কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার স্বভাবসুলভ বাংলাদেশবিরোধী একটি বায়বীয় সংবাদের ওপর মন্তব্য প্রদানকালে ক’দিন আগে আমাদের অতিকথনপ্রিয় বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেছেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা যতদিন পৃথিবীতে থাকবে, শেখ হাসিনার জীবন ততদিন নিরাপদ নয়।’ মন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যেই তার বিবেচনায় স্বাধীনতাবিরোধীদের ঝারে-বংশে নিধন করার ফ্যাসিস্ট মনোবৃত্তি প্রকাশিত হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত এই সামরিক কর্মকর্তার অতীত ঘাঁটলে দুঃখজনক খুন-খারাবির ইতিহাস হয়তো বের হয়ে আসতেও পারে। আমার আজকের মন্তব্য-প্রতিবেদন লেখার উদ্দেশ্য অবশ্য বাণিজ্যমন্ত্রীর অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি নয়। সেটি প্রয়োজনমত ভবিষ্যতের জন্য তোলা রইল। আমি ভাবছি, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কাদের আমরা স্বাধীনতাবিরোধী নামে অভিহিত করব? সময়ের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধীর সংজ্ঞা কেমন করে পরিবর্তিত হয়, সেটি বোঝার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে ফেরা যাক। মহাত্মা গান্ধীর ডাকে তখন ভারত ছাড় (quit india) আন্দোলন চলছে। এমন সময় অনাক্রমণ চুক্তি ভঙ্গ করে এডলফ হিটলার সমাজতন্ত্রের পীঠস্হান রাশিয়া আক্রমণ করলেন। আর যায় কোথায়!
ভারতীয় কমিউনিস্টরা সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়ে চরম অত্যাচারী, তৎকালীন ঔপনিবেশিক শক্তি যুক্তরাজ্যের পক্ষে অবস্হান গ্রহণ করলেন। কমিউনিস্ট নেতাদের যুক্তিতে যেহেতু জার্মানি মহামতি লেনিনের দেশ আক্রমণ করেছে, কাজেই ফ্যাসিবাদী জার্মানিকে যুদ্ধে পরাজিত করাই বিশ্বের তাবৎ কমিউনিস্টদের একমাত্র পবিত্র দায়িত্ব। এই কারণে কমিউনিস্টদের কাছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে গৌণ বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ও কিন্তু বামপন্হীদের একাংশের কাছে বিষয়টি ভারতের আধিপত্যবাদী আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হিসেবেই বিবেচিত হওয়ার কারণে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। যাই হোক, কমিউনিস্টরা যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পক্ষ নিয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত, সেই একই সময়ে নেতাজী সুভাষ বোস জার্মানি এবং জাপানের সহযোগিতায় আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেছেন এবং ভারতকে ঔপনিবেশিক শক্তির কবলমুক্ত করার জন্য ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বার্মার জঙ্গলে মরণপণ লড়াই শুরু করে দিয়েছেন। আজীবন চরম নেতাজী-বিদ্বেষী জওহরলাল নেহরুর তখনকার প্রেক্ষাপটে বিখ্যাত উক্তি ছিল, সুভাষ বোসকে আমি খোলা তলোয়ার নিয়ে অভ্যর্থনা জানাব। এই গর্হিত কাজটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে আর করতে হয়নি; কারণ সুভাষ বোস সম্ভবত বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালীন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক মতাদর্শের বিবেচনায় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নীতিনির্ধারকরা, নেতাজী সুভাষ বোস এবং পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর মধ্যে কাকে আজ ছয় দশক পর ভারতের স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে বিবেচিত করা হবে-সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার পাঠকের ওপরই সমর্পণ করলাম।
এবার নিজের দেশ নিয়ে আলোচনায় ফিরে আসি। আওয়ামী লীগ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী ইস্যুটিকে যথেষ্ট মুসিয়ানার সঙ্গে ব্যবহার করেছে। বিশেষত, নবীন ভোটারদের একটি বৃহৎ অংশ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের চরম নিন্দনীয় ঘটনার একতরফা প্রচারণায় সঙ্গত কারণেই প্রভাবিত হয়েছেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই আমার ধারণা। আমাদের অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম সেক্যুলার ভাবধারায় বিশ্বাসী হওয়ায় তারাও এবারের নির্বাচনে ১৯৭১ সালকে অন্যতম ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে মহাজোটকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে। নির্বাচন-পরবর্তী বিগত প্রায় চার মাসে একমাত্র মোটা চালের মুল্য কমানো ব্যতীত আর সবক্ষেত্রে ব্যর্থ সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বেগম খালেদা জিয়াকে তার ৩৭ বছরের গৃহ থেকে উচ্ছেদকে তাদের আপাতত অগ্রাধিকার সাব্যস্ত করেছে। আজকের লেখা স্বাধীনতাবিরোধী সম্পর্কিত হওয়ার কারণে বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাসস্হান নিয়ে শাসকরা যে নিচু মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন, সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত রইলাম। পাঠকরা সবাই জানেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যকার ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালীন সময়েই ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন করে অভিযুক্ত ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে ভারতের নিয়ন্ত্রণ থেকে পাকিস্তান কতৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। উল্লিখিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বরাতে উল্লেখ করা হয় যে, বাঙালিরা ঐতিহ্যগতভাবে ক্ষমাশীল হওয়ার কারণেই এই যুদ্ধাপরাধীদের পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা হলো।
বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন সেই বিতর্কিত চুক্তিতে সই করেছিলেন। অবশ্য পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় বিস্ময়করভাবে মরহুম শেখ মুজিব দাবি করেছিলেন যে, তিনি নাকি যুদ্ধ-পরবর্তী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোকে রাজনৈতিকভাবে সহায়তা করার জন্যই পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতার চমকিত করার মতো এই বক্তব্যের রহস্য উদঘাটন করতে পারছি না। যে ভুট্টো বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞের প্রধান উস্কানিদাতা, তার প্রতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতার এই সহমর্মিতার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা এত বছর পর সম্ভবত দুঃসাধ্য। তবে হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে আলাপকালে শেখ মুজিব ইঙ্গিত করেছিলেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাত থেকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নায়ক নিজেও রক্ষা পাননি এবং তার পাকিস্তানি বন্ধুকেও রক্ষা করতে পারেননি।
অ্যান্হনি মাসকারেনহাস তার ‘লিগ্যাসি অব ব্লাড’ গ্রন্হে বলেছেন, পাকিস্তানি কারাগার থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিলাভ করার পর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানে দু’নেতা সম্ভবত কিছু বিষয়ে একপ্রকার সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছিলেন। দু’জনের মধ্যে কেউই আজ জীবিত না থাকায় সেদিন তাদের মধ্যে প্রকৃত কি আলোচনা হয়েছিল, তা জানার আর কোনো উপায় নেই। তবে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেশি সাংবাদিক বন্ধু মি. অ্যান্হনি মাসকারেনহাসের বহুল আলোচিত গ্রন্হের সংশ্লিষ্ট অংশ থেকে উদ্ধৃতি দিলে আওয়ামী সমর্থকরা নিশ্চিতভাবেই যুগপৎ চরমভাবে বিব্রত এবং আমার ওপর ভয়ানক রুষ্ট হবেন। মি. মাসকারেনহাস বলছেন, ‘কেবল তাই নয়, তিনি অতি সংগোপনে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে একটি পরীক্ষামুলক সমঝোতায় আসার মনোভাব পোষণ করছিলেন, যার বদৌলতে পাকিস্তান ও সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের মধ্যে একটা যোগসুত্র সৃষ্টি করবে।’
আমি এই দুঃখজনক পরিকল্পনার ইঙ্গিত পেয়ে মর্মাহত হলাম। কারণ তা ছিল স্বাধীনচেতা বাংলাদেশীর মানসিকতার সম্পুর্ণ পরিপন্হী। ওই ইঙ্গিতটি শেখ মুজিবের ভাষায়, ‘তোমার জন্য একটা বিরাট খবর নিয়ে এসেছি। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটা যোগসুত্র রাখতে চাচ্ছি। তবে এর বেশি কিছু তোমাকে এখনই বলতে পারছি না। অন্যদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমাকে আলোচনা করে নিতে হবে। আর খোদার দোহাই, এ বিষয়ে তোমাকে বিস্তারিত বলার আগে কিছু লেখো না কিন্তু।’
স্পষ্টই, রাওয়ালপিন্ডির শহরতলিতে অবস্হিত একটি সরকারি রেষ্ট হাউসে মুজিব-ভুট্টো দীর্ঘ গোপন আলোচনাটি তাঁকে লন্ডন পাঠানোর পুর্বক্ষণেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই আলোচনাতেই পাকিস্তানের সঙ্গে ‘লিংক’ রক্ষার ব্যাপারে রাজি করানো হয়। আর এভাবেই চতুর ভুট্টো শেখ মুজিবকে প্রলুব্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নস্যাৎ করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। সঠিক ফর্মুলাটা কী, শেখ মুজিব আমাকে বলেননি। তথাপি আমি ভীত হয়ে পড়েছিলাম। আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি কি পাগল হয়েছেন? আপনি কি জানেন না, বাংলাদেশে কি ঘটে গেছে? এতকিছু ঘটে যাওয়ার পর আপনি যদি পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘লিংক’-এর ব্যাপারে আর একটি শব্দও উচ্চারণ করেন, আপনি বঙ্গবন্ধু হন আর যাই হন, জনগণ আপনাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলবে।’
শেখ মুজিব আমার কথার জবাব দিতে পারলেন না। ভারতীয় হাইকমিশনার বি. কে. নেহরুর উপস্হিতিতে আমাদের আলাপচারিতা ওই পর্যন্তই রয়ে গেল। তিনি তার সঙ্গে গোপন আলাপে বসতে চাইলেন। শেখ মুজিবের মগজ ধোলাই শুরু হয়ে গেল।
(বাংলাদেশ রক্তের ঋণ, অ্যান্হনি মাসকারেনহাস, পৃষ্ঠা-২০ এবং ২১) ভাগ্যিস, মি. মাসকারেনহাস একজন বিদেশি সাংবাদিক। বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে এজাতীয় স্মৃতিচারণ করলে বাকশালের ঠ্যাঙ্গারে বাহিনী এতদিনে নিশ্চিতভাবেই সেই হতভাগা সাংবাদিককে শুলে চড়িয়ে দিত।
১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের পরিচয় নিয়ে বিতর্কের তেমন একটা অবকাশ আমি অন্তত দেখি না। মুসলিম লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ ইসলামপন্হী দলই সে সময় যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্হান নিয়েছিল, এ তো এক ঐতিহাসিক সত্য। অবশ্য ইসলামপন্হীদের সঙ্গে বামপন্হীদের একাংশও সম্প্রসারণবাদী ভারতের সহায়তা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তা পুর্বেই উল্লেখ করেছি। উভয় গোষ্ঠীর তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্হান ইতিহাসের বিচারে একটি চরম ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর বর্তমান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তার দলীয় প্রধানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিধানের জন্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সব বিরোধিতাকারীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে সেটি তার বিবেচনা এবং অবশ্যই সরকারের কাজটি করার ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক নম্বর বিরোধিতাকারী দেশ সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান হোমড়া-চোমড়াদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর দল, তার সভানেত্রী এবং ব্যক্তিগতভাবে তার পরিবারের বেজায় খাতির। আমার ধারণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র-কন্যাদের প্রকৃত নাগরিকত্ব সম্পর্কে দেশবাসী এখন পর্যন্ত যথেষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যেই আছেন। তবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পুত্রবধু যে ভিন্ন ধর্মের একজন মার্কিন নাগরিক-এ তথ্য আমাদের জানা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিদ্যুৎ কোম্পানির সঙ্গে কর্নেল (অব.) ফারুক খানের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে একদা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম নস্যাৎ করার জন্য বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, সেই কাহিনী এখন স্মরণ করিয়ে দিলে বাণিজ্যমন্ত্রীর স্বাধীনতাবিরোধীদের দুনিয়াছাড়া করার হুঙ্কার নিমিষেই মার্জারের মিউ মিউ ধ্বনিতে পরিণত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর সঙ্গে যদি সাবেক মন্ত্রী এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য জনাব আবু সাইয়িদের ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, ফ্যাক্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টস’ নামক গ্রন্হ থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয় যে, আওয়ামী লীগ দলগতভাবে বিশ্বাস করে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ভুমিকা ছিল, তাহলে বাণিজ্যমন্ত্রীর সকল সহকর্মী লা-জওয়াব হতে বাধ্য হবেন। যা হোক, নব্য মার্কিন প্রেমে দিওয়ানা আওয়ামী লীগকে পুরনো কথা মনে করিয়ে দিয়ে আর বিব্রত করতে চাচ্ছি না, যদিও এই দলটি অতীতাশ্রয়ী রাজনীতি করতে মহাপারঙ্গম। আমার উদ্বেগের জায়গাটা হলো, বাংলাদেশের জনগণ কেবল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাবিরোধীদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বর্তমান সময়ের স্বাধীনতাবিরোধীদের কথা বেমালুম ভুলে থাকলে সেই বিস্মরণের সুযোগে স্বাধীন দেশটা না আবার হাতছাড়া হয়ে যায়! এখন যে গোষ্ঠী বাংলাদেশকে খন্ডবিখন্ড করে ভারতকে করিডোর উপহার দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে, চট্টগ্রাম বন্দর আঞ্চলিক পরাশক্তিকে উপহার দিতে চায়, জর্জ বুশের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’র ঘোষিত অনুগামী রূপে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রত, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে জঙ্গি অনুপ্রবেশের কল্পকাহিনী রটিয়ে বিদেশি দখলদারদের ডেকে আনতে চায় এবং আঞ্চলিক টাস্কফোর্সের নামে দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতে চায়, তারা কোনোদিনই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হতে পারে না। কর্নেল (অব.) ফারুক খান যে এই গোষ্ঠীরই একজন গুরুত্বপুর্ণ সদস্য, সেই সত্য তার মন্ত্রিত্বের প্রায় চার মাসে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। ১৫ কোটি মানুষের আবাসভুমি এই বাংলাদেশের সব যুগের তাবৎ স্বাধীনতাবিরোধীদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হলে বর্তমান শাসক শ্রেণীর মধ্যে কতজন পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবেন, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে প্রশ্নের জবাব খোঁজার জন্য মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে আজকের মন্তব্য-প্রতিবেদনে সমাপ্তি টানছি।
(সুত্র, আমার দেশ, ২৬/০৪/২০০৯)