সত্যিকারের বস্তিবাসী দুই শিশু অভিনেতার বাস্তব জীবন আরো কঠিন হয়ে পড়েছিল। মনে হচ্ছিল, অস্কার না পেলেই ভালো হতো। [সেই কাহিনীই রিডার্স ডাইজেস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আসিফ হাসান]
এপ্রিলের এক সকাল। সকাল হলেও ভ্যাপসা গরমে টিকে থাকা দায়। আমি এখন মুম্বাইয়ের গরিব নগর বস্তিতে। ভারতের দরিদ্রদের মধ্যেও সবচেয়ে দরিদ্র কিছু লোকের ঠিকানা এই বস্তি। আমি ৮ ফুট বাই ১০ ফুট এক ছাপড়ার ভেতরে। কোনো চালা নেই, মাথার ওপর একটা হলুদ প্লাস্টিকের পর্দা। এক কোণে আবার বিশাল গর্ত। ঘরে আসবাবপত্র বলতে একটা ভাঙা টেলিভিশন, কয়েকটা ভাঙাচোড়া বাসনকোসন। কাপড়চোপড় সব প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা। আর আছে তিনটা বড় টিনের পট। পট তিনটির অবস্থা খারাপ, তবে খুবই দরকারি। এই ঘরের চার অধিবাসী অনেক সময় এতেই টয়লেট সারে।
আপনি কি কল্পনা করতে পারেন, মাত্র আট সপ্তাহে ৩৮০ মিলিয়ন ডলারের টিকিট বিক্রি হওয়া ব্লকবাস্টার অস্কারজয়ী মুভি স্লামডগ মিলিয়নিয়ারের এক নায়ক এখানে বসবাস করে? হ্যাঁ, এটাই ১০ বছর বয়সী আজহারউদ্দিন ইসমাইল শেখের বাসা। রাতারাতি সুপারস্টার বনে যাওয়া আজহার এখন বাস্তব জগতে একটা টি-শার্ট গায়ে চড়িয়ে স্যাঁতস্যাঁতে মাটির ওপর মাদুর পেতে বসে আছে। বলছে লস অ্যাঞ্জেলসে অস্কার পুরস্কার গ্রহণের আনন্দ আর প্রতিদিনকার কষ্টের কাহিনী। এখানে সে ঘুমাতেও পারে না, ইঁদুরগুলো তার পা কামড়ে যায়।
কথা বলার সময় সে লস অ্যাঞ্জেলসে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া তার সেই বাস্কেটবল আকারের ট্রফিটা ছুড়ছিল আর ধরছিল। তার সোনালি স্বপ্নের মতো এই ট্রফিটাতেও ফাটল ধরেছে।
মাত্র দুই মাস আগে ২২ ফেব্র“য়ারি ব্র্যাড পিট আর অ্যাঞ্জেলিনা জলির ভঙ্গিতে লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে হেঁটে আজহার চলচ্চিত্র বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছিল। স্লামডগ মিলিয়নিয়ার সেরা চলচ্চিত্রসহ আটটি অস্কার পেয়েছিল। তাই খুশির শেষ ছিল না।
আর এখন আজহার বলছে, ‘আমেরিকায় যে জিনিসটি আমার সবচেয়ে ভালো লাগত তা হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। তাই আমি ভারতে ফিরে কেঁদেছি। আমি অস্কার জিতলেও আমার বাড়ি আগের মতো রয়ে গেছে।’
এমনটা হলো কেন? সত্যিকারের কোনো পুরস্কার ছাড়া একটি শিশু কিভাবে আন্তর্জাতিক ব্লকবাস্টারের সাড়া জাগানো তারকায় পরিণত হলো কিভাবে? এখনো সে কেন বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্য একটি বস্তিতে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে? বিশ্বাসযোগ্য উত্তরের সন্ধান করতে গিয়ে আমি লোভাতুর হাত, স্থায়ী বৈষম্য, সুবিধাবাদ ও বিভ্রান্ত সদুদ্দেশ্যের এক জগতে উপনীত হলাম। আমি দেখলাম, বারবার, কতবার জানি না এবং তাদের মধ্যে মুভিটির মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার কামিয়ে নেয়ারাও রয়েছেন বলছেন, তারা আজহার ও স্লামডগ মিলিয়নিয়ার মুভির সহঅভিনেত্রী রুবিনা আলীর ভাগ্য পরিবর্তনের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। তারা প্রতিবারই বলছেন, তারা চান এই শিশু দু’টির ভাগ্য আগের চেয়ে ভালো হোক।
