৭ নভেম্বর আমেরিকার নির্বাচনে বারাক ওবামা দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় মিশেল ওবামাও দ্বিতীয় দফা ফার্স্ট লেডী হন।
‘ফার্স্ট লেডী’ কোন নির্বাচিত পদ না। এটা কোনো অফিসিয়াল দায়িত্বও নয় কিংবা তার কোনো বেতনও নেই। তবু সে অনেক অফিসিয়াল কর্মকাণ্ড বা অনুষ্ঠানে যোগ দেয় একা বা স্বামীর সাথে। হোয়াইট হাউজের ঘরকন্যারাই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডী। কারণ, ঐতিহ্যগতভাবে এই উপাধিটা প্রেসিডেন্টের সহধর্মিণীর জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রথম থেকেই প্রেসিডেন্ট পত্নীরা এ নামে সংবর্ধিত হত না। কি নামে ডাকা হবে এ নিয়ে কথা উঠলো। বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে ডাকলো। মিসেস প্রেসিডেন্ট, লেডী ইত্যাদি নামে। মারথা ওয়াশিংটন ঠিক করলেন ‘লেডী ওয়াশিংটন’ হিসেবে। এভাবে কাটল বহুদিন। তারপর ১৮৪৯ সালে ‘ডলি মেডিসন’ প্রথম ফার্স্ট লেডী শব্দের ব্যবহার করেন। আজ অবধি তাই আছে। এ পর্যন্ত ‘ফার্স্ট লেডী’ হয়েছেন মোট ৪৬ জন। এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন জর্জ ডব্লিউ বুশের পত্নী লরা বুশ, বিল ক্লিন্টন পত্নী হিলারি ক্লিন্টন, জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের পত্নী বারবারা বুশ, রোন্যাল্ড রিগ্যানের পত্নী নেন্সি রিগ্যান, জিমি কার্টারের পত্নী রোশলিন কার্টার এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পত্নী মিশেল ওবামা।
মিশেল ওবামা
মিশেল নাভান রবিনসন ওবামার জন্ম ১৭ জানুয়ারি, ১৯৬৪ সালে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পত্নী এবং প্রথম আফ্রো আমেরিকান ফার্স্ট লেডী। ওবামার সাথে তার বিয়ে হয় ১৯৯২ সালে। মালিয়া ও সাসা নামে তাদের দু’কন্যা সন্তান রয়েছে। পেশায় মিশেল একজন আইনজীবী। ধর্মীয় বিশ্বাস প্রোট্যাস্টান্ট ক্রিশ্চিয়ান। একজন সিনেটরের স্ত্রী এবং একজন ফার্স্ট লেডী হয়েও তার কাজগুলো নারীদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। পেশায় আইনজীবী হিসেবে তিনি মানুষকে দারিদ্র্যতা থেকে মুক্ত থাকার পরামর্শ দেন। সচেতন করেন পুষ্টি ও সুষম খাদ্যের বিষয়ে। রাজনীতি করেন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে। তার ২০০২ সালের প্রকাশিত আমেরিকান গ্রোন; দ্য স্টোরি অব দ্য হোয়াইট হাউজ কিচেন গার্ডেন এন্ড গার্ডেন এক্রোস আমেরিকা তার বাগান করার অভিজ্ঞতা এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের উপরই অনেকটা ভিত্তি করে।
বারবারা বুশ
তার জন্ম ১৯২৫ সালের ২৮ জুন,নিউইয়র্ক সিটিতে। তিনি ছিলেন ৪১তম প্রেসিডেন্ট জন এইচ ডব্লিউ বুশের স্ত্রী। ফার্স্ট লেডী ছিলেন ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত। তিনি আমেরিকার আরেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের এবং ফ্লোরিডার ৪৩তম গভর্নর বেব বুশের জননী। ফার্স্ট লেডী হওয়ার পর অনেকগুলো সামাজিক কাজে অংশ নেন। এর মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বেশ প্রশংসা পায়। শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘বারবারা বুশ ফাউন্ডেশন’। ক্রীড়ামোদী এই রমণী যৌবনে এথলেটিক ছিলেন। এছাড়া সাঁতার, টেনিস এবং বাইক রাইডিং তার অনেক পছন্দের বিষয়। তিনি ‘ইপিসকোপাল’ ধর্মীয় আদর্শের প্রতি বিশ্বাসী।
রোশেলিন কার্টার
ইলেনর রোশেলিন কার্টারের জন্ম ১৯২৭ সালের ১৮ আগস্ট। মাতা এলিএম পেশায় দর্জি। বাবা এগার স্মিথ ছিলেন কৃষক। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তের বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর তার মায়ের দর্জি কাজে সেও সাহায্য করতো। তার স্বামী প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সাথে তার বিয়ে হয় ১৯৪৬ সালে। এ দম্পতির চারটি সন্তান হয়। জ্যাক, চিফ, জিম আর এমি তাদের নাম। রাজনীতিতে তিনি ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে কাজ করেন। ধর্মীয় বিশ্বাসে ছিলেন ব্যাপটিস্ট। রোশেলিন কার্টার ফার্স্ট লেডী হন ১৯৮১ সালে। এ সময় তিনি অনেক সমাজ বিনির্মাণমূলক কাজ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন দ্যা চার্টার সেন্টার নামক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। তবে তার কাজের মধ্যে বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য। এছাড়া নারী আর শিশুদের জন্যেও তার করা কাজের অবদান অনেক বেশি।
