২১৮ নং রুমের সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল নাবিদ। কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে নাকের নিচে অল্প স্বল্প গোঁফে হাতের তালু দিয়ে একটু চুলকিয়ে নিল। দরজাটা খুলতে এতো দ্বিধা হচ্ছে কেন বুঝতে পারছে না। সাহস করে তবু চাবিটা তালার মধ্যে প্রবেশ করাল।
ঈদের বন্ধ শেষ হবার অনেক আগেই টিউশনি করাবার জন্য হলে ফিরে আসল নাবিদ। সামনে ছাত্র গুলোর টেস্ট পরীক্ষা, বাসায় থাকার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফিরে আসাটা জরুরী ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় হলের গেট দিয়ে ঢুকে, মানুষ বিশেষ চোখে পড়ে না। গেটের কাছে টুলে বসে ঝিমাচ্ছিল মালেক মিয়া। ক্লান্ত এই দুপুর বেলা হল পাহারা দেয়ার চেয়ে একটু গা এলিয়ে ঘুমিয়ে নেয়াটা জরুরী। কাঁধের ব্যাগটা আর একটু ঠিক করে নিয়ে চলে আসছিল সামনের দিকে নাবিদ। প্রখর রোদে মাঠটা খাঁ খাঁ করছে। ঝলসানো রোদের মাঝে, মাঠের কোণাটায় কেউ একজন ঘাস কাটছে। পরিচিত লাগছে। হয়ত হলের ক্যান্টিনের কেউ হবে। দু তিন দিন পর পরই এখানে কাজ করা মানুষ গুলোর পরিবর্তন ঘটে। যাবার আগে দেখে গিয়েছিল ক্যান্টিনের তালেব ভাই কিছু খরগোশ কিনেছেন। ঘাস হয়ত খরগোশের জন্যই কাটা হচ্ছে। হলের ভিতরে এসে দেখল কেমন একটা হাহাকার করছে। ঈদের বন্ধ শেষ করে কেউ এখনও এসে পৌঁছায় নি। বড় সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছিল। রাহি অনেকবার বলেছে সিগারেটটা ছেড়ে দাও, রাহির কাছে কথাও দিয়েছে ছেড়ে দিবে। তবুও মাঝে মাঝে বড় তৃষ্ণা পায় সিগারেটের। জানে ভিতরে ভিতরে নিজেকে শেষ করছে। তবু ছেড়ে দেয় না হয় না। রাহি যদিও জানে, কথা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে নাবিদ। ক্যান্টিনে ঢুকে একটু উঁকি মারতে দেখল ক্যান্টিনে এই দুপুর বেলাতেও ঘুটঘুটে অন্ধকার। খুলে নি এখনও ক্যান্টিনে। সিগারেটের আশা ছেড়ে তাই রুমের দিকে পা বাড়াল। ১০৭ নং রুমের সামনে ব্যাগটা ব্যাগটা রেখে তালার মধ্যে চাবিটা প্রবেশ করিয়ে দেখল তালাটা খুলছে না। পরক্ষণেই মনে পড়ল, বাসায় যাবার আগের দিন রুম পরিবর্তন হয়েছে। পাঁচ জনের রুম থেকে এখন চার জনের রুম। রুম নাম্বার ১০৭ থেকে ২১৮। এক তলা থেকে দো তলা।
তালাটা শেষমেশ খুলে রুমে ঢুকল। সব এখনও অগোছালো। শেষ দিকে তাড়াহুড়ায় কোনমতে রুম পরিবর্তন করে চলে গেছে সবাই। বেড বসানো, টেবিল বসানো, সব ঠিক করা কিছুই হয় নি। নাবিদ রুমটায় ঢুকেই একটা বেড কোনমতে ঠিক করে গা এলিয়ে দিল। শরীরটা একদম ক্লান্ত। শুয়ে পড়তেই ঘুম চলে আসল, গভীর ঘুম।
দিনের বেলার ঘুম গুলো বড় অদ্ভুত হয়। রাতের ঘুমে সবসময় স্বপ্ন না দেখলেও, দিনের ঘুমে তা নিশ্চিত। ঘুম ভেঙে ঘড়িতে সময় দেখল, ৭ টা ২০। এতোটা সময় কীভাবে ঘুমাল, মাথায় আসছে না। এতো ঘুম দিয়েও বিছানায় বসতে দেখল শরীরটা প্রচণ্ড ব্যথা। মাথাও ধরে আছে। ঘরটা অন্ধকার। লাইট জ্বেলে বিছানায় আবার বসতে খেয়াল করল, চুপচাপ হলের মাঝেও বেশ তীক্ষ্ণ শব্দ এসে কানে লাগছে। বাহিরে সমানে কুকুর ডেকে যাচ্ছে। ঘেউ ঘেউ করে না। এ ডাকাটা অন্য রকম। মনে হচ্ছে যেন কুকুর গুলো কাঁদছে। চট করে মাথায় আসল, ঘুমের মধ্যে স্বপ্নেও কুকুর দেখেছে নাবিদ। এক গাঁদা কুকুর তাড়া করছে নাবিদকে। আর নাবিদ প্রাণপণ দৌড়ে যাচ্ছে কুকুর গুলো থেকে বাঁচবার জন্য। স্বপ্নের কুকুর গুলোও ঘেউ ঘেউ করে ডাকছিল না। কাঁদছিল। হয়ত এমন হতে পারে, বাহিরে ডাকা কুকুর গুলোর শব্দই কানে এসে স্বপ্নকে সাজাচ্ছিল, দিনের ঘুমে হয় এমন।
