অনেক দিন পর রাতে বের হলাম। আমি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সাধারণত রাতে বের হইনা। আজকে এম্নিতেই বের হলাম। কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম। তারপর একটি সিগারেট কিনতে ফুটপাতের দোকানে গিয়ে দোকানদারকে বললাম একটা সিগারেট হবে। দোকানদার বলল কি সিগারেট মামা? আমি থতমত খেয়ে বললাম- তাঁরা বিড়ি দেন। তখন দোকানদার মুচকি হেসে বলল- এই নামে কোন সিগারেট নেই। আমি বললাম- তাহলে গুল্ডিফ দেন, গুল্ডিফ হলেই চলবে।
আসলে আমার সিগারেট এর উপর পর্যাপ্ত পাঠ নেই। সারা জীবনে দশ বারোটার মতো টেনেছি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে উত্তরার ডিয়াবাড়িতে টান দিছি, তাই সিগারেটের নাম মস্তিষ্কে একটু দেরিতেই আসার কথা।
সিগারেট হাতে নিয়ে কিছু দূর হাটার পর মনে হলো- আরে আমার কাছে তো ম্যাচ নেই, সিগারেট ধরাব কি দিয়ে! পরক্ষণে মনে হলো সমস্যা নেই আগুন ধার নেওয়া যাবে, দুনিয়াতে এই একটা জিনিষই মানুষ ধার দিয়ে আর ফেরত নেয়না।
হাটতে হাটতে হাতিরঝিলের কাছাকাছি এসেছি। হাতিরঝিলের ময়লা পানি রাতের আঁধারে স্বর্ণের গলানো লাভার মতো মনে হয়। এই সময় সাথে কেউ থাকলে ভালো হত। লতা মেয়েটি সাথে থাকলে কোন কথাই ছিলোনা। যা হউক, লতার কথা ভেবে এখন মন খারাপ করার সময় নয়। হাটা পথের একজনকে থামিয়ে ম্যাচ আছে কিনা প্রশ্ন করলাম। লোকটি কিছুটা হতভম্ভ হয়ে বলল- না ভাই আমি বিড়ি খাইনা। মানুষ আজব প্রাণী। জিঙ্গেস করলাম ম্যাচের কথা সে উত্তর দিলো আমি বিড়ি খাইনা।
একজন থেকে ম্যাচ ধার নিয়ে সিগারেট ধরালাম। সিগারেট টান দিয়ে ভিতরে নিতে পারছিনা, গন্ধে ভমি আসে, তারপরও আমাকে টানতে হবে। চাকুরীটা চলে গেছে তিন মাস হলো, বেকার অবস্থায় নগদ টাকা দিয়ে কিনেছি, টাকার মায়া ছাড়তে পারছিনা।
সিগারেট টানা শেষ। হাতিরঝিলের ময়লা পানিকে দেখে আমার মায়া হলো, আমাদের মেঘনা নদীর পানি কত স্বচ্ছ। পরক্ষণে নিজেকে হাতিরঝিলের ময়লা পানি হিসেবে কল্পণা করি। আর মেঘলা পানিকে মনে করি সাঁ সাঁ করে দামি গাড়িতে করে চলে যাওয়া বড়লোক মানুষ।
রোডের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় কালো কাপড়ে ঢাকা একটি মেয়ে বলল ভাইয়া লাগব? আমি কিছুই বুঝলাম না। শেষতক তাকে জিঙ্গেস করলাম আপু তুমি কে? উত্তর দিলো আমি ভাসমান নিশি কণ্যা।
আমি মানুষ কে ভাসমান বলতে বুঝি মূল সমাজ থেকে বিছিন্ন বা ছিন্নমূল মানুষ। কিন্তু এই মেয়েটিকে দেখে সেরকম মনে হয়নি। তাই মোবাইল অন করে গুগলে ভাসমান নিশিকন্যা লিখে সার্চ দিলাম। গুগলে যা রেজাল্ট দেখালো তাতে বুঝলাম মেয়েটি পতিতা বা তার সম-গোত্রীয়। মেয়েটি কিছুক্ষণ পর বলল ভাইয়া রেট নিয়ে টেনশন কইরেন না, কিছু কম দিলেও চলব।
আমি রেট নিয়ে ভাবছিনা, ভাবছি যে মেয়েটি এখন আমার সাথে মুখে নেকাব দিয়ে কথা বলছে সেই মেয়েটিকে টাকা দিলে কিছুক্ষণ পর সম্পূর্ণ লেংটা হয়ে যাবে! হায়রে টাকা!হায়রে...দুনিয়া।।
বেশিক্ষণ ভাবার মতো সময় পাইনি, মেয়েটি হাঁক ছেড়ে বলল ভাইয়া কিছু বলেন না যে? আমি বললাম- ভাইয়া যেহেতু বলেছ এখানে কিছু বলার নাই, শত হলেও তুমি আমার বোন। ভাই হিসেবে বোনের মঙ্গল কামনা করি। একথা বলে আমি বাসার দিকে জোরে জোরে হাটা ধরছি। ভুলেও পিছনে ফিরে তাকাইনি, তাকালে যে বোনের কষ্ট মাখা মুখটি দেখতে পাব।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৫৪