somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের উচিত সময়টাকে মূল্যায়ন করা

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন সাহিত্যকর্মী এবং কমিউনিটির ছোট খাটো কয়েকটি সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার সুবাধে মাঝে মধ্যে দু’একটি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাই। যদিও সবগুলো অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগত কাজের চাপে যাওয়া সম্ভব হয় না তবে সময় সুযোগ হলে দু চারটা প্রোগ্রামে যাই এবং আয়োজকদের বেধে দেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপস্থিত হই। তবে ইদানিং অনুষ্ঠানগুলোতে পৌঁছার পর যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি আহত করে পীড়া দেয়, সেটি হলো সময় মতো অনুষ্ঠান শুরু না করা।

গত কয়েকদিন পূর্বে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আয়োজকরা আমন্ত্রণ দেবার সময় বলেছিলেন বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠান শুরু হবে, আপা ঠিক সময় মতো চলে আসবেন প্লিজ। টাইম মেইন্টেইনের ব্যাপারে আমি খুব যত্নশীল। নির্ধারিত সময়ের পাঁচ দশ মিনিট আগে সব জায়গায়-ই পৌঁছার অভ্যাস আমার দীর্ঘদিনের। সে অনুষ্টান হোক আত্বীয়-স্বজনের বাসায় অথবা বাইরে অন্য কোথাও। ঠিক সময়ের মধ্যে উপস্থিত হওয়ার এক অদৃশ্য চাপ আমাকে তাড়া দেয়। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে আমার আত্বীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবরা হাসাহাসি করে। তবে এতে আমার কিছু করার নেই।

এবার আসি মূল কথায়। সে দিনের অনুষ্ঠানে বিকেল পাঁচাটায় গিয়ে দেখলাম ওখানে মাত্র তিন চার জন লোক উপস্থিত আছেন। তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হলো আয়োজকদের মধ্যে অনেকে-ই এখনো আসেননি। চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম এবং সুযোগমতো একজনকে জিজ্ঞসে করলাম, ভাই বললেন পাঁচাটায় আসতে এখন ঘড়ি সাড়ে পাঁচটা, কিন্তু অনুষ্ঠান এখনো শুরু করছেন না, করাণটা কি? উত্তরে ভদ্রলোক বললেন, বিকেল পাঁচটায় আসতে বলার কারণ আমাদের বাঙালীরা সময় মতো কেউই আসেন না। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সবাইকে বলা হয়েছে বিকেল পাঁচটায় আসতে। তবে আমরা অনুষ্ঠানটি শুরু করব ছয়টা অথবা সাড়ে ছয়টার দিকে। আপনি সময়মতো এসেছেন আপা ধন্যবাদ একটু চা খান।

যাই হোক, শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিলো বিকেল সাতটায়, প্রায় দুই ঘন্টা দেরীতে। যার ফলে আমাদের মতো অনেকেই বিপাকে পড়েন। কাজকর্ম ফেলে অতি কষ্টে সময় বের করে অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত হয়ে যখন দেখা যায় নির্ধারিত সময়ে শুরু না হয়ে ঘন্টা দেড়েক পরে অনুষ্ঠানটি শুরু হয় তখন অনেকেই অ-স্বস্তিতে ভুগেন। আমাদের বাঙালি কমিউনিটের অধিকাংশ প্রোগ্রামগুলো রোববারে অনুষ্টিত হয়। উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে অনেকেই থাকন কর্মজীবি মহিলা যাদের মধ্যে অনেকের-ই হয়তো নিজস্ব কোন ট্রেন্সটোর্ট নেই। একটু বিনোদন, গুরুত্বপূর্ন কিছু কথা শোনা বা বলার জন্য যারা দূর দূরান্ত থেকে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে অনুষ্ঠানে আসেন, তাদের মধ্যে দেখা দেয় চরম হতাশা । বিশেষ করে নারীদের বেলায় সমস্যাটা হয় একটু বেশি। কারণ, অনেকের-ই নানা ধরণের পারিবারিক সমস্যা থাকে। যেমন: টাইম মতো বাসায় ফেরা, বাচ্চা দেখাশোনা করার মতো বাড়ীতে লোকের অভাবসহ আরো অনেক কিছু। তবে যাদের আত্বীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আছেন তাদের কথা আলাদা । কিন্তু যারা আত্বীয়-স্বজনহীন, তারা অনেকেই পয়সা দিয়ে চাইল্ড মাইন্ডারের কাছে বাচ্চাদেরকে রেখে আসেন। এরমধ্যে যদি অনুষ্টান শুরু হতে ঘন্টা দেড়েক সময় কেটে যায় তা হলে এতো কষ্ট করে অনুষ্ঠানে এসে কোন লাভ হয় বলে মনে হয় না। আমাদের অধিকাংশ বাঙালি অনুষ্ঠানগুলোর এই একই চিত্র দেখা যায় সবখানে। তবে এ সব ক্ষেত্রে অন্যান্য কমিউনিটির চিত্রগুলো একটু ভিন্ন।

বিগত বছরগুলোতে অন্যান্য কমিউনিটির বেশ ক'টি অনুষ্ঠানে যাবার সুভাগ্যে আমার হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা তাদের অনুষ্ঠানগুলো শুরু এবং শেষ করেছে। বিশেষ করে ইউরোপীয়ানদের বেলায় দেখেছি, তারা যদি কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আর সেখানে মাত্র পাঁজজন লোক উপস্থিত হয়, তারা দেরী না করে ঐ পাঁচজন লোক নিয়েই নির্ধারিত সময় মতো অনুষ্ঠান শুরু করে দেয়। এতে আয়োজক এবং দর্শক দু’পক্ষের জন্য ভালো ফল বয়ে আনে।

প্রবাসের এই ব্যস্ত জীবনে আমাদের সবারই উচিত সময়কে মূল্যায়ন করা। কমৃজীবি দর্শকদের কথা চিন্তা করে অনুষ্টানগুলোর আয়োজকরা আগামী অনুষ্টানগুলো যদি সময় মতো শুরু করেন তা হলে অনেকেই উপকৃত হবেন । বিশেষ করে নারীরা আরো বেশি অংশ গ্রহণের সুযোগ পাবে্। হুট করে কোনকিছইু সম্ভব নয়, এরপরও সবাই মিলে যদি চেষ্ঠা চালিয়ে যাই অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এ জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব, কারণ পৃথিবীতে মানুষের অসাধ্য বলে কোনকিছু নেই।

রচনাকাল ২০/১২/২০১০
লন্ডন


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৩৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×