১২ই রবিউল আউয়াল মিলাদুন্নবী নাকি ওফাতুন্নবী? তার জবাব নিচের আলোচনায় পাবেন ইন শা আল্লাহ।
☞ তর্কের কাতিরে ধরে নিলাম ১২ই রবিউল আওয়াল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত করেছেন। তাহলেএই দিনে খুশি উদযাপন করা যাবে কি? আসুন জেনে নিই।
ইসলাম ধর্মে শোক দিবস পালন করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
امرنا ان لا نحد علي ميت فوق ثلاث الا لزوج
অর্থ : আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা যেনো কারো ইন্তেকালে তিন দিন পর আর শোক প্রকাশ না করি। তবে স্বামীর জন্য স্ত্রী চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারবে।"
[বুখারী শরীফ; মুসলিম শরীফ; মুয়াত্তা মালিক শরীফ; আবু দাউদ শরীফ; নাসায়ী শরীফ; তিরমিযী শরীফ; ইবনে মাজাহ শরীফ; দারেমী শরীফ; মিশকাত শরীফ]
অতএব, শরীয়তের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমান হলো কারো পক্ষে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার বিছাল শরীফ এর দিন ১২ই রবীউল আওয়াল শরীফকে শোকের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়!!
☞ মুমিন/আল্লাহ-ওয়ালা ব্যক্তির জন্য মৃত্যু দুঃখের বা শোকের কারণ নয়। বরঞ্চ এটাই তাদের জন্য উত্তম প্রাপ্য। তাদের জন্যই জান্নাত সজ্জিত হয়ে অপেক্ষা করছে। আর পাপিষ্ঠ-গোনাহগার-আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তির জন্য মৃত্যু দুঃখের বা শোকের কারণ। কারণ এর পর তাদের আমল বা তওবা করার কোন সুযোগ থাকেনা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিলাদাত শরীফ এবং বিছাল শরীফ উভয়ই সৃষ্টিকুলের জন্য কল্যাণকর। তার প্রমাণ নিম্নরুপঃ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
-"আমার হায়াত-বিছাল (ইন্তেকাল) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ বা উত্তম বা খায়ের বরকতের কারন !"
[কানযুল উম্মাল শরীফ; শিফা শরীফ ২য় খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা]
-"তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে, জুমুয়ার দিন। এদিনে আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এদিনেই তিনি বিছাল বা ইন্তেকাল লাভ করেন!"
[সহীহ নাসায়ী শরীফ -জুমুয়ার অধ্যায়]
অতপর এই জুমুয়ার দিন ঈদের দিনকেই ঘোষনা করে ইরশাদ হয়-
"এ জুমুয়ার দিন হচ্ছে এমন একটি দিন, যেদিনকে আল্লাহ পাক ঈদের দিন সাব্যস্ত করেছেন!"
[সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ; মুসনাদে আহমদ শরীফ; মিশকাত শরীফ - জুমুয়ার অধ্যায়]
আল্লাহ পাক পবিত্র কুর’আন-এ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে ইরশাদ করেন,
"উনার প্রতি সালাম (শান্তি), যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত হবেন!"
[সূরা মারইয়ম ১৫]
অনুরুপ হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেটা তিনি নিজেই বলেন-
"আমার প্রতি সালাম বা শান্তি যেদিন আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি, যেদিন আমি বিছাল শরীফ লাভ করি, যেদিন পুনুরুত্থিত হবো!"
