somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম): পর্ব-৬: মক্কা ও মদীনা শারীফে

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-১: “ঈদের সংজ্ঞা ও ঈদ কি শুধু দুটিই??
পর্ব-২: আল-কুর'আনের আলোকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৩: আল-হাদীসের আলোকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৪: খোলাফায়ে রাশেদীন (রাঃ) এর মতে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৫: প্রখ্যাত আলেমগণের দৃষ্টিতে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৬: মক্কা-মদীনা শারীফে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
-------------------------------------------------------------------

বিরোধী সম্প্রদায়ের লোকেরা দাবী করে মক্কা-মদীনার দেশ সৌদি আরবে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালন করা হয় না, তাই আমাদেরও পালন করা উচিত নয়। তাদের এই কথাটি সম্পূর্ণ ভূল। ব্রিটিশদের সহযোগীতায় আল-সৌদ ও ওহাবী-খারেজী সম্প্রদায় দ্বারা মক্কা-মদীনা দখলের আগে সেখানেও যে মীলাদুন্নাবী (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রচলন ছিল যার প্রমাণ পাওয়া বিভিন্ন আলেমগণের লেখনীতে

১. প্রখ্যাত মুহাদ্দীস ইবন জোজী (রঃ) মন্তব্যে
“সর্বদা মক্কা ও মদিনাবাসী, মিসর, ইয়ামেন, সিরিয়াবাসী এবং আরবের পূর্ব-পশ্চিমের সকলেই মীলাদুন্নাবী (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুষ্ঠান করে থাকেন। রবিউল আউয়াল মাসের নব চন্দ্রের আগমনে আনন্দ উতসব করেন এবং তারা সকলেই এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদি দ্বারা মহান পুরষ্কার ও সফলতা লাভ করেন”
[বিয়ান আল মীলাদুন্নাবী, পৃঃ ৫৮]

২. The mufassir al-Naqqash (266 AH- 351 AH) said in his Shifa' al-gharam (1:199) that “the birthplace of the Prophet (mawlid al-nabi) is a place where du`a on mondays is answered”.

৩. Al-Azraqi (3rd century) mentioned the mawlid in the sense of the house where the Prophet was born, and he said that salat in that house was declared by the scholars as desirable (mustahabb) for the reason of seeking special blessing (tabarruk).
[See Akhbar Mekka (2:160)]

৪. Ibn Jubayr (540AH-640AH) in his Kitab ar-Rihal (p. 114-115) mentions the Mawlid as a public commemoration taking place in Mecca in the House of the Prophet:
"every Monday of the month of Rabi` al-awwal."

৫. মাওলানা মুফতি এনায়েত আহমদ (রঃ) বলেন
“মকা ও মদীনা শারীফ এবং অধিকাংশ ইসলামি রাষ্ট্রে এ কথা প্রচলিত আছে যে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে মীলাদুন্নাবী (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাহফিল অনুষ্ঠিত করে মুসলমানদেরকে একত্রিত করে মিলাদ মাহফিল শারীফ পাঠ করা হত। ইহা একটি বিরাট বরকতময় কাজ এবং রাসূল (দঃ) এর সাথে ভালবাসা বৃদ্ধির একটি মাধ্যম। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মদীনা ঘুনাওয়ারায় মসজিদে নববীতে এবং মক্কা শারীফে রাসূল (দঃ) এর জন্মস্থানে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হত।”
[তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ, পৃঃ ১২]
তিনি উক্ত কিতাবে আরও বর্ণনা করেন
“সুতরাং মুসলমানদের রাসূল (দঃ) এর মহব্বত ভালবাসায় এ মাহফিল করা ও তাতে শরীক হওয়া উচিত।”

৬. From the 7th-century, the account of ibn Battuta
The famous 8th-century historian Ibn Battuta relates in his Rihla, Vol. 1, p. 309 and 347,
that on every Friday, after the salah, and on the birthday of the Prophet, the door of Ka`ba is opened by the head of the Banu Shayba, the doorkeepers of the Ka`ba, and that on the Mawlid, the Shafi`i qadi (head judge) of Mecca, Najmuddin Muhammad Ibn al-Imam Muhyiddin al-Tabari, distributes food to the shurafa’ (descendants of the Prophet and to all the other people of Mecca.

৭. The 7th-century historians Abu al-Abbas al-Azafi and his son Abu al-Qasim al-Azafi wrote in their Kitab al-Durr al-Munazzam:
"Pious pilgrims and prominent travellers testified that, on the day of the mawlid in Mecca, no activities are undertaken, and nothing is sold or bought, except by the people who are busy visiting his noble birthplace, and rush to it. On this day the Kaabah is opened and visited."

৮. শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দীস দেহলভী (রঃ) নিজেও মক্কা নগরীতে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী পালন করেছিলেন যা তাঁর লেখনীতেই পাওয়া যায়।
“আমি এর পূর্বে মক্কা মু’আযযামায় বেলাদত শরীফের বরকতময় ঘরে উপস্থিত ছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর একত্রে দরুদ শরীফ পাঠা করছিলেন। তার (হুযুরের) শুভাগমনের সময় সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ও তার নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম এবং এটাও বলতে পারি না যে, এগুলো কেবল মাত্র অন্তর চক্ষুতে দেখেছিলাম। এ দুটোর মধ্যে প্রকৃত ব্যাপার কি ছিল, তা আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। অতঃপর আমি গভীরভাবে চিন্তা করলাম এবং উপলব্ধি করতে পারলাম যে, এই নূর বা জ্যোতি ঐ সব ফিরিশতার, যারা এ ধরণের মজলিস ও উল্লেখযোগ্য (ধর্মীয়) স্থানসমূহে (জ্যোতি বিকিরণের জন্য) নিয়োজিত থাকেন। আমার অভিমত হল সেখানে ফিরিশতাদের নূর ও রহমতের নূরের সংমিশ্রণ ঘটেছে”।
[ফয়ূযুল হারামাইন (আরবী-উর্দু), পৃষ্ঠা নং- ৮০-৮১]

৯. “Each year on the 12th of Rabi` al-Awwal, after the salat al-Maghrib, the four qadis of Mecca (representing the Four Schools) and large groups of people including the fuqaha’ (scholars) and fudala’ (notables) of Mecca, shaykhs, zawiya teachers and their students, ru’asa’ (magistrates), and muta`ammamin (scholars) leave the mosque and set out collectively for a visit to the birthplace of the Prophet, shouting out dhikr and tahlil (LA ILAHA ILLALLAH).
The houses on the route are illuminated with numerous lanterns and large candles, and a great many people are out and about. They all wear special clothes and they take their children with them. Having reachethe birthplace, inside a special sermon for the occasion of the birthday of the Prophet is delivered, mentioning the miracles (karamat) that took place on that occasion. Hereafter the du`a’ for the Sultan (i.e. the Caliph), the Emir of Mecca, and the Shafi`i qadi is performed and all pray humbly. Shortly before the salat al-`Isha’, the whole party returns from the birthplace of the Prophet to the Great Mosque, which is almost overcrowded, and all sit down in rows at the foot of the Maqam Ibrahim.
In the mosque, a preacher first mentions the tahmid (AL HAMDULILLAH) and the tahlil, and once again the du`a’ for the Sultan, the Emir, and the Shafi`i qadi is performed. After this the call for the Salat al-`Isha’ is made. After the salat, the crowd breaks up.”
[References: Ibn huhayra from his al-Jami` al-latif fi fasl Makka wa ahliha, p. 326; the hafiz Ibn Hajar al-Haytami from his Kitab al-Mawlid ash-Sharif al-Mu`azzam, and the historian al-Nahrawali from al-I`lam bi-a`lam Bayt Allah al-haram, p. 205. Al-Diyarbakri (d. 960) in his Ta’rikh al-Khamis.]

১০. সকল দেওবন্দী মাওলানা কাসিম নানুতবী, রশিদ আহমদ গাংগুলি, আশরাফ আলী থানভী সাহেবের পীর হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী (রঃ) বলেন
The blessed Mawlid is practised by all of the people of the Haramain (Makkah & Madina), this is a sufficient proof for us. How can the rememberance of the Messenger [Hazrat Risalat Panah] Allah bless him and give him peace be censured?! However the excesses of people which they have invented should be avoided. As for the standing (qiyam) I do not say anything, yes, I experience a state in the standing (qiyam).
[Shamaim Imdadiyyah, p.47]

প্রখ্যাত মুহাদ্দীসগণের বর্ণনা দ্বারা এ কথা ষ্পষ্টত প্রমাণীত হল যে, রাসূল (দঃ) এর দুনিয়ায় শুভাগমন উপলক্ষে মীলাদুন্নাবী (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাহফিল মক্কা, মদীনা, মিসর, ইয়ামেন ও শাম ইত্যাদি সহ প্রায় সকল মুসলিম দেশে অনুষ্ঠিত হত। মীলাদুন্নাবী (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপলক্ষে এ সমস্ত দেশের মুসলমান আনন্দ উতসব ও মেহমানদারীর আয়োজন করতেন।

সুতরাং বর্তমান সময়ে যারা মক্কা ও মদীনা শারীফে ওহাবী-খারেজী মতবাদের অনুসারী সরকার কর্তৃক মীলাদুন্নাবী (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বন্ধ থাকার কারণে দাবী করেন যে, মক্কা-মদীনা শারীফে এ সমস্ত মাহফিল নেই, তাদের এ দাবী সঠিক নয়। তাদেরকে উপরোক্ত আলোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণের উপদেশ দিয়া গেল।

উপরোক্ত এ সমস্ত বর্ণনা দ্বার সুস্পষ্টত প্রমাণিত হল, রাসূল (দঃ) এর দুনিয়ায় শুভাগমন উপলক্ষে মক্কা-মদীনা শারীফ সহ প্রায় সমস্ত মুসলিম দেশেই ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (দঃ) তথা মিলাদুন্নাবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনন্দ উৎসব হিসেবে অনুষ্ঠিত হত।

পরবর্তী পর্ব সমূহ আসছে..........................
পর্ব-৭: বর্তমানে যারা পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরোধীতা করেন তাদের অতীত আলেমদের মন্তব্য
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×