ছোট বাচ্চাদের একটা প্রিয় খেলা হচ্ছে "পিপড়া মারা" খেলা। এই খেলার জন্য একটা আতসি কাঁচ অথবা এক টুকরা আয়নার প্রয়োজন হয়। সেই আয়নার সাহায্যে সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব পিপড়ার উপর ফেলতে হয়। সেই প্রতিবিম্ব গায়ে পড়ার সাথে সাথেই পিপড়াগুলো প্রচণ্ড তাপে ছট-ফট করতে করতে পুড়ে মারা যায়।
বড় নিষ্ঠুর এক খেলা!
কিন্তু আমরা তবুও সেই শিশুদেরকে নিষ্ঠুর বলিনা। কেননা, তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মস্তিষ্ক জীবন-মৃত্যুর এই জটিল হিসাবটি জানেনা।
পৃথিবীতে একদল প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ আছে। তাদের মধ্যে •কেউ কেউ নিজের হাতে মানুষ হত্যা করে সেই মানুষের মাংস ফ্রিজে রেখে রেখে রান্না করে খায়!
•কেউ কেউ নিজের শিশু সন্তানকে মাইক্রোওয়েব ওভেনের ভিতর ঢুকিয়ে সুইচ অন করে দেয়। শিশুটা যখন প্রবল বৈদ্যুতিক চাপে ছট-ফট করতে করতে মারা যায় তখন সেই নরপিচাশটি এই দৃশ্য দেখে তৃপ্তি পায়!
•আমেরিকার একজন ছিল যে হাতের নিশানা পরিক্ষা করার জন্য ঝোপের আড়াল থেকে গুলি ছুড়ে-ছুড়ে অনেক মানুষ হত্যা করেছে। •কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে এক পিতা তার শিশু সন্তানকে ধারালো ব্লেড দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে! •তাদের মধ্যে কেউ কেউ রাতের অন্ধকারে সদ্য-মৃত মানুষের কবর খুড়ে লাশের কলিজা খায়!
বিকৃত মস্তিষ্কের এই মানুষগুলো আমাদের চারপাশে সাধারন মানুষের মতই ঘুরে বেড়ায়। চাকরি করে। সংসার করে। বউ-বাচ্চা নিয়ে বিয়ের অনুষ্টানে দাওয়াত খেতে যায়। খাবার টেবিলে বসে মাংসের বাটি একদিকে ঠেলে দিয়ে হাসি মুখে বলে "সরি, আমি ভেজিটেরিয়ান!"
তাদের চেনার কোন উপায় থাকেনা। সমস্যা হয় তখন, যখন তাদের মধ্য থেকে কেউ-কেউ কোননা কোন ভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় চলে আসে। হাতে ক্ষমতা পেয়ে তারা তখন আরো বৃহৎ পরিসরে বিকৃত কর্ম-কাণ্ড চালাতে থাকে। শত-শত মানুষ হত্যা করেও নির্বিকারভাবে কথা বলে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র-ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও তেমনি একদল বিকৃত মানুষ চলে এসেছে। জনগণও তা বুঝতে পারছে। কিন্তু মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। তারা যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছে। প্রতিবাদ, আন্দোলন কোন কিছুই তাদেরকে দমাতে পারছেনা।
সুন্দর বন ধ্বংসের নীল-নকশা হল সেই ধারাবাহিক বিকৃত কর্মকাণ্ডের সর্বশেষ উদাহরন।
আশার কথা হচ্ছে, দল,মত নির্বিশেষে; সুন্দর-বন রক্ষার জন্য প্রতিবাদ হচ্ছে। লং-মার্চ হচ্ছে। আন্দোলন করার জন্যও প্রস্তুত হচ্ছে সচেতন জনগণ।
দূরাশার কথা হল, যতই প্রতিবাদ, লং-মার্চ এবং আন্দোলন হোক, কোন লাভ হবেনা। যথা সময়ে "রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র" উদ্বোধন হবে! এটাই চরম সত্য। কারণ, অসুস্থ মানষিকতার মানুষদেরকে কখনোই তার সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়ানো যায়না।
সুন্দর-বন রক্ষার উপায় সম্ভবত একটাই আছে। তা হল ক্ষমতার পরিবর্তন। অসুস্থ এবং বিকৃত মানষিকতার রুগীদের কে ক্ষমতা থেকে সড়ানো না গেলে তারা সুন্দর-বনকে ধ্বংস করবেই। তারপর, ক্রমে-ক্রমে দেশটাকেও!
(শাহজাহান আহমেদ)