অবশেষে আমি কয়েক জনের সাাৎ পেলাম তাদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ প্রডিউসারও রয়েছেন তারা ঠিক কাজটিই করার চেষ্টা করছেন।
স্লামডগ মিলিয়নিয়ার যখন অস্কারের মনোনয়ন পায়, তখন পরিচালক ড্যানি বয়েল ঘোষণা করেছিলেন, আজহার ও ১০ বছর বয়সী আরেক বস্তিবাসী রুবিনা আলী যাতে পাশের নতুন ইংরেজি মিডিয়ামের স্কুলে যেতে পারে, তিনি তার একটা ব্যবস্থা করবেন। তিনি বলেছিলেন, শিশু দু’টির লেখাপড়ার জন্য তিনি জয় হো ট্রাস্ট নামের একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করবেন। তার পর অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের পরপরই লন্ডনের সবচেয়ে বিক্রীত সংবাদপত্র দি সান পত্রিকায় ছাপা হয়, ‘ভারত সরকার স্লামডগ মিলিয়নিয়ারের তারকাদের নতুন দামি ফ্যাট দিতে যাচ্ছে।’
শুনতে খুব ভালো শোনা গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, তাদের দুর্ভাগ্যের দিন বুঝি শেষ হলো। কিন্তু আসল গল্পের তখন মাত্র শুরু।
সেই সব প্রতিশ্রুতির দুই মাসেরও বেশি সময় পর এপ্রিলের রিডার্স ডাইজেস্টের ভারতীয় সংস্করণের কাভার স্টোরিতে প্রকাশ করা হয়, আজহার এখনো বস্তিবাসী, তার মাথার ওপর এখনো ছাদ নেই।
আমি যখন আজহারের বাড়িতে গেলাম, তার মা শামীম আমাকে বললেন, তিনি যখন অস্কারের জন্য ছেলের সাথে লস অ্যাঞ্জেলস যান, তখন অর্থ আর একটি সুন্দর বাড়ির ওয়াদা শুনতে শুনতে তার কান ঝালাপালা হয়ে গিয়েছিল। তিনি জানালেন, ‘সবাই বলছিল, আমি একটি বাড়ি পেতে যাচ্ছি, আর পড়াশোনা শেষ হলে ও (আজহার) পাবে ট্রাস্টের টাকা। কিন্তু এখন আমাদের মাথার ওপর ছাদ নেই। আমি যখন লস অ্যাঞ্জেলস গিয়েছিলাম, তখন ড্যানি বয়েলকে বলার চেষ্টা করেছি। তাকে উদ্বিগ্ন মনে হয়েছে। তার আশপাশের লোকজন আমাকে বলল, সেই কথা বলার সময় এখন নয়।’
এক চোখ দৃষ্টিহীন ও অপুষ্টিতে নুয়ে পড়া দেহ নিয়ে আজহারের মা একটু সহানুভূতি চাইলেন। তার ধারণা, আমি হয়তো বয়েলের কাছে তার অনুরোধ পৌঁছাতে পারব। তিনি বললেন, ‘এমনও তো হতে পারে, তিনি টাকাটা দিয়েছেন, কিন্তু এখানকার কেউ তা আটকিয়ে রেখেছে।’
আর আজহার তখনো প্রচণ্ড গরমে মশা আর ইঁদুরের উৎপাতে রাতে ঘুমাতে পারছিল না। তার চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা ছিল তার মনে যেকোনো সময় সরকারি বুলডোজার আবারো অবৈধ সেই বস্তিটি গুঁড়িয়ে দিতে পারে।
সাংবাদিকতা পেশাই আমাকে তিনটি মহাদেশের অনেক বস্তিতে নিয়ে গেছে। আমার দেখা বস্তিগুলোর মধ্যে মুম্বাইয়ের গরিব নগরই সবচেয়ে জঘন্য। আজহারের বাসায় যাওয়ার জন্য আমাকে ময়লা-আবর্জনা আর ড্রেনের পানির ওপর দিয়ে হাঁটতে হয়েছে। আমার সামনেই একটি লোক প্যান্টের চেন খুলে প্রস্রাব করে দিলো। কয়েক ফুট দূরে এক মহিলা মলত্যাগ করছিল।
একটু দূরেই রেল স্টেশনের পাশে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ ও বেশ কয়েকটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সদর দফতর। প্রতিদিন ধনী ও মতাবান মানুষ স্টেশন থেকে অভিজাত অফিসগুলোতে প্রবেশ করেন। তবে এসব অফিসে বা তাদের কর্তাদের কাছে এই বস্তি বা এখানকার দুর্গন্ধ পৌঁছায় না।
আজহার যেটাকে রান্নাঘর বলল, সেখানে দেখা গেল একটা গর্তের পাশে কয়েকটি ইটের ওপর রাখা একটা পাত্র, গোটা পাঁচেক মুরগি খেয়ালমতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজহার বলল, ‘প্রায়ই বিদ্যুৎ থাকে না। রাতে আমি খুব ঘামি। বৃষ্টিতে ওপর থেকে পানি পড়ে, জামাকাপড় সবকিছু ভিজিয়ে দেয়।’
স্লামডগের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর আজহার তার চাচার সাথে গিয়েছিল অভিনয় করতে। তাকে অভিনয়ের জন্য আগাম দুই হাজার ৪০০ ডলার দেয়া হয়েছিল। ছবিটি নির্মাণের সময় তাকে একটি বাড়ি দেয়ার ওয়াদা করা হয়েছিল। সে বলল, এখন আর সে টাকার কথা বলতে চায় না। সে তার হাত দু’টি চোখের ওপর রেখে আমাকে বোঝাল, আমি অনেক প্রশ্ন করেছি তাকে।
তখন দুপুরবেলা। এ সময় তার স্কুলে থাকার কথা। সে বলল, ‘কানে ব্যথা হয়েছে, তাই স্কুলে যাইনি।’
আজহারের বাসা থেকে বের হয়ে একটি ড্রেন ঘেঁষে তৈরি সিমেন্টের রাস্তা দিয়ে হেঁটে কয়েক মিনিট দূরে রুবিনাদের বাসায় গেলাম। সে স্কুলেই যায় না। পিতা রফিক কোরেশিকে নিয়ে বিজ্ঞাপনের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রুবিনার সৎমা মুন্নি জানালেন, চলচ্চিত্রকাররা তাদের শিশুর ট্রাস্ট অর্থ এখনই তাদের হাতে না দেয়ায় তারা নাখোশ। তিনি বললেন, ‘রুবিনা তার পুরনো স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। আর এখন তাকে ফের প্রথম শ্রেণীতে পাঠানো হয়েছে। সে নিচে নামছে। অস্কার থেকে ফিরে আসার পর সে স্কুলে যাচ্ছে না।’
মন্নির অগ্রাধিকার তালিকায় উচ্চতর শিার অবস্থানটি জেনে আমি অবাক হলাম। তার বাড়িতে অন্য তিনটি শিশুও আজ স্কুলে যায়নি।
তার ক্রুদ্ধ হওয়ার আসল কারণ হলো, তার ভাষায়, ‘চলচ্চিত্রটি তৈরি করার সময় তারা এই ট্রাস্ট ফান্ডের কথা বলেছে, তারা বলছে, রুবিনার বয়স যখন ১৮ হবে, তখন সে এই টাকা পাবে।’ তিনি বারবার বলছিলেন, কেন টাকা পাওয়ার জন্য পড়াশোনা শেষ করা পর্যন্ত অপো করতে হবে। এটা অন্যায়।
রুবিনার বাসা থেকে বের হওয়ামাত্র আজহারের পিতার দেখা পেলাম। দৌড়ে গেলাম তার কাছে। একটা পুরনো জিন্স আর একটা সাদা শার্ট পরা। পা খালি। যক্ষ্মা বাসা বেঁধেছে তার দেহে। আগে পুরনো কাঠ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। এখন একটু বেশি হাঁটা বা গাড়ি ঠেলার সামর্থ্যটুকুও নেই। এখন তিনি ছেলের বেসরকারি এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।
তিনিও জানতে চাইলেন, ‘আমরা কি আসলেও কোনো দিন টাকা পাবো? আমাদের নতুন বাড়িটি কোথায়?’