[সূরা মারইয়াম ৩৩]
☞ নবী আলাইহিস সালাম গণ আমাদের থেকে পর্দা করছেন মাত্র। উনারা উনাদের রওজা মোবারকে বিশ্রাম করছেন এবং আল্লাহর রিজিক প্রাপ্ত হচ্ছেন। উনারা রওজায় আল্লাহর জিকির এবং নামাজ দ্বারা ইবাদাত এ মসগুল থাকেন। আর তাই নবীদের জন্য ওফাত না বলে বিছাল হয়েছেন বলাটা উত্তম শব্দ।
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
"নবীরা কবরে জীবিত। আর তারা সেখানে নামায পড়েন।"
[মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৮৮৮, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫, সহীহ কুনুযুস সুন্নাতির নববিয়্যাহ, হাদীস নং-২২]
নবীগণ জীবিত ও তাঁদেরকে রিযিক দেওয়া হচ্ছে এ ব্যাপারে আরও হাদীস দেখুনঃ মিশকাত শরীফ ৮৬,পৃঃ মিশকাত শরীফ ৮৭,পৃ মিশকাত শরীফ ৫১০ পৃঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) (বায়হাকী), মিশকাত শরীফ ১২০ পৃঃ হযরত আউস ইবনে আউন (রাঃ) (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ১১৯ পৃঃ, দারেমী, বায়হাকী), মিশকাত শরীফ ১২১ পৃঃ আবু দারদাহ (রাঃ) (ইবনে মাজাহ), ৩৩০ পৃঃ হযরত মাসরুক (রাঃ) (মুসলিম শরীফ), তিরমিযী শরীফ ২য় খন্ড ১২৩ পৃষ্ঠা।
ফিরিস্তাগণ আর শহীদগণের অনেক উপরে নবীগণের মর্যাদা। অর্থাৎ সৃষ্টিকুলের মধ্যে প্রথম কাতারে। আর রাহমাতুল্লিল আলামিনতো সর্বাগ্রে।
অতএব ১২ই রবিউল আওয়ালকে শকের/দুঃখের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করার কোন উপায় থাকলো না।
১২ই রাবিউল আওয়াল কি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হ্যাঁ হাদীসের আলোকে ১২ই রবিউল আওয়াল ই মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তাহলে এ দিন অর্থাৎ ১২ই রবিউল আওয়াল ঈদ-ই মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালনে কোন বাঁধা থাকলো না।
☞ আল্লাহু রাব্বুল আলামিন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাকি সমগ্র সৃষ্টিকূলের জন্য কল্যাণ এবং রহমত করেই প্রেরন করেছেন।
যেমন আল্লাহ তা'আলা কুরআন হাকীমে উল্লেখ করেন,
"নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রত্যেক কল্যাণ ও মর্যাদায় সীমাহীন আধিক্য দান করেছি।"
{সূরা কাওসার}
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন,
"(হে হাবীব!) আমিতো আপনাকে তামাম জাহানের জন্য রহমত করেই প্রেরণ করেছি।" {সূরা আম্বিয়া}
আবার আল্লাহর ই নির্দেশঃ
""হে রাসুল! আপনি বলুন আল্লাহর "দয়া" ও "রহমত" কে কেন্দ্র করে তারা যেন আনন্দ করে এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও শ্রেষ্ট"। {সুরা ঈউনূছ}
উক্ত আয়াতের তাফসীরে( رَحْمَتِهِ ) “রহমত” দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে।
এর পরেও যারা হিংসা পরায়ণ হয়ে ঈদ-ই মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরোধিতা করবে তাদের খেদমতে বলি-
☞ ইবলিশ শয়তান ৪টি সময় খুব বেশি কেঁদেছে বা আফসোস/হা-হুতাশ করেছে।
أن إبليس رن أربع رنات حين لعن وحين أهبط وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم وحين أنزلت الفاتحة
১. আল্লাহ যখন তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা দিলেন,
২. যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত করা হল,
৩. নূর নবীজীর ﷺُ দুনিয়াতে আগমনের সময় এবং
৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হবার সময়
[সূত্রঃ ইবন কাসির, আল আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা - ১৬৬]
☞ বুখারী শরীফের ব্যাখাকার বিশ্ববিখ্যাত মোহাদ্দিস আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি (মৃত্যুঃ ৯২৩ হিজরী) বলেন-
“যে ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভাগমনের মোবারক মাসের রাতসমূহকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তার উপরে রহমত বর্ষণ করেন। আর উক্ত রাত্রকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করবে এ জন্য যে, যাদের অন্তরে নবী বিদ্বেষী রোগ রয়েছে। তাদের ঐ রোগ যেন আরো শক্ত আকার ধারণ করে এবং যন্ত্রণায় অন্তর জ্বলে পুড়ে যায়”।
[শরহে জুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৬২]
"জিকরে মিলাদুন্নবী কারতে রাহোঙ্গা উমরভর,
জ্বলতে রাহো নজদীও,
জ্বলনা তোমহারা কাম হ্যায়!"
----আ'লা হযরত(রাহ)
সৌজন্যেঃ আসুন সৎকর্মের প্রতিযোগিতা করি