গাজার উত্তরাঞ্চলে একসময়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এলাকায় নিজ বাড়িতে ফেরার পর ৪৪ বছর বয়সী সাবরাইন জানুনের আবেগ–অনুভূতি ছিল মিশ্র প্রকৃতির।আমরা আবার আমাদের পরিবার ও স্বজনদের দেখতে পেয়ে খুশি...(কিন্তু) সেই সঙ্গে কান্না আসছে বিধ্বস্ত বাড়িঘর, ধ্বংসস্তূপ দেখে।’
সাবরাইন আরও বলছিলেন, ‘নৈসর্গিক দৃশ্যের টানে লোকজন এখানে হাঁটতে আসতেন। এখন এর অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।’যুদ্ধ শুরুর পর গাজার অন্যান্য বাসিন্দাদের মতো সাবরাইনও কয়েকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সর্বশেষ বাস্তুচ্যুত হন মধ্যাঞ্চলীয় গাজার দেইর আল–বালাহ এলাকা থেকে।
৪২ বছর বয়সী আরেক ফিলিস্তিনি ওয়াফা হাসুনা বলছিলেন, ‘উত্তর গাজা অভিমুখী সড়কটিতে তখন হাজার হাজার মানুষ। গোটা সড়কজুড়ে শুধু তাঁরা...আমরা খুব আনন্দে ছিলাম। তবে মনে মনে আমি কষ্ট পাচ্ছিলাম। কারণ, আমি জানি, আমি গাজা সিটিতে পৌঁছাব ঠিকই, কিন্তু আমার বাড়িটা সেখানে আর নেই।’
এই ফিলিস্তিনিরা যখন গন্তব্যে পৌঁছালেন, তখন বিধ্বস্ত বাড়িঘর আর ধ্বংসস্তূপ দেখে নিজেদের মধ্যে কষ্টের কথা বলাবলি করতে লাগলেন।
মোহাম্মদ ইমাদ আল–দীন ক্ষৌরকারের কাজ করতেন। সড়কে থাকা তল্লাশিচৌকি পেরিয়ে তিনি যখন গন্তব্যে পৌঁছলেন, দেখলেন তাঁর বাড়িটা মাটিতে মিশে আছে। স্যালুনটাও লুট করা হয়েছে। কাছাকাছি স্থানে ইসরায়েলি হামলায় সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।স্বামীর সঙ্গে আবার সাক্ষাতের আশায় দুই কন্যা ও ছেলেকে নিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলেন লুবানা নাসের। উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় স্বামী বেঁচে গেছেন, কিন্তু তাঁদের বাড়িটা আর নেই।
লুবানা বলছিলেন, ‘আনন্দঘন পুনর্মিলন তিক্ত–কঠিন বাস্তবতায় ঢাকা পড়ে গেল। আমাদের বাড়িটা নেই। তাই দক্ষিণ গাজায় তাঁবুতে কাটিয়ে এসে উত্তরেও সেই তাঁবুতেই উঠলাম।’তবু এই ফিলিস্তিনির আশা, এ যুদ্ধ একদিন শেষ হবে ও যা ধ্বংস হয়ে গেছে তার সব আবারও নির্মাণ করতে পারবেন।
আরেক ফিলিস্তিনি জানান, তাঁর ভাই এখনই ফিরতে তাঁকে মানা করেছেন। ভাই তাঁকে ফোন করে বলেছেন, ‘বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়িফেরা লোকজন রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন। তাঁদের সাহায্য করার কেউ নেই।’
আবার যেন জন্ম নিলাম, আবার জয় পেলাম: উত্তর গাজার জনস্রোতে শামিল ফিলিস্তিনি নারী
১. ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৫১ ০