তবে সেবার রাতের ঘুমেও এমন এক ঘটনা ঘটেছিল। জীবনে দেখা অন্যতম অবাকতম ঘটনা ছিল নাবিদের। নাবিদ তখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। গণ রুমে থাকে। গণ রুমের সেই অল্প বিস্তর জায়গায় ৭৫ জনের স্থান সংকুলান করা খুব কষ্টসাধ্য ছিল। তবুও সেখানেই থাকতে হয়েছিল। এক জনের জায়গায় দুই জন, তিন জন। ঢালাও বিছানা বিছাবার পর ভিতর থেকে হাঁটার কোন পথ ছিল না। একজনের অন্যজনের বিছানার উপর দিয়েই চলতে হত। সকাল বেলা ঘুমের ঘোরে প্রতিদিনই কেউ না কেউ কারও গা মাড়িয়ে দিত। তা নিয়ে প্রতিদিন সকালেই ঝগড়া হত। সেদিন সন্ধ্যা থেকেই কুকুর কাঁদছিল। গ্রামের দিক থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কয়েকটা ছেলে এই কুকুরের কান্না নিয়ে নানা রকম আলাপ জুড়ে বসল। এ বড় খারাপ, খারাপ কিছু দেখলে কুকুর কাঁদে। আরও কত কী। নাবিদের মাথায় আসত না, শিক্ষিত ছেলেগুলোর মাথায় এমন চিন্তা আসে কী করে? আস্তে আস্তে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল সে রাতে। কুকুরের ডাক তবু থামে না। নাবিদের রাত জাগা অভ্যাস। অকারণেই ল্যাপটপটা নিয়ে বসে থাকে অনেক রাত পর্যন্ত। রাত তখন তিনটা প্রায়। সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। লাইট গুলো সব বন্ধ। নাবিদও ল্যাপটপটা বন্ধ করে বিছানায় হাবীব আর সুপ্রাণের মাঝে শুয়ে পড়ল। কুকুর গুলো তখনও ডেকে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে ঘুম যখন গাঢ় হয়ে এসেছে, তখনও মনে হচ্ছিল কুকুরের ডাক থামছে না, আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ঘুমে তলিয়ে পড়তেই পাশ থেকে কারও চাপা আর্তনাদে নাবিদের ঘুম ভেঙে গেল। আশেপাশের আরও কয়েক জনের ঘুম ভেঙেছে সে শব্দে। নাবিদ দেখল হাবীবের বুকের উপর ওদেরই আর একজন ব্যাচমেট শাকিল বসে হাবীবের গলা টিপে ধরে বসে আছে। আর কুকুরের মত করে শব্দ করছে মুখ থেকে। আশেপাশের সবাই দৌড়ে এসে শাকিলকে হাবীবের উপর থেকে সরিয়ে নিল। ততক্ষণে প্রায় সবার ঘুম ভেঙে গেছে। সাময়িক আকস্মিকতায় শাকিল কেমন যেন হয়ে গেল। স্বাভাবিক হয়ে, বোকা বোকা চোখে সবার দিকে তাকাল। যেন কী হয়েছে না হয়েছে তার কিছুই বুঝতে পারছে না। শাকিলের ঘুমের মাঝে হাঁটার অভ্যাস আছে। অভ্যাসে এটা হতেই পারে। ব্যাপার সেটা না। ব্যাপার অন্য জায়গায়। নাবিদ ,হাবীব ওরা থাকে রুমের পূর্ব কোণায়। আর শাকিল থাকে পশ্চিম কোণায়। ঐ অন্ধকারের মাঝে, কারও গা না মাড়িয়ে, কুকুরের মত শব্দ করতে করতে কীভাবে এলো হাবীবের এখানে সেটাই চিন্তার বিষয়। সবার ঘুম ভেঙে হাবীবের আর্তনাদের শব্দে। শাকিলের পায়ের আঘাতে না।
অদ্ভুত ব্যাপারখানা এখনও মাঝে মাঝে ভাবায় নাবিদকে। নাবিদ এসব অপার্থিব কিছুতে বিশ্বাস করে না। ভূত, প্রেত, আত্মা এসবে কখনই বিশ্বাস আসে না। তবু এই ২১৮ নং রুমে ওঠার ব্যাপারে আপত্তি ছিল নাবিদের। সে আপত্তি শোনেনি পলিটিক্যাল বড় ভাইয়েরা।
