ক'দিন থেকে মার্কিন যুক্ত্রাষ্টের আদলতের একটি রায় নিয়ে এদেশের তরুণদের সামাজিক মাধ্যমে ঢেউ তুলছে। সমলিংগীয়দের মধ্যে বিবাহ সম্পর্কিত এই রায় আমাকে স্পর্শ না করলেও এ নিয়ে তরুণদের মাতামাতি আমাকে স্পর্শ করেছে।
আমি গবেষক বা সমাজ সংষ্কারক নই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ১.৭ পার্সেন্ট অথবা তাঁর চেয়ে কম মানুষের চাওয়া পাওয়া নিয়ে সে দেশের আদালত কী মতামত দিয়েছে তা নিয়ে এদেশে উল্লসিত বা দুঃখিত হবার খুব বেশি কিছু আছে বলে আমি মনে করিনা।
আমি সহজ ভাবে বুঝি, সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সাহসের প্রয়োজন হয়। যারা এই রায় চাইছিলেন এবং যারা রায় দিয়েছেন তদের সাহসকে আমি ঈর্ষা করি। তবে এক অর্থে এই চাওয়াটাই ইন্ডিভিজুয়ালিজমের চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ, স্বার্থপরতার পরাকাষ্ঠা (এই শব্দটি এখানে যায় কীনা আমরা জানিনা)।এই রায়ের ফলে মনে হচ্ছে পরার্থে বাঁচার দিন ফুরিয়েছে। এ যেন মাত্র ১.৭ পার্সেন্ট লোকের বাকী ৯৮.৩ পার্সেন্ট মানুষের মতের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখানো। এটি ইসরাইল রাস্ট্রের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর জন্য পাশ্চাত্য দর্শনের সাথে তুল্য। (চারিদিকে শত্রু পরিবেষ্টিত
ক্ষুদ্র, অসহায় ইসরাইল রাষ্ট্রকে সমর্থণ না করা হবে মানবতার বিপক্ষে থাকা)।
তবে বিবাহের এই রায়কে যারা যৌন সম্পর্কের মধ্যে সীমিত রাখতে চাচ্ছেন, তারা ভুলে যাচ্ছেন বিবাহ বিষয়টি অধিকার সম্পর্কিত, উত্তরাধিকার সম্পর্কিত তার মানে এর আর্থ সামাজিক ব্যঞ্জনাটি উপেক্ষা করার মত নয়। যে দেশে বিড়াল কুকুরের ( এই কথায় হয়তো আবার পশু প্রেমিরা নাখোশ হচ্ছেন, - আমার ডগিকে কুত্তা বললেন ক্যান?) কুকুরের নামেও সম্পত্তি লিখে দেওয়া হয় সেখানে অবশ্য উত্তরাধিকারের ব্যাপারটির গুরুত্ব কত খানি আমি জানিনা।
মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় আমার আস্থা আছে, তবে প্রত্যেকে মোরা পরের তরে কথাটায় আমার বিশ্বাস গভীরতর। পরের তরে শব্দ বন্ধটি খুব সহজ নয়, এটির সাথে আত্মত্যাগের সম্পর্ক আছে। আত্মপ্রবঞ্চনার ব্যপার আছে। মহত্ত্বর স্বার্থে আত্মত্যাগের সবচেয়ে সহজ উদাহরণ দেশের জন্যে জীবন দেয়া। সাড়ে আটানব্বই পার্সেন্ট মানুষের চাওয়াটা ১.৭ পার্সেন্ট মানুষের আকাংখার চেয়ে ৯৬ গুণ বড়। আমাদের মাথায় রাখতে হবে সমলৈঙ্গীক বিবাহ অনুমোদনের পক্ষের রায়ে ৯৮ পার্সেন্ট মানুষের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে।
এই রায়কে যারা ইতিবাচক দিক উল্লেখ করতে গিয়ে যারা সমলিংগীয় দম্পতিদের বাচ্চা দত্তকে নেবার কথা উল্লেখ করেছেন, তাঁরা শিশুর বেড়ে অঠার সময় তাঁর মনোজাগতিক বিকাশের কথা কতটুকু ভাবছেন জানিনা। আমার কাছে ‘সম্পর্ক’ বিষয়টি অতি গুরুত্ব পূর্ণ। সমলৈংগিক বিয়ের ফলে যে সব সম্পর্ক দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে নানা-নানী, দাদা-দাদী, ফুফু – খালা সে গুলোর কি হবে বুঝতে না পেরে ঘাবড়ে যাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:১৬