স্রষ্টা অসীম ! বিশ্ব প্রকৃতি সৃষ্টি করে স্রষ্টা তার মাঝে মিশে আছেন । তাই আল্লাহ্পাক তার সৃষ্টির মাঝেই তাঁকে খোঁজতে বলেছেন । মানুষ সৃষ্টির সেরা এবং আল্লাহর প্রতিনিধি, তাই মানুষ নিয়ে চিন্তা করলেই আল্লাহকে জানা যাবে । আমরা আল্লাহকে দেখিনা, কিন্তু তার শক্তির প্রকাশ সর্বত্র উপলব্দি করি । আমরা ভাবতে পারি একমাত্র মহাশক্তি যদি ক্রিয়াশীল না থাকত তাহলে কারনের পেছনের সর্বশেষ কারন কি হত ? যেমন, মুরগী ডিম দেয়, আবার ডিম থেকেই মুরগী জন্মায় । তাহলে প্রথম হওয়ার কৃতিত্বটা কার, মুরগীর নাকি ডিমের ? নাকি মুরগী বা ডিমের স্রষ্টার ? অবশ্যই মুরগী বা ডিমের যিঁনি স্রষ্টা, যিঁনি এই নিয়মকে সৃষ্টি করেছেন তারই সকল কৃতিত্ব । যিঁনি বীজ থেকে অঙ্কুর, অঙ্কুর থেকে গাছ, গাছ তেকে ফুল, ফুল থেকে ফল এবং ফল থেকে বীজ সৃষ্টি করে একই প্রক্রিয়া চালু রেখেছেন অনবরত । বিভিন্ন প্রাণীর প্রজনন প্রক্রিয়াও একইরূপে চলমান । যেমন, গাভী থেকে বাছুর, বাছুর পরে গাভী, মাছ থেকে মাছ, যে প্রজাতী থেকে সেই প্রজাতীর সৃষ্টি । রাতের পরে দিন, দিনের পরে রাত, শীতের পরে গ্রীষ্ম, গ্রীষ্মের পরে শীত, সুখের পরে দুঃখ, দুঃখের পরে সুখ, জীবন থেকে জীবন, জীবন থেকে মৃত্যু, ভালর মাঝে মন্দ, মন্দের মাঝে ভাল, জীবন-মৃত্যু, বেহেশত-দোজখ, আলো-আঁধার, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, আস্তিক-নাস্তিক, বর্ণ ও বর্ণহীনতা ইত্যাদি যিঁনি সৃষ্টি করেছেন তিঁনিই সেই মহান আল্লাহ্ ! গ্রহ-নক্ষত্রের যে আন্তঃসম্পর্ক তা যিঁনি সৃষ্টি করেছেন তিঁনিই আল্লাহ ! প্রকৃতির সবকিছুইযে এক চিরন্তন নিয়মের অধীন সেই নিয়ম যিঁনি বেঁধে দিয়েছেন তিঁনিই আল্লাহ্ !
প্রশ্ন হতে পারে কেন আল্লাহকে দেখা যায়না ? তার উত্তরে বলা যায়, মানুষ সৃষ্টির সেরা হলেও সসীম । মানুষের সবকিছুর সীমা আছে । আমরা পাহারের অপর পাশই দেখিনা যদিও পাহার অসীম নয় । পাহার যত বড়ই হোক তার সীমা-পরিসীমা আছে । তাহাই দেখা সম্ভব হয়না । তাহলে যার কোন সীমা নেই তাঁকে দেখব কিভাবে ? তাঁকে দেখতে চাওয়াও বোকামী । আমরাতো প্রকাশ্য সূর্যের দিকেই তাকাতে পারিনা দৃষ্টিশক্তি ধ্বংশ হয়ে যাবে । আর অনন্ত কোটি সুর্য যাঁর থেকে শক্তিপ্রাপ্ত তাঁকে স্বচক্ষে দেখতে পাওয়া কিকরে সম্ভব ?
মানুষকে সৃষ্টির উৎকর্ষতায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে । তাকে নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি তথা ভাল-মন্দ ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে । যা সৃষ্টির অপর কাউকে প্রদান করা হয়নি । কেউ ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে পদক্ষেপ নিতে জানেনা । কারো দূরদর্শীতা নেই, যে দূরদর্শীতারবলে মানুষ কোন কিছু আগাম ধারনা করতে পারে । মানুষ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, অপর কোন প্রাণীর সেইরূপ ক্ষমতা নেই ।
পশু পশুত্ব নিয়ে জন্মায় এবং সারাজীবন পশুই থাকে । কিন্তু মানুষ মনুষ্যত্ম নিয়ে জন্মায়না তাকে মনুষ্যত্ম অর্জন করতে হয় । ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে অনেক প্রাণী আছে যারা জন্ম থেকেই আত্মনির্ভরশীল হয়, কিন্তু মানব শিশু তা পারেনা । মানুষ জন্ম হয় পরনির্ভরশীল হয়ে পরে সে আত্মনির্ভরতা অর্জন করে । সকল প্রাণী আহার করে, বিশ্রাম করে, ভোগ করে, যৌন তারনা অনুভব করে, ক্ষুধার তীব্রতা বুঝতে পারে, মানুষও এসব পারে । মানুষ আরো অনেক কিছু পারে যা অপর কোন সৃষ্টি পারেনা । এমনকি ফেরেশতারাওনা । সেই মানুষই যদি স্রষ্টাকে নিয়ে না ভাবে, স্রষ্টাকে না চিনে, তার আনুগত্য না করে, তাহলে কি সেইসব ইতরপ্রাণীর দ্বারা তা সম্ভব ?