুয়ারী হুইপের বিপক্ষে পোস্ট দিয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন পুলিশ কর্তা আর এবার দেশ বিরোধী চুক্তির প্রতীবাদে ফেসবুকে লিখে খুন হলেন দেশের সব থেকে সেরা শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের একজন মেধাবী দেশপ্রেমিক শিক্ষার্থী। যে দেশে নিজ দেশের পক্ষে লিখলেও খুন হতে হয় সে দেশে দেশ প্রেমিক নয় দালালদের জন্ম হবে। মনে হচ্ছে বাঙালিদের জন্মই হয়েছে দালালি করবার জন্য সেটা বৃটিস, পাকিস্তান অথবা ভারত যাদের পক্ষেই হোক।
আবরারকে হত্যা সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
আবরার হত্যার ঘটনা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা যা জানতে পেরেছি বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করলাম। ভালো লাগলো আপনাদের জানবার আগ্রহ দেখে। কোন নতুন তথ্য আপডেট পেলে যোগ বা বাদ দিয়ে আপনাদেরকে প্রকৃত ঘটনা জানাতে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
আবরারের একজন রুমমেট ঘটনার বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, টিউশনি শেষে রুমে রাত নয়টার দিকে আসি। তখন আবরার রুমে ছিলো না। অন্য রুমমেটদের কাছ থেকে জানতে পারি তাকে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে গেছে। পরে রাত আড়াইটার দিকে হলের একজন এসে আবরার আমাদের রুমমেট কিনা জানতে চান। আমি হ্যাঁ বললে সিঁড়ি রুমের দিকে যাওয়ার জন্য বলেন। পরে সিড়ি রুমের দিকে গিয়ে একটা তোশকের ওপরে আবরার পড়ে আছে। পরে ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'
মারধরের সময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু। তিনি বলেন, আবরারকে রাত আটটার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেইজে তার লাইক দেয়ার প্রমাণ পাই। এরপর হয়তো তাকে মারধর করে থাকতে পারে। পরে রাত তিনটার দিকে শুনি আবরার মারা গেছে।
আবরারের সহপাঠীরা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবরার সক্রিয় ছিলেন। লেখালেখি করতেন। এ কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবরারের পায়ে ও ঊরুতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আঘাতজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
পুলিশ জানায়, ২০১১ নম্বর রুম থেকে পুলিশ তিনটি খালি মদের বোতল, একটি অর্ধেক ভরা মদের বোতল, চারটি ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প, একটি চাপাতি, দুটি লাঠি উদ্ধার করেছে। স্ট্যাম্পগুলোর মধ্যে একটিতে লালচে দাগ রয়েছে। এটি শুকনা রক্তের দাগ হতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সোহেল মাহমুদ ময়নাতদন্তের পর আজ সোমবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে এ কথা জানান। সোহেল মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্তে আবরারের দেহে জখমের অনেক চিহ্ন পাওয়া গেছে।
'ভারতবিরোধী' স্ট্যাটাস দেয়ার অপরাধে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যায় জড়িতদের প্রাথমিক তালিকা ও ছবিঃ
১) বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু
(২) বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ
(৩) উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল
(৪)উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা।
(৫) ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন
(৬) তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার
আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন তাঁর বাবা বরকতুল্লাহ। আজ সোমবার সন্ধ্যার পর চক বাজার থানায় হত্যা মামলাটি করেন তিনি। হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।
জানা গিয়েছে হলের যে কক্ষে আবরারকে পেটানো হয়, সেই কক্ষে চার শিক্ষার্থী থাকেন। তাঁদের মধ্যে পলাতক, হলেন-বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ
এদিকে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের বাঁচাতে যদি সিসি ফুটেজ গায়েব করা হয়, তাহলে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন জ্বলবে বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। আবরার হত্যার প্রতিবাদে ঢাবি-বুয়েটে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বিক্ষোভে কয়েকজন শিক্ষকও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘আবরার হত্যার পেছনে ছাত্রলীগের অতিমাত্রায় ভারতপ্রেম প্রেরণা জুগিয়েছে। দেশপ্রেমিক আবরারের ভারতবিদ্বেষী স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
আবরার হত্যায় ছাত্রলীগ নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেফতাদের দাবি করেছে ও তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে
ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বহিষ্কৃতদের তালিকাঃ
কিন্তু অত্যন্ত অবাক হয়েছি এই বহিষ্কারের লিস্টে অন্যতম অভিযুক্ত খুনী অমিত সাহা ( উপ আইন সম্পাদক, ছাত্রলীগ, বুয়েট) এর নাম নেই। অথচ সে উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠনের সদস্য এবং খুনের সময় এই অমিতের ভূমিকার ব্যাপারে শুরু থেকেই তথ্য ছিল।
তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো, কালেরকন্ঠ ও অন্যান্য অনলাইন নিউজ মিডিয়া