ন্যান্সি ডেভিস রিগ্যান
১৯২১ সালের ৬ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন, নিউইয়র্ক সিটিতে। তার জন্মের পরই বাবা-মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে বড় হন। সেখানে থেকে অভিনয়ের সাথে সখ্যতা হয়। এবং পেশা হিসেবে বেছে নেন অভিনয়কে। ১৯৪০ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হলিউডে কাটে তার। অভিনয় করেন বেশকিছু চলচ্চিত্রে। ১৯৫২ সালে তিনি রোন্যাল্ড রিগ্যানকে বিয়ে করেন। তত্কালীন সময়ে যে ছিল ‘স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ডের’ প্রেসিডেন্ট। তাদের দু,সন্তান হয়েছিলো, নাম পেটি বেভিস এবং রন রিগ্যান। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে রিগ্যান প্রেসিডেন্ট হলে ন্যান্সি১৯৮৯ পর্যন্ত ফার্স্ট লেডী হিসেবে থাকেন। ন্যান্সি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ছিলেন। ফার্স্ট লেডী হওয়ার পর অনেকগুলো সমাজ গঠনের কাজ করেন। মাদক ও নেশার সচেতনতার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘জাস্ট সে নো’। ধর্মীয় বিশ্বাসে প্রিসবাইটেরিয়ান এই রমণী রাজনৈতিক আদর্শে ছিলেন স্বামীর সাথেই রিপাবলিকান হয়ে।
হিলারি রোডহাম ক্লিনটন
জন্মগ্রহণ করেন ২৬ অক্টোবর, ১৯৪৭ সালে। পেশায় হিলারি ছিলেন একজন আইনজীবী। ১৯৭৪ সালে তিনি আরাকানসাসে যান। সেখানেই তার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের সাথে সাক্ষাত্ হয়। ১৯৭৭ সালে ‘আরাকানসাস এডভোকেটস ফর চিলড্রেন এন্ড ফ্যামিলি’ প্রতিষ্ঠায় তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এবং ১৯৭৮ সালে ‘লিগ্যাল সার্ভিসেস কর্পোরেশনের প্রথম মহিলা প্রধান হন। ১৯৭৫ সালে তারা বিয়ে করেন। চেলসি নামে এ দম্পতির একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিলের স্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৯৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ফার্স্ট লেডী হিসেবে ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৬৪তম সেক্রেটারি হেসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যেটা ছিলো বারাক ওবামার প্রথম মেয়াদের সরকারের। এবং হিলারিই প্রথম কোন ফার্স্ট লেডী যে প্রেসিডেন্ট কেবিনেটে কাজ করেন। ১৯৬৮ সালে রিপাবলিকান পার্টির রাজনীতি করলেও পরবর্তীতে ডেমোক্রেটদের হয়েই রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এবং শেষ অবধি এর সাথেই আছেন। ধর্মীয়ভাবে এই লেডী হচ্ছেন মেথুডিস্ট।
লরা বুশ
জন্ম ৪ নভেম্বর, ১০৪৬। তিনি ১৯৬৮ সালে ‘সাউদার্ন মেথুডিস্ট ইউনিভার্সিটি’ থেকে শিক্ষার উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন, এরপর অনেক দিন শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন। শিক্ষকতা ছাড়াও পেশা হিসেবে তিনি ছিলেন একাধারে লেখক এবং লাইব্রেরিয়ান। তিনি ৪৩তম প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের স্ত্রী হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ‘ফার্স্ট লেডী’ হিসেবে ছিলেন। তার সাথে বুশের সাক্ষাত্ হয় ১৯৭৭ সালে। একই বছর তারা বিয়ে করেন। এ দম্পতির ১৯৮১ সালে যমজ দু’কন্যা হয়। কন্যাদের নাম বারবারা বুশ এবং জিনা বুশ। ফার্স্ট লেডী হওয়ার পর তিনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করেন। তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করেন। ২০০১ সালে চালু হওয়া ‘জাতীয় পুস্তক উত্সব’ শিক্ষাক্ষেত্রে তার অনেক বড় অবদান। এছাড়াও তার বিভিন্ন সফরে তিনি এইচ আইভি এইডস এবং ম্যালেরিয়া বিষয়ে সচেতনতা করেন। ২০১০-এর মে মাসে তার জীবনী বিষয়ক গ্রন্থ ‘স্পোকেন ফ্রম হার্ট’ প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিকভাবে তিনি রিপাবলিকান আর ধর্মীয় বিশ্বাসে মেথুডিস্ট।
তথ্যসূত্রঃ ইত্তেফাক
মূল লেখাটি এখানে
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন