পর্ব-১: “ঈদের সংজ্ঞা ও ঈদ কি শুধু দুটিই??
পর্ব-২: আল-কুর'আনের আলোকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৩: আল-হাদীসের আলোকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৪: খোলাফায়ে রাশেদীন (রাঃ) এর মতে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৫: প্রখ্যাত আলেমগণের দৃষ্টিতে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৬: মক্কা-মদীনা শারীফে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৭: বর্তমানে যারা পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরোধীতা করেন তাদের অতীত আলেমদের মন্তব্য
-------------------------------------------------------------------
#মৌলভী শামছুল হক ফরিদপুরী (ছদর ছাহেব)’র দৃষ্টিতে মীলাদ ও কিয়াম মুস্তাহাবঃ
মৌলভী শামছুল হক ফরিদপুরী যাকে মুজাহিদে আযম, বাহরুল উলুম হিসেবে কিয়াম বিরোধীরা এক বাক্যে স্বীকার করেন । তিনি একদিকে মৌলভী আশরাফ আলী থানবীর অন্যতম খলিফা, অন্যদিকে একাধারে ১৮ বছর পর্যন্ত জামাতে ইসলামীকে নৈতিকভাবে সমর্থন করে আসছিলেন । পরবর্তীতে তিনি জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর লিখিত ‘খেলাফত ও মুলুকিয়ত’ বইখানা পড়ে অবাক হয়ে যান । সাথে সাথে তিনি বললেন- অত্র বই খ্রীস্টান পাদ্রীদের ইসলাম বিরোধীদের মূল গ্রন্থ সমূহেরই বহিঃপ্রকাশ । মওদুদীর উক্ত বইয়ে হযরত ওসমান যুন নূরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সহ নবীর সাহাবীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা দোষারোপ, অপবাদ ও সমালোচনার সমাহার । ‘খেলাফত ও মুলুকিয়াত’ বইটির প্রণেতা মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদার প্রতিবাদে তিনি “ভুল সংশোধন” নামক একটি পুস্তক প্রকাশ করেন । তাছাড়া তিনি অনেক বই পুস্তিকা রচনা করেছেন, তন্মধ্যে “তাছাউফ তত্ত্ব” পুস্তকটি সর্বসাধারণের নিকট সমাদৃত । উক্ত পুস্তকটির প্রথম অধ্যায়ে প্রশ্নোত্তর আকারে সর্বমোট ৭টি প্রশ্নের মধ্যে ৬ষ্ঠ তম প্রশ্নটি “মৌলুদ শরীফ ও কিয়াম” সম্পর্কিত । যেখানে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন- অধিকহারে যিকরে রাসুলের মাহফিল আয়োজন করা এবং তথায় কিয়াম করা উত্তম আদব; আর এর বিপরীতে বেআদবী বলে ফতোয়া দিয়েছেন । নিম্নে তার ফতোয়া প্রশ্নাকারে প্রদত্ত হলো---
প্রশ্নঃ মৌলুদ শরীফ পড়া নিয়ে এবং মৌলুদ শরীফ পড়ার মধ্যে কিয়াম করা নিয়া অনেক মতবিরোধ; এমন কি অনেক দলাদলি-বলাবলি পর্যন্ত হইতেছে । এ ব্যাপারে আসল জিনিসটা কি ? সে সেম্পর্কে আপনার ইলমের তাহকীক অনুযায়ী আপনার মতামত কি ? জানাইয়া আমাদিগকে সুখী করিবেন । আশা করি ইহাতে সমাজের গন্ডগোল বা ভুল বুঝাবুঝি দূর হইবে ।
উত্তরঃ কুপ্রথা বড়ই খারাপ জিনিস, সুপ্রথা ভাল জিনিস । কুপ্রথা অর্থ খারাপ রসম । সুপ্রথা হল ভাল প্রথা, ভাল রসম । ব্যাপক রীতিকে প্রথা বলে । প্রথা ও রসম এবং সুন্নাত ও শরীয়তের মধ্যে পার্থক্য এই যে, প্রথা ও রসমের মূলে কোন সত্য ও হাকীকত থাকে না, কিন্তু সুন্নাত ও শরীয়তের মূলে সত্য ও হাক্বীকত আছে । অবশ্য সকলের হয়ত এ সত্যটি এবং হাকীকতটি জানা নাও থাকতে পারে । তদ্রুপ জানা না থাকিলে জানিয়া লওয়া উচিত এবং যেটা শুধু রসম ও কুপ্রথা, যাহার মূলে কোন সত্য বা হাকীকত নেই, সেটাকে পরিত্যাগ করা উচিত ।
মৌলুদ শরীফ সম্পর্কে তিনটি শব্দ ব্যাবহার হইয়া থাকে মৌলুদ শরীফ, মীলাদ শরীফ এবং মাওলীদ শরীফ । ‘মৌলূদ’ অর্থ বাচ্চা, যে বাচ্চা সদ্য জন্মগ্রহণ করিয়াছে । যখন ইহার সঙ্গে সম্মানের জন্য ‘শরীফ’ শব্দ যোগ করা হয় তখন অর্থ হয় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । ‘মীলাদ’ শব্দের অর্থ জন্মের সময় এবং ‘মাওলীদ’ শব্দের অর্থ জন্মের স্থান । সাধারণতঃ সম্মানিত বাচ্চা বলতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামাকে বুঝি, সেইজন্য মৌলুদ শরীফের বয়ান শুনিতে আমরা ভালবাসি । কারণ হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়া গিয়াছেন---
“মাতা-পিতা হইতে, ছেলে মেয়ে হইতে সমস্ত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমস্ত মানুষ হইতে তোমরা যে যাবত আমাকে অধিক ভাল না বাসিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কেহই পূর্ণ মু’মিন হইতে পারিবে না” । (মুসলিম শরীফ)
সর্বাপেক্ষা বেশী যখন ভালবাসিতে হইবে, এটা যখন ফরয, তখন সর্বাপেক্ষা বেশী তাহার এবং দানরাশি স্মরণ করিতে হইবে । তাহার গুণাবলী মহৎ চরিত্রাবলী আলোচনা করিতে হইবে । তাহার জীবনী তাহার জীবনের কীর্তি ও কার্যাবলী পড়িতে হইবে । যেমন আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলিয়াছেন---
অর্থাৎ “হে মুমিনগণ ! তোমারা অনেক বেশী করিয়া আল্লাহকে স্মরণ কর” ।
আল্লাহর যিকির খুব বেশি করিয়া কর । এই আদেশের কারণেই যিকরুল্লাহ্র মজলিস হইয়া থাকে এবং একা একা ও যথাসম্ভব প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তিই আল্লাহর যিকির যে যত বেশী পারে করিয়া থাকে, এইরুপে “যিকিরে রাসূল” ও খুব বেশি করিয়া করা দরকার । এই জন্যই যাহারা খাটি আলিম তালিবে ইলম এবং খাটি আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গ তাহারা সব সময়ই দরুদ শরীফ পড়িতে থাকেন । হাদীস শরীফ পড়িতে, পড়াইতে এবং মুতালিয়া করিতে থাকেন । কারণ হাদীসের কিতাব সবই হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী ও জীবনের কার্যাবলীর বর্ণনা । মৌলুদ শরীফের আসল উদ্দেশ্য হযরত রাসুলুল্লাহকে তাহার গুণাবলী কার্যাবলীকে সর্বাধিক স্মরণ করা, সেই কাজের তাহারা অধিকাংশ সময় লিপ্ত থাকেন । হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বাধিক মুহাব্বত করা এবং তা’যীম করা ফরয ।
বাকী রহিল কিয়ামের কথা । কিয়াম জিনিসটা আসলে ফিকহের অন্তর্ভুক্ত নহে । ইহা তাছাউফের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ মুহাব্বত বাড়ানোর উদ্দেশ্যে হযরত রাসুলুল্লাহর তারিফের ক্বাসিদা(প্রশংসামূলক কবিতা) পড়া হয় । তাহা দ্বারা মুহাব্বত বাড়ে এবং লোক মুহাব্বতের জোশে খাড়া হইয়া যায় । মুহাব্বতের জোশে খাড়া হইলে ইহাকে বিদআত বলা যায় না । তাছাড়া হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম করার সময় বসিয়া বসিয়া সালাম করা শরীফ তবীয়তের লোকের কাছে বড়ই বেয়াদপী লাগে । সেই জন্য রওযা শরীফের সামনে নিজেকে হাযির ধ্যান করিয়া খাড়া হইয়া সালাম করাতে কোনই দোষ হইতে পারে না । যেমন মদীনা শরীফের রওযা শরীফের সামনে সালাম করার সময় সকলেই দাড়াইয়া সালাম করিয়া থাকেন । অবশ্য কিয়ামকে শরীয়তের হুকুম মনে করা অর্থাৎ হযরত রাসুলুল্লাহর হুকুম মনে করা অত্যন্ত সাংঘাতিক গুণাহ, অন্যায় এবং বিদআত । হযরত রাসুলুল্লাহ কখনো তাহার নিজের জন্য এমন হুকুম তাহার জীবিতাবস্তায় দেন নাই । তরীকতের মজলিসে সেই রুপ যদি এক জনের হাল গালিব হইয়া দাড়াইয়া পড়ে; তবে তরীকতের অনুসারে সকলেরই দাড়াইয়া যাওয়া উচিত । এই রুপ যিকিরে রাসুলের মজলিসেও মুহাব্বতের জোশে একজন দাড়াইয়া গেলে সকলেরই দাড়াইয়া যাওয়া উচিত । অর্থাৎ ইহা একটি উত্তম আদব । ইহার বিপরীতে বেয়াদবি । মোট কথা এই যে, আল্লাহর ও রাসুলের মুহাব্বত বাড়াইতে হইবে । সে জন্যে যিকরুল্লাহর মজলিসের, যিকরে রাসুলের মজলিসের সংখ্যা ও পরিমাণ যত বাড়ানো যাইবে ততই ইহ-পরকালের মঙ্গল হইবে । খবরদার ! কেহ বেয়াদবীর মধ্যে পতিত হইয়া নিজের রুহানী ক্ষতির মধ্যে ও পার্থিব ক্ষতির মধ্যে পড়িবেন না । (তাছাউফ তত্ত্ব, কৃতঃ মৌলভী শামসুল হক ফরিদপুরী, ৩৯-৪২ পৃষ্ঠা)
দৃষ্টি আকর্ষণঃ
মৌলভী শামসুল হক ফরিদপুরী মীলাদ শরীফ উদযাপন এবং তথায় কিয়াম করাকে শুধু বৈধ ফতোয়া দিয়ে দায়ভার সারেন্নি, বরং তা আমলেও রুপদান করেছেন । এমনকি তিনি মীলাদ অনুষ্ঠানে হুযুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার শানে বিভিন্ন প্রশংসামূলক হামদ, নাত ও কবিতা আবৃত্তি করতে করতে এক পর্যায়ে নবী পাকের তা’যীম বা সম্মানার্থে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রচলিত মীলাদের কিয়ামও করতেন ।
তিনি ফতোয়া দিয়েছেন, এহেন মীলাদের অনুষ্ঠানে কোন একজন লোকও যদি রাসুলের মুহাব্বতে দাড়িয়া যায়; তবে উপস্থিত সকলের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাতু-সালাম পাঠ করা আবশ্যক । আর কেহ একঘুয়েমী বশতঃ না দাড়ালে সে বেয়াদব । স্মরণ রাখা দরকার ! সাধারণ লোকের সাথে বেয়াদবী আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হওয়ার অন্যতম কারণ । আর ইমামূল আম্বিয়া, রাহমাতুল্লিল আলামীনের সাথে বেয়াদবী কুফরীর নামান্তর । ফলে জীবনে অর্জিত সমস্ত নেক আমলগুলো বিনষ্টের মাধ্যমে কুফরী হালাতে মারা যাবে, তা শরীয়তের ফয়সালা । তাই শামছুল হক ফরিদপুরী কিয়াম বিরোধীদের জন্য সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন- “খবরদার ! কেহ বেয়াদবীর মাধ্যমে পতিত হইয়া নিজের রুহানী ক্ষতির মধ্যে ও পার্থিব ক্ষতির মধ্যে পড়িবেন না” ।
পরিতাপের বিষয় মৌলভী শামছুল হক ফরিদপুরীর মৃত্যুর পর নিজের গড়া “জামেয়া বোরহানীয়া আরাবীয়া লালবাগ” প্রতিষ্ঠানটিতে একবারের জন্য মীলাদ কিয়াম তো হয়নি বরং উক্ত মাদরাসার সাবেক পরিচালক মুফতী ফজলুল হক আমিনী মীলাদ কিয়ামকারীদেরকে অমুসলমান বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন । এমনকি তিনি ফতোয়া জারি করেছিলেন- যারা মীলাদ-কিয়াম করেন তাদেরকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন না করার জন্য, যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল । আমিনীর লাগামহীন মনগড়া ফতোয়া অনুযায়ী মীলাদ কিয়ামের ঘোর সমর্থক শামছুল হক ফরিদপুরীকে মুসলমানদের কাতারে রাখবেন কি না ? যদি না রাখেন, তবে তার কবরকে বিধর্মীদের গোরস্থানে স্থানান্তরিত করার প্রয়োজন আছে কিনা ? তা মুসলিম জনতা আমিনীগংদের কাছে জানতে চায় । অন্য দিকে মৌলভী শামছুল হক ফরিদপুরীর হাতেগড়া ছাত্র (যিনি শাইখুল হাদীস নামে একটি মহলে পরিচিত ছিলেন) মৌলভী আজিজুল হক তিনি তার ওস্তাদের অনুসরণে জীবনে একবারও মীলাদ ও কিয়ামের অনুষ্ঠান করেননি বিদআতী হওয়ার ভয়ে । অথচ বিধর্মীদের সৃষ্ট “লং মার্চ” নামে কর্মসূচী ঘোষণা ও তা পালন ইসলামের কোন যুগে ছিলনা; তা সত্ত্বেও তিনি পালন করেছেন ১৯৯০ সালে ।
# মৌলভী আব্দুল হাই লকনভীর দৃষ্টিতে মীলাদের কিয়াম মুস্তাহাব---
পাক-ভারত উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মৌলভী আব্দুল হাই লকনভী তদীয় “মজমুয়ায়ে ফতোয়া” কিতাবে মীলাদের কিয়াম মুস্তাহাব বলে ফতোয়া দিয়েছেন । নিম্নে তা প্রশ্ন উত্তর আকারে প্রদত্ত হলো-
প্রশ্নঃ হযরত রাসুলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা-এর জন্ম বৃত্তান্তের আলোচনা কালে কিয়াম করার হুকুম কি ?
উত্তরঃ মীলাদ বা জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনার সময় যদি কোন ব্যক্তি সত্যিকারে ইশক মুহাব্বতে, লৌকিকতাবিহীন কিয়াম বা দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে কিছু বলার নেই । মজলিসের আদব হচ্ছে অন্যান্য ব্যক্তিগণ তার অনুকরণে কিয়াম করবে । ইশক মুহাব্বত ব্যতিত ইচ্ছাকৃত দাঁড়ানো এটা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্বাদা ও মুস্তাহাব এ শরয়ী নয় । কেননা এটা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর যামানা বা কুরুনে ছালাছায় ছিলনা । ইমাম গাযযালী রহমাতুল্লাহে আলাইহি “এহয়াউল উলুম” কিতাবে নকল করেছেন যে, হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন- ক্ষেত্র বিশেষে সাহাবায়ে কেরাম রাসুলে আকরামের জন্য দাড়াতেন না, কিন্তু হারামাইন শারীফাইনের ওলামায়ে কেরাম অর্থাৎ মক্কা ও মদীনা শরীফের ওলামাগণ মীলাদের সময় কিয়াম করতেন । ইমাম বরযনজী রহমাতুল্লাহে আলাইহি স্বীয় “মাওলিদুন্নবী” কিতাবে লিখেছেন- হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা কালে কিয়াম করা বিচক্ষণ ইমামগণ মুস্তাহাব বলেছেন । কতই যে খুশীর সু-সংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যার একমাত্র উদ্দেশ্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে দাঁড়ানো । (মজমুয়ায়ে ফতোয়া, ২য় খন্ড, ৩৪৭ পৃষ্ঠা)
তিনি আরও বলেন
When a kafir of Abu Lahab’s calibre gets rewarded upon rejoicing on birth of Prophet (saw), then an Ummati who gets happy on his birth and spends due to his love for him would of course be established on high standards, just like it has been mentioned by Ibn Jawzi (rahimuhullah) and Sheikh Muhadith Haq Dhelvi (Rahimuhullah) [Abdul Hai in Majmua al Fatawa, Volume 2, Page No. 282]
# মৌলভী ফয়জুল হাসান ছাহারানপুরীর দৃষ্টিতে মীলাদের কিয়াম মুস্তাহাব---
তৎকালীন যুগে সুপ্রসিদ্ধ আলেম ছিলেন- মৌলভী ফায়জুল হাসান ছাহারানপুরী । তিনি মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর অন্যতম খলিফা ছিলেন ।
তিনি বলেন-
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হবেন, যদি উপস্থিত লোকেরা দাঁড়ায়, তাদের অনুসরণে তার দাঁড়ানো কর্তব্য । যদি তারা না দাঁড়ায়; তবে সে যেন বসে থাকেন । উক্ত মতের সাথে একাত্বতা পোষণ করেছেন বুখারী শরীফের টীকাকার মৌলভী আহমদ আলী মোহাদ্দিস ছাহারানপুরী । তিনি তার উস্তাদ মোহাদ্দিস মৌলভী ইসহাক দেহলভীর (যিনি শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি-এর নাতী) অনুসরণ পূর্বক আমল করেছেন । (শেফাউস সুদূর, পৃষ্ঠা ১০)
#দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতার দৃষ্টিতে মীলাদের কিয়াম মুস্তাহসান :
দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হাজী সৈয়দ আবেদ হুসাইন ৪০১.৫০ (চারশত এক টাকা আট আনা) চাদা সংগ্রহ করে “দেওবন্দ মসজিদ” ছাত্তা নামক জায়গায় মাদরাসাটির লেখা-পড়ার কার্যক্রম শুরু করেন । প্রথমে তিনি মাদরাসার পৃষ্ঠ-পোষক কাম মুহতামিম পদে অবৈতনিক ভাবে খেদমত আঞ্জাম দেন । কিছুদিন পর তিনি মোলভী রফিউদ্দিন সাহেবকে মাদরাসার মুহতামিম পদে নিযুক্ত করে হজ্জ্বব্রত পালন উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখ রওয়ানা হন । হজ্জ্ব সমাপনের পর দেশে ফিরলে মাদরাসার পরামর্শ কমিটির অনুরোধে আবার মুহতামিমের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । এরপর শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির মধ্যে কোন্দল দেখা দিলে, তিনি মুহতামিম পদ হতে ইস্তফা দিয়ে হযরত মাখদুম রহমাতুল্লাহে আলাইহি-এর দরবার “কালিয়ার” অভিমুখে গমন করেন । মাদরাসার পরামর্শ কমিটির সদস্যগণ তার পিছনে ছুটলেন , আর অনুরোধে করতে লাগলেন যে, পৃষ্ঠপোষকতা ও মুহতামিমের দায়িত্ব হতে পৃথক না হওয়ার জন্য, প্রয়োজনে আপনি পরিচালনার ভার অন্য কাউকে সোপর্দ করুন । অবশেষে তিনি মুন্সী ফজলে হক সাহেবকে মুহতামিম নিযুক্ত করলেন । আর তিনি পরামর্শ কমিটির একজন সাধারণ সদস্য পদ মঞ্জুর করলেন । ২য় বারের মত তিনি হজ্জ্বে গমন করলেন । ইতোমধ্যে পরস্পরের কোন্দলের জের ধরে মাদরাসায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । তিনি হজ্জ্ব হতে এসে মাদরাসার সার্বিক অবস্থা তদারকি পূর্বক মাদরাসার যাবতীয় কার্যক্রম হতে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হলেন । বিদায় কালে ওহাবী ও নজদী আকীদা পুষ্য মোল্লা-মৌলভী এবং পরিচালনা পরিষদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন- “এখানে স্বার্থহীনতা এবং লিল্লাহিয়ত খতম হয়ে গেছেন, স্বার্থপরতা ও নফছানিয়ত প্রবলভাবে গ্রাস করেছে, ঐ কাজ কর্মের সাথে আল্লাহর অলী ফকিরগণের কি সম্পর্ক ?” ওহাবী নজদীদের অত্যাচার-অনাচার ও লাগামহীন ফতোয়াবাজির খপ্পর হতে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিমও রেহাই পায়নি, সেখানে আমরা………………!!!
দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম হাজী সৈয়দ আবেদ হোসাইন হানাফী সেখানে প্রত্যেক শুক্রবার মাগরীবের পর মীলাদ শরীফের আয়োজন করতেন । ঐ মীলাদ মাহফিলে অনেক টাকা পয়সা তিনি খরচ করতেন । হাজী সাহেব এর মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত মীলাদ ও কিয়ামের অনুষ্ঠান পালন করতেন এক মাত্র বরকত ও উত্তম আমল হিসেবে । (ফরমানে মোস্তফা, কৃতঃ আল্লামা আযিযুল হক আল কাদেরী, পৃষ্ঠা নং- ১১০)
মৌলভী হুসাইন আহমদ দেওবন্দীর দৃষ্টিতে মীলাদের কিয়াম মুস্তাহাব :
মৌলভী হোসাইন আহমদ দেওবন্দী যিনি দারুল উলুম দেওবন্দ (ভারত) মাদরাসার শাইখুল হাদীস ছিলেন । তিনি দেশ বরেণ্য আলেম হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত । তিনি জীবনে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন কিনা তা নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও যারা মীলাদ কিয়াম করেন তাদের পক্ষে মজবুত ফতোয়া দিয়েছেন ।
তার লিখিত- “মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম” কিতাবে তিনি বলেন-
হযরতে সাইয়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এই জমিনে কিছু ভ্রমণকারী ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন । তারা আমার উম্মতের প্রেরিত সালামগুলো আমার নিকট পৌছান” । (উক্ত হাদীসটি ইমাম নাসাঈ রহমাতুল্লাহে আলাইহি এবং ইমাম দারমী রহমাতুল্লাহে আলাইহি স্ব-স্ব কিতাবে বর্ণনা করেছেন) ।
হযরত আবু হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে কোন উম্মত আমার উপর সালাম প্রদান করে আল্লাহ তা’য়ালা তা আমার রুহে পৌছান আর আমি তার সালামের উত্তর দেই” । (অত্র হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ এবং ইমাম বায়হাকী বর্ণনা করেছেন) ।
স্মরণ রাখা উচিত, হযরত রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা শরীফের সামনে সালাম পড়া হোক, তা খুব কাছের স্থান থেকে হোক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে, তা রাসুলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌছে । উপরোল্লিখিত হাদীসদ্বয়ে দূর ও নিকট থেকে সালাম দেয়ার কোন বৈশিষ্ট্য নেই । অর্থাৎ প্রত্যেক স্থান হতে সালাম তার নিকট পৌছে ।সালাম দাতা যখন ইচ্ছে সালাম প্রেরণ করতে পারবে । দাঁড়িয়ে বা বসে সালাম দেয়ার শর্ত আরোপ করা হয়নি । হ্যা, যদি রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যিকরে বেলাদত বা জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা কালে কেহ দাঁড়িয়ে সালাতু সালাম পড়লে, তাতে দোষের কি আছে ? (মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৩৩৯)
মৌলভী ফয়জুল হাসান ছাহারানপুরীর দৃষ্টিতে মীলাদের কিয়াম মুস্তাহাব :
তৎকালীন যুগে সুপ্রসিদ্ধ আলেম ছিলেন- মৌলভী ফায়জুল হাসান ছাহারানপুরী । তিনি মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর অন্যতম খলিফা ছিলেন । তিনি বলেন-
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হবেন, যদি উপস্থিত লোকেরা দাঁড়ায়, তাদের অনুসরণে তার দাঁড়ানো কর্তব্য । যদি তারা না দাঁড়ায়; তবে সে যেন বসে থাকেন । উক্ত মতের সাথে একাত্বতা পোষণ করেছেন বুখারী শরীফের টীকাকার মৌলভী আহমদ আলী মোহাদ্দিস ছাহারানপুরী । তিনি তার উস্তাদ মোহাদ্দিস মৌলভী ইসহাক দেহলভীর (যিনি শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি-এর নাতী) অনুসরণ পূর্বক আমল করেছেন । (শেফাউস সুদূর, পৃষ্ঠা ১০)
#মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর দৃষ্টিতে মীলাদের কিয়াম মুস্তাহাব :
মোলভী আশরাফ আলী থানভী এক দিকে হযরতুল আল্লামা হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজিরে মক্কী রহমাতুল্লাহে আলাইহি-এর শীষ্য ও খলিফা । অন্য দিকে সুফী তত্ত্ব বা আধ্যাতিকতাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করলেও রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইলমে গায়েবকে তিনি বিশ্বাস করতেন না । তার লিখিত “হিফজুল ঈমান” নামক পুস্তকের ১৬ পৃষ্ঠায় তিনি বলেছেন- “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যে ইলমে গায়েব বা অদৃশ্য জ্ঞান আছে এ ধরণের ইলমে গায়েব যায়েদ, ওমর এবং প্রত্যেক শিশু, পাগল, এমনকি সকল চতুষ্পদ জন্তুরও আছে”(নাউজুবিল্লাহ) । তার এহেন কুফরী কালামসহ ঈমান বিধ্বংসী অনেক ফতোয়া দেয়ার ফলে ভারত-উপমহাদেশের হক্কানী রব্বানী উলামা কিরাম তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন । আর আমাদের দেশে দেওবন্দী-কাওমী মাদ্রাসায় আশরাফ আলী থানভী সাহবের যেই বই পড়ানো হয় তা অনেকটাই এডিট করা । আপনারা কেউ মূল কপি দেখতে চেলে নিচের লিঙ্কে গিয়ে দেখতে পারেন।
http://aakhirikhtilaafkyun.blogspot.co.uk/
যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি । এতদসত্ত্বেও তার লিখিত “তাবলীগ” নামক পুস্তিকাটিতে তিনি মীলাদের সময় কিয়াম করাকে বিদয়াত বা নিন্দনীয় কাজ নয় বরং তা মুস্তাহাব বলে ফতোয়া দিয়েছেন । মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর ভক্ত, মুরীদ ও অনুগত শিষ্যরা ভারত উপমহাদেশে অনেক দ্বীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন । যেগুলো কওমী বা ওহাবী মাদরাসা নামে সর্বজন পরিচিত । আর এ সব মাদরাসায় উক্ত “তাবলীগ” নামক পুস্তিকাটি সিলেবাস ভুক্ত করে পাঠ দান করা হয় ।
উক্ত বইয়ের ৩৮ পৃষ্ঠায় মৌলভী আশরাফ আলী থানভী বলেন-
অর্থাৎ- এভাবে কিয়াম করাকে আমরা অবৈধ বলি না বরং কোথাও রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা কালে দাঁড়িয়ে যায়, আবার কখনো তার দুগ্ধ পানের ঘটনা বলার সময়, আবার কখনো মি’রাজুন্নবীর আলোকপাত কালে, এমনিভাবে কোন কোন খাস মাহফিলে ৩/৪ বারও কিয়াম করে থাকেন । তবে এরুপ মীলাদে কিয়াম করাকে কে নিষেধ করবে ?
এ কথা চির সত্য যে, মৌলভী আশরাফ আলী থানভী সাহেব হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজিরে মক্কী রহমাতুল্লাহে আলাইহি-এর সাহচার্যে যতদিন ছিলেন, ততদিন স্বীয় পীর সাহেব এর অনুকরণে মীলাদ শরীফে কিয়াম করতেন । পরবর্তীতে যখন ওহাবী ও নজদী আক্বীদা ভারত উপ-মহাদেশে বিস্তার লাভ করতে লাগল তখন তিনি মীলাদ-মাহফিল ও কিয়াম সম্পর্কে নমনীয় সুরে কথা বলতেন যাতে উভয় দল তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন ।
কোন এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছিলেন-
অর্থাৎ- প্রচলিত মীলাদ মাহফিলের ব্যাপারে সুফী সাধকদের অনুসৃত আমলকে আমি ভিত্তিহীন মনে করি না । শাফেয়ী মাযহাবের মুজতাহিদ বা গবেষক ফিকহ শাস্ত্রবীদদের অভিমতও উহাই । আল্লামা ইমাম শামী রহমাতুল্লাহে আলাইহি তার প্রনীত কিতাবে “মুসাফাহা বা’দাস সালাত” অধ্যায়ে শাইখ আবু যাকরিয়া মহিউদ্দিন নবভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি-এর অনুরুপ অভিমত বলে বর্ণনা করেছেন । কাজেই যে সব সুফীয়ায়ে কিরাম বিশুদ্ধ পন্থায় মীলাদ মাহফিল করেন, তাদের ব্যাপারে আপত্তিমুলক খারাপ ধারণা না করাই উচিত । (মাজালিছে হাকীমূল উম্মত, রচনায় : মুফতী মুহাম্মদ শাফী, পৃষ্ঠা- ১৬৩)
মৌলভী রশিদ আহমদ গাংগুহী ও মৌং আবুল কাশেম নানতুভী সহ কিছু মোল্লা-মৌলভী যখন মীলাদ মাহফিল ও কিয়ামের মাসয়ালাকে কেন্দ্র করে হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজিরে মক্কি রহমাতুল্লাহে আলাইহি কে বিদয়াতী বলে ফতোয়াবাজী শুরু করেছেন, এমন সময় নিজের পীর মুরশীদের পক্ষে কলম ধরেন মৌলভী আশরাফ আলী থানভী ।
তিনি বলেন-
অর্থাৎ- হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজিরে মক্কী রহমাতুল্লাহে আলাইহি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অবিকল আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন । (বিশেষ করে) তার এসব আমল তথা প্রচলিত মীলাদ ও কিয়াম অনুষ্ঠানে যোগদান, বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে তা সমর্থন করা কোন ভ্রান্ত আকীদা বা শিয়া ধর্মের অনুকরণে ছিল না । বরং এহেন মহৎ আমলগুলো যেহেতু মূলত বৈধ, তাই তিনি বৈধ কাজকে পূণ্যময় মনে করে নিজে করতেন এবং অপরকে করতে উৎসাহ যোগাতেন । (এমদাদে ফতোয়া)
মৌলভী আশরাফ আলী থানভী প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও কিয়াম অনুষ্ঠানকে বৈধ ফতোয়া দিয়ে ক্ষান্ত হননি বরং নূর নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে মীলাদ ও কিয়াম অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেন- তা দৃঢ়তার সহিত বিশ্বাস রাখতেন ।
এমদাদে ফতোয়ার ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
অর্থাৎ- আমাদের আলেমগণ প্রচলিত মীলাদ ও কিয়াম নিয়ে অনেক ঝগড়া বিভেদে লিপ্ত হয়েছেন । এতদসত্ত্বেও আমরা মীলাদ ও কিয়ামকে বৈধ বা ‘পূণ্যময় আমল’ মনে করি । যেহেতু ইহা বৈধ পন্থায় আদায় করার সুযোগ আছে সেহেতু এমতাবস্থায় বিরোধী দলের এত বাড়াবাড়ি মোটেই ঠিক নয় । প্রকৃত পক্ষে মক্কা ও মদীনা শরীফের হক্কানী ও রব্বানী ওলামা মাশায়েখের অনুকরণই আমাদের জন্য যথেষ্ট । অর্থাৎ হেরেমাইন শরীফে মীলাদ কিয়াম হতো, তাদের অনুকরণে আমরাও করব । অবশ্য কিয়ামের সময় নূরনবীর জন্মের খেয়াল না করা উচিত । এ কথাও চির সত্য যে, যদি মীলাদ মজলিসে হুযূরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হতে পারেন, এমন বিশ্বাস স্থাপনে কোন দোষ নেই । কারণ জড় জগত স্থান ও কাল হতে মুক্ত নয় । তবে রুহানী জগত স্থান কাল হতে সম্পূর্ণ মুক্ত বিধায় নবী করীম রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা মীলাদ মাহফিলে হাজির হওয়া মোটেই অসম্ভব নয় ।
আরও আসছে.......