শিশু মৃত্যু রোধে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই
সাদিয়া ফাতেমা কবীর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে, জন্মের প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ দেয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত হলে বিশ্বব্যাপী অন্তত ১ মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। শেষ হলো ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে সপ্তাহব্যাপী পালিত হয়েছে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে। দেশব্যাপী এই সপ্তাহটি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে পালনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়।
এই সপ্তাহটি পালনের উদ্দেশ্য হল মাতৃদুগ্ধ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ তুলে ধরে এই বিষয়টিতে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়িয়ে শিশুমৃত্যুর হার কমানো তথা নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে শিশুকে রা করা। মাতৃদুগ্ধ একটি সম্পূর্ণ শিশু খাদ্য যা শিশুর জন্মের পর থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত সমস্ত প্রয়োজন সম্পূর্ণরূপে মেটাতে সম। এতে শিশুর বৃদ্ধি, বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান সঠিক মাত্রায় থাকার ফলে শিশুকে ৬মাস বয়স পর্যন্ত বাইরে থেকে আর কোনো খাবার এমনকি পানিও দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনা।
মাতৃদুগ্ধ কখন ও কেন দেবেন:
জন্মের পর প্রথম আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুকে বুকের দুধ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বুকের দুধ ছাড়া আর যেকোনো খাবার যেমন: পানি, মধু অথবা মধূ মিশ্রিত পানি ইত্যাদির কোনটিই দেয়া যাবেনা। এগুলো শিশুর জন্য লাভজনক তো নয়ই বরং তা শিশুর জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর।
জন্মের আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মাঝে মায়ের বুকে প্রথম যে দুধ আসে তাকে বলা হয় শাল দুধ বা কলোসট্রাম। এই শাল দুধে থাকে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি যা শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সমৃদ্ধ করে। তাই জন্মের পর পরই শিশুকে মায়ের এই শাল দুধ তথা কলোসট্রাম গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে যা শিশুর জন্য আবশ্যক। জন্মের পর থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য শুধু মাত্র মায়ের দুধই যথেষ্ট। প্রয়োজনীয় সকল উপাদানে পূর্ণ এই মাতৃদুগ্ধ থেকেই শিশু তার সম্পূর্ণ প্রয়োজন মিটিয়ে নিতে পারে সহজেই। ৬ মাস বয়সের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য ঘরে তৈরি, পুষ্টিকর ও উপযোগী খাবার দিতে হবে।
মাতৃদুগ্ধের সুবিধা সমুহঃ
শিশুকে মাতৃদুগ্ধ দেওয়ার কারণে শুধু যে শিশুই লাভবান হয় তা নয় এর ফলে মায়ের স্বাস্থ্যও উপকৃত হয়। আসুন তাহলে একবার সংক্ষেপ জেনে নেই মা ও শিশুর জন্য মাতৃদুগ্ধের সুবিধাগুলো সম্পর্কে-
১) মাতৃদুগ্ধ একটি সম্পূর্ণ শিশু খাদ্য।
২) সহজ পরিপাক ও শোষণে অনন্য।
৩) এটি শিশুর দেহের বিভিন্ন ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৪) মস্তিষ্ক ও বুদ্ধিবৃত্তির সঠিক বিকাশ ঘটায়।
৫) মা ও শিশুর বন্ধন দৃঢ় করে।
৬) শিশু জন্মের কারণে মায়ের জরায়ুতে যে পরিবর্তন আসে সেটি স্বাভাবিক শরীরি প্রক্রিয়াতেই আবার গর্ভধারণের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। বুকের দুধ খাওয়ালে এই প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হয়।
৭) শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে তা প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম বিরতি কারকের কাজ করে
৮) স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
৯) এমনকি বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলতেও সহায়তা করে।
১০) অন্য যেকোনো শিশু খাদ্যের তুলনায় মায়ের দুধ সহজলভ্য।
মাতৃদুগ্ধ দানকারী মায়ের সচেতনতাঃ
মাতৃদুগ্ধ দানকারী মাকে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। গর্ভধারণের শুরু থেকেই মাকে যথাসম্ভব এই বিষয়টি সম্পর্কে বুঝিয়ে বলতে হবে। এই বিষয়ে মায়ের সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে পরিবারকেই। প্রয়োজন হলে অভিজ্ঞ পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। Ôশিশুর জন্য মায়ের দুধের কোনও বিকল্প নেইÕ এই বিষয়টি মা সহ পরিবারের সকলকে বুঝতে হবে। মাতৃদুগ্ধ দানকারী মায়ের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতাসহ তার খাদ্যতালিকার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে যথাযথ ও পুষ্টিকর খাবার মাকে খেতে হবে তার শিশুটির স্বার্থেই।
একজন মা তার সদ্যজাত শিশুসন্তানটিকে সর্বোৎকৃষ্ট যে উপহারটি দিয়ে বরণ করতে পারেন তা হল মাতৃদুগ্ধ।তাই আসুন সচেতন হোন, সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে এগিয়ে আসুন যাতে করে প্রতিটি মাই তার নবজাতক সন্তানটিকে শ্রেষ্ঠ উপহারটি দিয়ে তার সুস্বাস্থ্যকে নিশ্চিত করতে পারে।
লেখক: শিক্ষার্থী, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১২
সম্পাদনা: তানিয়া আফরিন
লিঙ্কঃ Click This Link