তিনি এখন নেই।কিন্তু যখন তিনি ছিলেন তখন আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটা জুড়ে ছিলেন।আমি সারা জীবন তার অত্যন্ত আদর ও ভালবাসা পেয়েছি।তার সৎ চরিত্র, সুন্দর ব্যবহার ও ধার্মিকতার জন্য তিনি সকলের নিকট প্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য মানুষ ছিলেন।তিনি ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী।যিনি বন্ধুর মতো সব সময় আমার পাশে ছিলেন।শিক্ষকের মতো শিক্ষা দিতেন। এবং অভিভাবকের মতো লালন পালন করেছেন।তার ঋণ কোন দিনই শোধ করতে পারব না। এই মাননীয় ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি হলেন আমার নানা।
যখন ছোট ছিলাম তখন বাবা-মায়ের কাছ থেকে খুব বেশি আদর-যত্ন পাইনি।কারণ,বাবা চাকুরীক্ষেত্রে দূরে থাকতেন।আর মা গৃহের কাজে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতেন। তাই তিনিও আমাদের খুব বেশি সময় দিতে পারতেন না। শিশুকাল থেকেই নানা আমাদের কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন।আদর যত্ন করে বড় করেছেন।তিনি প্রতিদিন আমাদের দেখতে আমাদের দাদার বাড়ি চলে আসতেন।আর আমাদেরকে নিয়ে তার বাড়িতে চলে যেতেন।আমাদেরকে একদিন না দেখে তিনি থাকতেই পারতেন না।যখন বিদ্যালয়ে পড়তাম তখন প্রতিদিন আমার জন্য টিফিন নিয়ে যেতেন।আমাদেরকে নানান জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতেন এবং পছন্দমত খেলনা ও পোশাক কিনে দিতেন।রাতে গল্প বলতে বলতে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন।সকল আত্মীয় স্বজন আমাদের ভালোবাসলেও নানার মতো কেউই ভালবাসত না।মনের গভীর থেকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতেন।
কিন্তু যখন আমি পঞ্চম শ্রেণিতে উঠলাম, তখন আমরা সপরিবারে আব্বুর চাকুরীস্থলে চলে আসলাম।নানা আমাদের জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন।আর সব সময় বলতেন গ্রামের বাড়ি চলে আসতে।কিন্তু পড়ালেখার স্বার্থে সেটা আর সম্ভব হল না।গ্রামের বাড়ি অনেক দূরে ছিল তাই বছরে একবারের বেশি যাওয়া হত না। এভাবে দু বছর কেটে গেল।নানা অসুস্থ হয়ে পড়লেন।এভাবে কয়েক বছর অসুস্থই থাকলেন।কিন্তু দূরে থাকায় আমরা তার সেবা যত্ন করার কোনো সুযোগ পেলাম না।
আমার এইচ.এস.সি পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ একদিন শুনলাম তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন।তারপর থেকে বিছানা ছেড়ে আর উঠতে পারেন নি।এক দুঃখজনক রাতে শুনলাম তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।তারপর বুঝলাম,আমি পুরো নিস্তব্ধ হয়ে গেছি।মুখ দিয়ে একটি শব্দ ও বের হলো না।রাতটা এভাবেই কেটে গেল। পরদিন সকালে সবাই অনেক বুঝিয়ে পরীক্ষা দিতে পাঠাল।পরীক্ষার জন্য তাকে শেষ বারের জন্য ও দেখতে পারলাম না।তার দাফন হয়ে গেল।মনের মধ্যে সব সময় প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনা অনুভব করছি।আর আফশোশ করে যাচ্ছি তার জন্য কিছুই করতে পারি নি।এখন শুধু আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা করি, নানার পরকাল যেন অতি সুখের সাথে অতিবাহিত হয়। আর প্রত্যাশা করি যেন সকলের নানা যেন আমার নানার মত ভাল মানুষ হয়।
ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৮