রাজশাহীতে বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ আবদুল্লাহ আল মাসুম (২০) ও আবদুল্লাহ ওমর নাফিস শাহাদাত (২১) নামের দুই শিবির কর্মীকে আটকের পর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ রয়েছে। গত দু’দিনেও পুলিশ তাদের আদালতে সোপর্দ করেনি। তাদের কোথায় রাখা হয়েছে তাও পরিবারের সদস্যরা জানতে পারছেন না। ওই দুই পরিবারের সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন থানা, ডিবি অফিস ও র্যাব অফিসে খোঁজ নিতে গিয়ে ব্যর্থ হন। এ নামের কাউকে আটকের কথা রাজশাহীর পুলিশ স্বীকার করছে না। এতে পরিবারের সদস্যরা চরম উত্কণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
এদিকে কোথাও ছেলের খোঁজ না পেয়ে গতকাল মাসুমের মা মনোয়ারা বেগম রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ছেলেকে নিরপরাধ দাবি করে বলেন, গত বুধবার গভীর রাতে সাদা পোশাকধারী পুলিশ বাড়ি ঘেরাও করে তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আর তার কোনো খোঁজ নেই। রাজশাহীর পুলিশ ও র্যাব সদস্যরাও তার বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না।
মনোয়ারা বেগম ছেলের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি, তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে গুম করা হয়েছে। আমার ছেলে যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তবে তাকে আদালতের মাধ্যমে বিচার করা হোক বলে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি অবিলম্বে মাসুমকে আদালতে হাজির করার দাবি জানান।
আবদুল্লাহ আল মাসুম রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়া স্টেডিয়াম পশ্চিমপাড়ার মৃত দুলাল মাহমুদের ছেলে ও রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। অন্যদিকে আবদুল্লাহ ওমর নাফিস শাহাদাত ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে। তার বাবার নাম আখতারুজ্জামান মুন। তার পরিবারের সদস্যরা জানান, শাহাদাতকে বুধবার রাত ২টার দিকে একইভাবে সাদা পোশাকধারী পুলিশ আটক করে। এ সময় কোনো ওয়ারেন্ট দেখানো হয়নি এবং কী জন্য আটক করা হচ্ছে তাও জানানো হয়নি।
এদিকে গতকাল বিকালে শিবিরের সংবাদ সম্মেলনের কথা শোনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ প্রেসক্লাব ভবন ঘিরে রাখে। তবে ওই সংবাদ সম্মেলনে শিবিরের কোনো নেতাকর্মী উপস্থিত হননি। পরে বিকাল ৫টার দিকে মাসুমের মা মনোয়ারা বেগম সংবাদ সম্মেলন করেন।
আজ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অস্ত্রসহ এদের একজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে । তার নাম আব্দুল্লাহ ওমর নাসির ওরফে শাহাদত হোসেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার এসএম রফিকুল ইসলাম শনিবার দুপুরে জানান, শুক্রবার রাতে শাহাদতকে তার রাজশাহীর কাজলার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ভোরে তাকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সায়দাবাদে অস্ত্র উদ্ধারে। সেখানে দক্ষিণ সায়দাবাদের ৪৩/এ, নম্বর ৬ তলা বাসার দুই তলায় টিভি বাক্সের ভেতর থেকে ৯ এমএম বোরের একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। স্থানটি শিবিরের অফিস কাম মেস হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান. পুলিশ সেখান থেকে জামায়াত শিবিরের কয়েকটি সাংগঠনিক বই-খাতা উদ্ধার করে। তার একটিতে যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় জামায়াত নেতাদের আটকের পর সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় শিবিরের করণীয় সম্পর্কে লেখা রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:২৩