(১৩ জানুয়ারি'র পিকনিক। যাকে যা করতে দেখেছি আর যাকে যা বলতে শুনেছি - সবটা লিখে ফেলছি। কেউ মাইন্ড করলে আমি দায় নেব না!!!!)
কাঠের তলোয়ার (আরম্ভ পর্ব)
কাঠের তলোয়ার (পূর্বান্হ থেকে মধ্যান্হ)
তারপর বহুল প্রতীক্ষিত লাঞ্চ ! শিল্পী'রা তখন থেকে পারফর্ম করছে, খেলোয়াড়'রা খেলছে, ছবিতোলকরা সেইরকম নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে, আর ক্ষিধা লাগবে না???
কেউ একজন খাবার আসার আগেই প্লেট সরবরাহ করে বিরাট আন্দোলন গড়ে ওঠাটা নিশ্চিত করলেন ! অভুক্ত মানুষদের ছবি তোলার সে কী হাহাকার। খাবার পাই না পাই, ছবিটা দরকার ! উপবাসী জনতার সে কী হাসিমুখ !

খাবার আসল, আর খেয়ে আমি সত্যি চমকে গেলাম ! এত ভাল কাচ্চি আমি ঢাকা-তেও খুব একটা খাইনি ! দেরি হওয়ার সমস্ত ওজর মাফ !

উফ, আমার এখন আবার কাচ্চি খেতে ইচ্ছা হচ্ছে ! সমস্যা।
আচ্ছা, ভোজনপর্ব শেষে সবাই বেশ গুছিয়েই প্যাকেটগুলো জড়ো করে রাখল। ভাল লাগল ব্যাপারটা খুব। এরপর একটু বিরতি দিয়ে ক্রিকেটের ফাইনাল ! সে এক ধুন্দুমার কান্ড ! উভয়দল নিজেদের জয়ী ঘোষণা করল ! আর কে পায় ! শেষতক টাই-ব্রেকার হল। এক ওভারের খেলা। জাবেদ সেই ওভারে প্রায় প্রতি বলেই বাউন্ডারি মেরে তার দলের জয় নিশ্চিত করলেন। পরাজিত দল হাসিমুখেই আন্দোলন অব্যাহত রাখল, আর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করল !

এর মাঝে একপাশে শুকনো কাগজ-পাতা জড়ো করে ইটের উপর চুলা বানানো হল, পানি গরম করা হবে; বিকালের কফি ! সেখানে বেশ একটা জটলা দেখা গেল। আগুন যে নিভে যায় ! দু'জন আগুন ধরাতে চায়, আর বিশজন উপদেশ দেয়।

আমি সরে আবার মাঝের গোল চত্বরে আসলাম। দেখি জাহিদ ভাইয়ের রাজকন্যা একা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে। অস্থির চোখ। এসে বললাম, "কিছু খুঁজছো?"
রাজকন্যা মৃদু গলায় বলল, "আমার আম্মু?"
ভয় পেলাম, মাকে না দেখে কেঁদে দিবে না তো। একপাশে বেশ ক'জন আপু'রা দাঁড়িয়ে। তাকে বললাম, তোমার আম্মু ঐ ওখানে। চল যাই। ছোট্ট হাতের তালুতে আমার আঙুল ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলল সেখানে। গিয়ে দেখি ভাবি ওখানে নেই। রাজকন্যা কাঁদো-কাঁদো। জাহিদ ভাই আম্পায়ার ছিলেন, এখন দুই স্বঘোষিত বিজয়ী দলের ক্যাচালের মধ্যে। তো রাজকন্যা'কে বললাম, "চল তোমার আব্বু'র কাছে যাই"। আগাতে গিয়েই দেখি, ভাবী চুলা'র কাছে আগুন ধরাতে ব্যস্ত। রাজকন্যাকে মায়ের হাতে দিয়ে আমি আবার আসলাম গোলচত্বরে।
খানিক বাদেই শুরু হল পিলো-পাসিং। মিউজিকে নিমচাঁদ ভাই, তার গাড়িতে। জমজমাট খেলা। নিমচাঁদ ভাই চিৎকার করে মন্তব্য করলেন, "মেয়েদের খেলায় ছেলেদের আগ্রহ দেখি বেশি ! লুল লুল, সব লুল !"

তা সব খেলাতেই বিতর্কের শেষ নেই ! সবাই স্বজনপ্রীতি খুঁজে পায় ! কেউ কেউ বলে, "আপনার সিন্ডিকেট করে ম্যাচ পাতাইসেন ! খেলুম না !!!"

বাচ্চাদের খেলা'টা আমি দেখি নি। কখন যে শুরু হয়ে শেষও হয়ে গেল ! দু-এক মিনিটের খেলা, বিস্কিট দৌড়। মিস করলাম, তাই ওটা নিয়ে লিখতে পারলাম না !
ওই সময় সুমন আমাকে টেনে নিয়ে গেল ছবি তুলতে ! আলো পড়ে আসছে ! সুমন আমাকে আগে থেকেই বলে রেখেছিল, গান গাই আর না গাই, ছবি তোলার জন্য গীটার'টা আনতেই হবে ! তবে গানের আড্ডায় আমি আর খেলার মাঠে সুমন ব্যস্ত থাকায় ছবি আর তোলা হয়নি ! তাই এখন সুযোগ পেয়ে আমাকে নিয়ে গেল রাস্তার দিকে। ওদিক'টায় কেউ নেই। ছবি কী তুলব - আমি তো ছবি'র পোজ দিতেও জানিনা ! সুমন জানালো, আমাকে কিছু করতে হবে না। "ভাইয়া, আপনি শুধু রাস্তা দিয়ে একবার সোজা হেঁটে যাবেন, তারপর আবার সোজা হেঁটে আসবেন"। ব্যস, এই?
এর মাঝেই সে দারূণ ২টা ছবি তুলে নিল আমার !

আবার ফিরে আসলাম মূল চত্বরে।
তারপর র্যাফেল ড্র !
সবাই কেন যে টিকেট কিনলাম !!!! এক পরিবার ছ'টা টিকেট কিনে চারটা প্রাইজ নিয়ে গেল (আবার সিন্ডিকেট কথা উঠল! এই শব্দ'টা এখন রীতিমত হাস্যকর একটা শব্দ হয়ে উঠেছে !)। আমরা টিকেট কিনলাম বসে বসে তালি দিতে !

কখন যে সময় চলে গেল, কেউ টের পাই নি ! পার্কের গেট-কিপার এসে তাগাদা দিতে লাগলে সবার খেয়াল হল ! আনন্দ কি শেষ হয়???
নীল পরী পাতিল পুরষ্কার পেলেন কফি'র পানি গরম করার স্বীকৃতি হিসেবে !
ঝাঁকে ঝাঁকে বাসে উঠলাম সবাই। পেছনে পড়ে রইল অনেক ঝরা-পাতা আর ধরা-স্মৃতি নিয়ে পৌষের শেষ বিকাল !
(কেউ কি ভাবতে পেরেছি, পিকনিকের আরও অনেক আনন্দ তখনও বাকি ছিল? বলছি, পড়তে থাকুন?)
পরের এবং শেষ পর্ব