লস অ্যাঞ্জেলসে ফিরে আমি মুভি প্রস্তুতকারীদের কাছে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলাম। পরিচালক বয়েল দেখা বা কথা বলতেই চাইলেন না। টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স সার্চলাইটের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মুভিটির মার্কিন ডিস্ট্রিবিউটর পিটার রাইসও একই ব্যবহার করলেন। আমি ফক্সের মুখপাত্রদের পেছনে পেছনে ঘুরতে লাগলাম, কেউ পাত্তা দিতে চাইলেন না।
ফোন করে করে একটা পুরো সপ্তাহ পার করার পর স্লামডগ মিলিয়নিয়ারের প্রডিউসার ক্রিস্টিয়ান কলসন লন্ডন থেকে সাড়া দিলেন। তিনি যে বিষয়টি নিয়ে বিতৃষ্ণ তা সহজেই বোঝা গেল। বললেন, ‘আমি প্রডিউসার, কিন্তু আমাকে সমাজকর্মী হতে হচ্ছে। আমি এসব কিছু করার চুক্তি করিনি।’
কলসন জানালেন, মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলারের এই মুভিটি দুনিয়াজুড়ে সাড়া জাগাবে, এ কথা কেউ ভাবেনি। তাই মুভিটির সাফল্যের পর শিশু দু’টির ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা ভাবার অবকাশ ছিল কোথায়?
তার পরও তিনি জোর দিয়ে বললেন, মুভিটি বক্স অফিস হিট করার আগে তিনি আর বয়েল বস্তির শিশু দু’টির জন্য কিছু করার নৈতিক দায়িত্ব অনুভব করেছেন। তারা আজহার ও রুবিনাকে নতুন স্কুলে ভর্তি করিয়ে একটি তহবিলও গঠন করেছিলেন। মেয়াদপূর্তির পর তা এক লাখ ডলারে দাঁড়াবে। তারা চাইছিলেন, আজহার আর রুবিনা যাতে স্কুল কামাই না করে। এ জন্য তাদের মাসিক বৃত্তিও দেয়া হয়।
কলসন জানান, তাদের এই পরিকল্পনা কাজ করছিল। ২০০৮ সালের জুনে তারা স্কুলে ভর্তি হয় এবং ড্যানি ও তিনি জানুয়ারিতে তাদের দেখতে যান। শিশু দু’টি তখন ভালোই ছিল।
কিন্তু তারপরই ঘটল অন্য ঘটনা। মুভিটি দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পেলো। সবকিছু বদলে গেল।
বিজ্ঞাপন আর ফ্যাশন শোতে ডাক পেতে থাকল আজহার ও রুবিনা। কাঁচা টাকার লোভে তাদের পিতা-মাতাও এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিলেন না। ট্রাস্টের টাকা কিভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে ঝগড়া করতে লাগলেন তারা। এর পরই আরেকটি দুঃসংবাদ শোনা গেল। তাদের অ্যাপার্টমেন্ট দেয়া হচ্ছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটি ভিত্তিহীন বলে জানালো সরকারি মুখপাত্র।
মনে হচ্ছিল, এর চেয়ে খারাপ আর কিছুই ঘটবে না। কিন্তু ভয়াবহ আরো কিছু অপো করছিল। ঘটনাটি ঘটল নাটকীয়ভাবে। অস্কার পাওয়ার মাত্র সাত সপ্তাহ পর, ১৯ এপ্রিল রুবিনার পিতা গ্রেফতার হলেন মেয়েকে দুবাইয়ের শেখের কাছে তিন লাখ ৬৫ হাজার ডলারে বিক্রি করতে চাওয়ায়। লন্ডনের এক ট্যাবলয়েডের সাংবাদিক নিজেই শেখ সেজে গোপন ক্যামেরায় সেই দৃশ্য ধারণ করেছিলেন। তার পরও প্রমাণের অভাবে পুলিশ সব অভিযোগ প্রত্যাহার করেছিল।
তিন সপ্তাহ পর সরকারি বুলডোজার আজহারের বস্তি গুঁড়িয়ে দিলো। বস্তি ভাঙার সময় আজহার জানায়, এক পুলিশ তাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছিল। আগের আরো অনেকবারের মতো এবারো তারা ঘরটি বানিয়ে নিয়েছিল। ঘর বানাতে খুব বেশি কিছুর দরকার নেই। চাল হিসেবে এক টুকরা প্লাস্টিক, রান্নার জন্য কয়েকটা ইট, আর ঘুমানোর জন্য নোংরা মাদুর। এতেই চলে।
তলানিতে পড়ে যাওয়ার পর ভাগ্য ফিরল। রিডার্স ডাইজেস্টের ভারতীয় সংস্করণ, আজহারের ভিডিওচিত্র এনবিসি টিভিতে প্রচার এবং তার পরপরই বিভিন্ন পত্রিকায় শিশু দু’টি শিরোনাম হলো। বিপুল চাপের কারণে মুভি প্রস্তুতকারীরা মুম্বাই গিয়ে কিছু একটা করতে বাধ্য হলেন।
৫ জুন প্রডিউসার কলসন আমাকে সুসংবাদ দিলেন। জয় হো ট্রাস্ট আজহারকে সান্তাক্রুজ এলাকায় একটি ভালো অ্যাপার্টমেন্ট দিয়েছে। এতে পানি আছে, বিদ্যুৎ আছে, রান্নাঘর আছে, বাথরুম আছে।
প্রডিউসাররা আজহারকে আবার ১৩৫ ডলার করে মাসিক বৃত্তি দেয়া শুরু করলেন। শিশু দু’টির দেখভালের দায়িত্ব তাদের পিতা-মাতার ওপর না দিয়ে জয় হো ট্রাস্টকে দেয়া হলো। ১৮ বছর বয়সে শিশুরা অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা বুঝে পাবে। তবে তার আগ পর্যন্ত তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। ট্রাস্টের টাকাও তারা পাবে বিয়ে বা ব্যবসা শুরু করার সময়।
এই গল্পের এটাই কি সুন্দর সমাপ্তি? আজহারের জন্য তাই। গত জুনে আজহার তার পরিবার নিয়ে ৫০ হাজার ডলার মূল্যমানের নতুন অ্যাপার্টমেন্টে উঠে গেছে।
তবে রুবিনা তত সৌভাগ্যবতী নয়। তার পিতা গত জুনে তাদের নামে বরাদ্দকৃত অ্যাপার্টমেন্টটি গ্রহণ করেননি। এমনকি তিনি মাসিক বৃত্তির টাকাও নেননি।
কলসন জানান, রুবিনার পিতা চান, ট্রাস্টের কাছে নয়, সবকিছুর মালিকানা তাকে দিতে হবে। তিনিই সবকিছু করবেন। কিন্তু আমরা তাতে রাজি নই।
রুবিনার পিতা রিডার্স ডাইজেস্টকে বলেন, ট্রাস্ট আজহারের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে। অ্যাপার্টমেন্ট দেয়ার আগে তারা আজহারের পরিবারকে নিয়ে দেখিয়ে এনেছে। আর আমাকে রাখা হয়েছে অন্ধকারে।
তবে জয় হো ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য নিরজা মাতু জানান, রুবিনার পিতা বিলাসবহুল বান্দ্রা এলাকায় বাড়ি দেয়ার জন্য জোরাজুরি করছে।
কলসন জানান, বিষয়টা আমাদের জন্য সম্মানের। আমরা চাই, পাঁচ বছর পর শিশু দু’টি যাতে বলে, স্লামডগ মিলিয়নিয়ারে অভিনয় করে আমাদের জীবন ধ্বংস হয়নি, বরং উন্নতি হয়েছে। আমরা অবশ্যই তা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব।