আবার কলকাতা ১আবার কলকাতা ১
আবার কলকাতা ২আবার কলকাতা ২
টেলিফোন কেটে গিয়েছিলো। আবার ফোন বাজলো, রিসেপসন থেকে কেউ একজন বলল, স্যার রুমে বসে থাকবেন না। ভূমি কম্প হচ্ছে নিচে নেমে আসুন। ততক্ষণে ভূমিকম্প শেষ। আমাদের রুমে লাগেজ বয়ে নিয়ে গিয়েছিলো আবিদ নামের তরুন একজন ওয়েটার, আমি নিচে নামার পর ম্যানেজার তাকে বললেন, ‘আবিদ! স্যারকে ২০৮টা দেখিয়ে দাও। ওটা বড় আছে। শুনলাম ভুমিকম্পের পরপরই ২০৮এর গেস্ট চেক আউট করেছেন। ২০৮টা আমার পছন্দ হলেও বউ বাচ্চার উশখুশ দূর হলনা, এটির বাথরুম ছোট। শেষ পর্যন্ত সেখানেই ঠাঁই হল। আবিদ বলল, আমি খেয়াল রাখবো ম্যাম, ২০৩ খালি হলেই শিফট করে দোবো। আজকের দিনটা থাকুন।
আমাদের কলকাতা সফরের আসল উদ্দেশ্য ডাক্তার দেখানো। যেহেতু নয়টার মধ্যেই প্লেন নেমেছিলো ভেবেছিলাম প্রথমে বৈদ্যদর্শণ শেষ করে ঝাপিয়ে পড়বো কলকাতা দর্শণে। রঘুদাস আমাদের সে পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দিয়েছিলো ঘুরপথে এনে। সে সব বাদ দিয়ে নেমে পড়লাম মির্জা গালিব স্ট্রিট চষে বেড়াতে।
আমার মত যেসব মানুষ কলকাতার লেখকদের গল্প পড়তে পড়তে বড় হয়েছে তাদের জন্যে মির্জা গালিবের চেয়ে আর ভালো ঠাঁই কলকাতায় নেই। পার্ক স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে একটু কোনাকুনি হয়ে উত্তর দিকে রাস্তাটি লেনিন সরণীতে গিয়ে ঠেকেছে। এই রাস্তার দুপাশে ছড়িয়ে ছটিয়ে মুহাম্মাদ ইসহাক স্ট্রিট, রয়েড স্ট্রিট, লিন্ডসে স্ট্রিট চৌরঙ্গী লেন, সাদার স্ট্রিট, মারকুইজ স্ট্রিট, নিউমার্কেট, একটু দূরে এসপ্লানেড ধর্মতলা, রফি আহমেদ কিদোয়াই সড়ক। আমাদের বিমান অফিস, সোহাগ পরিবহনের অফিস, গ্রীন লাইন, শ্যামলী সব এখানেই। আর আমাদের হোটেলের ঠিক উল্টো দিকে ৫৬ নম্বর বাড়িতে আর্মেনিয়ান কলেজ। এই বাড়িতে জন্ম হয়েছিলো ভ্যানিটি ফেয়ারের লেখক উইলিয়াম থ্যাকারের।
আমার কাছে কলকাতার প্রধান তিনটি আকর্ষণ ইসলামিয়া কলেজ, ৮ থিয়েটার রোড আর জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি। আমার বাবা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মিঃ এ এন এম আব্দুল করিম এই কলেজে আমার বাবার দুই বছরের সিনিয়ার ছিলেন। ৪৭ এর দাঙ্গায় এক হিন্দু শিক্ষক তাঁদের আগলে রেখেছিলেন। থিয়েটার রোডও এখান থেকে দূরে নয়। ৮ থিয়েটার রোডে ছিলো প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সদর দপ্তর। আগের দূবার বাড়িটি আমি খুঁজে পাইনি। আর জোড়াসাঁকোর গল্প পরে হবে।
যারা কমখরচে কলকাতা দর্শনে যেতে চান, কম পয়সায় কেনা কাটা করতে চান তাদের জন্যেও আদর্শ জায়গা এটিই। চামড়ার জুতো, ব্যাগ, স্যুটকেস, কিনতে হলে শ্রীলেদার্সে চলে যান। ফায়ার ব্রিগেডের উল্টো দিকে তাদের বিশাল শো রুম। আর একটু সামনে গেলে লিন্ডসে স্ট্রীট, সেখান থেকে বায়ে গেলেই হাতের ডানে মোটামুটি দামী হোটেল স্যাফায়ার স্যুট, তারপরেই নিউমার্কেট।
লিন্ডসে স্ট্রিটে আছে দামী জুতোর দোকান উডল্যান্ড, পরিচিত দোকান খাদিমস, আর বাজার কলকাতা নামে একটি কাপড়চোপড়ের দোকান। বাজার কলকাতার আরও কয়েকটি শাখা দেখেছি পার্ক স্ট্রিট আর অন্য কোথাও।
নিউমার্কেটের দক্ষিণে মান্যবরের একটি শো রুম দেখেও যেতে ইচ্ছে হলোনা। গেলাম প্যান্টালুনসের ফ্যক্টরি আউট লেটে। শোরুম গুলির চেয়ে অনেক সস্তায় জিন্স, টি সার্ট, ফরমাল জামাকাপড় পাওয়া যায় এখানে।
সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তাঘাট দোকান পাট ঘুরে একটি বিষয় উপলব্ধি হলো কলকাতা থেকে বাংলা দ্রূত গুটিয়ে পড়ছে। দোকানে, অফিসে, ঘরে বাইরে হিন্দির সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছে না বাংলা। কে কত ভালো হিন্দি বা উর্দু বলতে পারে সব খানে মনে হচ্ছে তারই প্রতিযোগিতা চলছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৫ ভোর ৫:৩০