হে সূর্য! শীতের সূর্য! হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়
আমরা থাকি
যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ
ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।
হে সূর্য, তুমি তো জানো,
আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!
সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে
এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,
কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!
সকালের এক টুকরো রোদ্দুর-
এক টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামি।
ঘর ছেড়ে আমরা এদিক ওদিকে যাই-
এক টুকরো রোদ্দুরের তৃষ্ণায়।
হে সূর্য!
তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
হে সূর্য!
তুমি আমাদের উত্তাপ দিও- শুনেছি, তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড,
তোমার কাছে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে
একদিন হয়তো আমরা প্রত্যেকেই,
এক একটা জ্বলমত অগ্নিপিন্ডে পরিণত হব! তারপর সেই উত্তাপে যখন পুড়বে আমাদের জড়তা,
তখন হয়তো গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারবো রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
আজ কিন্তু আমরা তোমার অকৃপণ উত্তাপের প্রার্থী।।
প্রচণ্ড শীতের রাত্রে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেল কিছু অসহায় ছিন্নমূল শিশু প্ল্যাটফর্মের ওপরে জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে। ছিন্ন বস্ত্র গায়ে দিয়ে তারা শীত নিবারণের বৃথা চেষ্টা করছে।প্রচণ্ড শীতে অসহায় মানুষের শীত নিবারণের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে সকালের রোদ্দুর। আশ্রয়হীন, বস্ত্রহীন, শীতার্ত মানুষ সারা রাত অপেক্ষা করে থাকে কখন সূর্য উঠবে আর কখন সে সূর্যের উত্তাপ পাবে। ভোরের সূর্যটি বস্ত্রহীন মানুষের কাছে সোনার চেয়েও মূল্যবান; মূলত এই বিষয় ফুটিয়ে তুলতেই কবি আকুতি করেছেন সূর্যের কাছে। প্রার্থী’ কবিতার শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
প্রার্থী’ কবিতায় দেখা যায়, শীতার্ত মানুষ প্রতীক্ষার প্রহর গুণে কখন সূর্য উঠবে। শীত নিবারণের জন্য তাদের বস্ত্র নেই। সারা রাত খড়কুটা জ্বালিয়ে এক টুকরা কাপড়ে কান ঢেকে শীত নিবারণের বৃথা চেষ্টায় তারা ব্যস্ত। সকালের এক টুকরা সোনা রোদ তাদের কাছে সোনার চেয়ে দামি বলে মনে হয়। মূলত, শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি উদ্দীপক ও ‘প্রার্থী’ কবিতায় বর্ণিত হয়েছে। প্রার্থী’ কবিতায় বর্ণিত দরিদ্র ও অসহায় শ্রেণির ভাগ্য উন্নয়নই ছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের উদ্দেশ্য।
উদ্দীপকে শীতার্ত শিশুদের রাত্রিযাপনের কথা বলা হয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিন্নমূল শিশুরা শীতের রাতে শীত বস্ত্রের অভাবে খুব কষ্ট সহ্য করছে। তাদের কোনো শীতবস্ত্র ছিল না। তাই তারা ছিন্ন বস্ত্র গায়ে দিয়ে শীত নিবারণের বৃথা চেষ্টা করছে। তেমনি ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য শীতার্ত মানুষের কথা বলেছেন। কবি সূর্যের কাছে উত্তাপ প্রার্থনা করেছেন সমাজের নিচুতলার মানুষের প্রতি গভীর মমতা থেকে। এসব মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নই ছিল তাঁর লক্ষ্য। নিম্নশ্রেণির এই মানুষদের কাছে শীত নিবারণের জন্য কোনো বস্ত্র নেই। তারা সামান্য খড়কুটা জ্বালিয়ে আর এক টুকরা কাপড় দিয়ে কান ঢেকে শীত নিবারণ করে। কবি সূর্যের কাছে তাদের জন্য উত্তাপ প্রার্থনা করেছেন। মূলত, সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘প্রার্থী’ কবিতায় নিম্নশ্রেণির মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের চেষ্টা করেছিলেন। উদ্দীপকেও শীতার্ত মানুষের চরম দুর্ভোগের কথা সমভাবে ফুটে উঠেছে।
সমাজে উঁচু ও নিম্ন শ্রেণির মানুুষের স্তরভেদ চিরদিনই বিদ্যমান। উঁচুতলার মানুষ যদি নিচতলার মানুষের কথা ভাবে, তাহলে সমাজে কোনো রূপ ভেদাভেদ থাকে না। সমাজের এই নিচতলার মানুষের দুর্গতির কথা উদ্দীপকে যেমন ফুটে উঠেছে ঠিক তেমনি ‘প্রার্থী’ কবিতায়ও আমরা এই দুর্গতিসম্পন্ন রাস্তার ধারের উলঙ্গ শিশুদের সন্ধান পাই। কবি এদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সূর্যের মতো সমাজের উঁচু শেণির মানুষকে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান করেছেন।
তাই বলা যায়, ‘প্রার্থী’ কবিতায় বর্ণিত শ্রেণির ভাগ্য উন্নয়নই ছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের উদ্দেশ্য।
অসহায় হতদরিদ্র মানুষের প্রতি কবির যে ভালবাসা তা সু-নিপুণভাবে ফুটে উঠেছে এই কবিতার মধ্যে দিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪০