ছবি: মিরপুর বেরিবাঁধ থেকে তোলা।
“এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান” এটি কবির বাণী, বাস্তবে কি আমরা নিশ্চিত করতে পারছি তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু! শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, বিনোদন তাদের ধরার ছোঁয়ার বাইরে। এছাড়াও তাদের নিয়ে কিছু রাজনৈতিক বাণী বা গলাবাজী প্রায়ই শুনা যায়, সেগুলো না বলাই ভালো।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, এ নিয়ে গলাবাজি শোনা যায়। রিজার্ভ ব্যাংক ফুলে উঠেছে সেখান থেকে মাঝে মাঝে কিছু খোয়াও যায়। জাতীয় প্রবৃদ্ধি শেয়ার বাজারের গ্রাফের মত উর্ধ্ধমুখী। এ অর্জন ঝুপড়ি ঘরে কেঁদে কেঁদে মরে। ঝুপড়ি ঘরের শিশুরা শৈশব আর কৈশোরের অবাধ স্বাধীন জীবনকে বিসর্জন দিয়ে দু-মুঠো ভাতের জন্যে পথে পথে ঘুরছে, কামলা দিচ্ছে জীবনে আশায় বেঁচে থাকার আশায়। রাজনৈতিক নেতাদের গলাবাজিতে শুনি, বাংলাদেশ নাকি ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে। আমার মাথা মোটা! এই মোটা মাথায় যতটুকু বুঝি তা হলো দেশের একটি মানুষও যতদিন পর্যন্ত শিক্ষা-খাদ্য-চিকিৎসা-বাসস্থান সহ মৌলিক অধিকারের বাইরে থাকবে ততদিন পর্যন্ত ডিজিটাল দেশ একটা মিথ্যে গলাবাজি ও ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছুই না।
ছবি: রাজধানীর মিরপুর থেকে তোলা।
আমাদের দেশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়েছে মানবাধিকার ও মহিলা সংস্থাগুলো। তাদের কাজ হলো পত্রিকায় কখনও যদি রিপোর্ট আসে কোন নারী বা শিশু নির্যাতন হয়েছে তখন তাদের মুখে হায় হায় রব উঠে। আর, সারা বছর নাকে গজ বা তুলা দিয়ে বসে থাকে বিদেশী সাহায্যের আসায়। এই সমস্ত হতদরিদ্র শিশুরা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান না পেয়ে আগে গৃহকর্মীর কাজ নিত কিন্তু গৃহ কর্তার ঘরে তারা নিরাপদ নয়। যৌন হয়রানিসহ নানা রকম নির্যাতনের চিহ্ন তাদের সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়ারদের নিকট এরা সেফ নয় জেনারেলের চাইতে অধিক নিচ। বাকী মানুষদের কথা না বলাই ভালো।
ছবি: মিরপুর থেকে তোলা।
এদের বুদ্ধি, সৃজনশীলতা কোন অংশে সোনার চামশ মুখে দিয়ে জন্মানো শিশুদের থেকে কোন অংশে কম নয়। আম্রেরিকার বারিক্কা এর থেকে ভালো পরিবেশে বড় হওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না। অথচ ভাগ্যে তাকে মার্কিন মুল্লুকে টেনে নিয়ে গেছে এই যা!
ছবি: রাজধানীর কালসী মোড় থেকে তোলা।
এদের মুখের হাসি বিস্মিত করে। কিভাবে সম্ভব! সোনা বাবুদের নিয়ে এতো এতো কান্ডর্কীতি, এ খায়না সে খায়না। এ ডাক্তার দেখাও সে ডাক্তার দেখাও তারপরও তাদের এ সমস্যা হেই সমস্যা, সমস্যার অন্ত নেই। অথচ এরা সাধারণ একটা ক্যামরার সামনে মুখে নির্জলা হাসি ফুটে উঠে, একে বারে দিল খোলা হাসি।
ছবি: উত্তরার অাজিমপুর রেল গেইট থেকে তোলা।
পত্রিকায় প্রায়ই রিপোর্ট আসে রেল দূর্ঘটনায় প্রাণহানির কথা। রেলের মত এত গুরুত্ব ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার জাতিকে অবাক করবে। হয়ত রেল মন্ত্রণালয় বলবে তারা নিয়োগ দেয়নি। আমারও মনে হয় তাই। হয়ত তাকে দুটি টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে কর্তৃব্যরত ব্যক্তি গেছে বিড়ি, খাঁজা খেতে। কিন্তু কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ঝড়ে যাবে কতগুলো মূল্যবান প্রাণ। ক্ষতি হবে রেল মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রীয় সম্পদ। জাতি এর থেকে পরিত্রাণ চায়।
ছবি: হাতিরঝিল থেকে তোলা।
এরাও কোন হাই সোসাইটিতে জন্ম গ্রহন করেনি, হাতির ঝিলের আশে পাশে কোন খুপরি ঘরে জন্ম। এদের জীবনে শিক্ষা গ্রহন করার সম্ভাবনা ২% ও নেই। হয়ত আর কিছু দিন পর দিবে ওয়ার্কসফ কিংবা চায়ের দোকানে কাজে লাগিয়ে। ফলে জীবনে হুমকি, ধ্মকিসহ নানা রকম ভয়ভীতির মাঝে বড় হবে। হয়ত তাদের পিছন দ্বার দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে মরার খবর আসবে পত্রিকায় না হয় রাজনের মত পরিনতি ভোগ করতে হবে। অথবা, চায়ের দোকানে মালিক কিংবা ৩জি স্টাইলের লোকের চড় থাপ্পর খেয়ে জীবনে এর প্রতিশোধ নেওয়ার স্পহা জেগে উঠবে। অনেকে এই লাইনে আবার উন্নতিও করতে পারে সেক্ষেত্রে টোকাই মিজান তাদের আদর্শ।
পরিশেষে,
পথ শিশু বলে কিছু নেই। পথে কোন শিশু জন্মানোর কারনে সে পথ শিশু হয় না, সমাজ তাদেরকে পথ শিশু বানায়। দারিদ্রতা, বাবা মায়ের বিচ্ছেদ, বাবা মা মারা যাওয়া বা বাবা মায়ের অসচেতনতা অথবা অর্থলোভী কিছু মাদক ব্যবসায়ীর কারনে এখন কিছু শিশু পথে দিন কাটায়।
তাই আসুন আমরা যে যার অবস্থান থেকে তাদের কল্যাণে এগিয়ে আসি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