রাতের খাবার বাহিরের এক হোটেল থেকে খেয়ে, ঘুরে ফিরে আসতে রাত ১১ টা বাজল। হলে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখল, গেটের কাছে কেউ নেই। মালেক মিয়ার ঘর হলের মাঠের একদম শেষ সীমানায়। হয়ত সেখানে গিয়েই আরামে ঘুমাচ্ছে। হলের এদিক ওদিক খুঁজেও কাউকে পাওয়া গেল না। গেস্ট রুমে রাতের বেলা ক্যান্টিনের ছেলে পেলে গুলো ঘুমায়। গেস্ট রুমে একটা উঁকি দিল, সেখানেও কেউ নেই। তাই ধরে নেয়া যায় পুরো হলেই নাবিদ একা। এর মাঝেও একটা উত্তেজনাকর ব্যাপার আছে। ভাল লাগা আছে। নাবিদ সিঁড়ি বেয়ে উঠে রুমের দরজা খুলে লাইটটা জ্বালল। রুমের ভিতর কেমন একটা গরম গরম ভাব। হয়ত এতক্ষণ বন্ধ ছিল তাই। গরম ভাবেও হাত পা কেমন যেন নাবিদের ঠাণ্ডা হয়ে গেল। একটা ভয় মনের ভিতর প্রচণ্ড ভাবে নাড়া দিচ্ছে। হাত পা কেমন চলছে না। তবুও সাহস নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। বিছানায় শুয়ে সরাসরি ফ্যানটার দিকে তাকাল। ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে বুকের ভিতরের হৃদ কম্পনের হাড় আরও বেড়ে গেল। এই ফ্যানটায় ঝুলেই তো...।
নাবিদ তখন ফার্স্ট ইয়ারের শেষ দিকে। এই ২১৮ নং রুমে তখন দুই ব্যাচ সিনিয়র তিন ভাই থাকতেন। এর মাঝে একজনের ঢাকায় মামা বাড়ি, সময়ের বেশীর ভাগ ওখানেই কাটাতেন। অন্যজন পাঁচ ছয়টা টিউশনি করান। হলে আসতে আসতে রাত সাড়ে এগারটা বারোটা বাজত। রুমে থাকার মধ্যে থাকত শুধু মাসুদ নামে এক ভাই। সে ভাই দিন রাত সারাদিন প্রেমিকার সাথে ফোনে কথা বলতেন। তাদের প্রেম দেখে মোটামুটি ঈর্ষাই হত। হুট করে কী যেন হয়ে গেল। মাসুদ ভাইয়ের রুমের সামনে যাবার সময় কয়েক দিন ধরেই প্রচণ্ড ঝগড়া ঝাটির শব্দ শোনা যায়। প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না বোঝাই যায়। তিনি মাঝে মাঝে বলেন, একদম কল কাটবা না, কল কাটলে কিন্তু খারাপ হবে। আমি খারাপ কিছু করে ফেলব।
হয়ত ওপাশের মানুষটা এই কথার গুরুত্ব বুঝতে পারে নি। একদিন মাসুদ ভাইয়ের রুম একদম নিশ্চুপ। মাসুদ ভাইয়ের কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না। রাতের দরজা খুলে দেখা যায় মাসুদ ভাই, ফ্যানের সাথে ঝুলছেন। গলায় ফাঁস দিয়েছেন। একটা ছেলে মানুষ হয়ে এই কাজ করবেন, মাথায় কারও তা আসে নি। টেবিলের উপর এক কোণায় একটা কাগজে লেখা ছিল, ভাল থেকো মিমি।
হয়ত মাসুদ ভাইয়ের প্রেমিকার নাম মিমি। এরপর থেকে ঐ রুমে আর কেউ থাকে না। পাঁচ ছয়টা টিউশনি করা বড় ভাইটা বাহিরে মেসে থাকে, তবু ঐ রুমে আসে না। মাস দুয়েক পরে ঐ রুম দেয়া হয় নাবিদের এক ব্যাচ সিনিয়র তিনজন রাকিব, তমাল আর অভিকে। এর মাঝে অভি ভাইয়েরই শুধু প্রেমিকা ছিল। এর স্বভাবও বলা চলে মাসুদ ভাইয়ের মত। সারাদিন মোবাইল কানের সাথেই থাকে। এই রুমে আসার পর থেকেই অভি ভাইয়ের কী একটা সমস্যা হয়। তিনি বারবার বলেন, এই রুমে মাসুদ ভাই থাকেন, এখনও থাকেন।
এই কথা শুনে সবাই হাসে। অভি ভাইয়ের মতে তার বিছানার নিচেই মাসুদ ভাই থাকেন। মাঝে মাঝেই নাকি তাকে ডাক দিয়ে বলেন, এই অভি ভাল আছিস? আমার জন্য একটা ঠাণ্ডা নিয়ে আয় তো।
সে কথা শুনেও সবাই হাসে। রুমে ওঠার এক মাসের মাথায় অভি ভাইয়েরও প্রেমিকার সাথে সম্পর্কে টানাপোড়ন শুরু হল। হয়ত সম্পর্কটা ভেঙেই গিয়েছিল। অভি ভাইকে দেখে অনেক শক্ত মনে হলেও, তিনিও ভেঙে পড়লেন। তাকে পরপর দুইবার হাসপাতালে নেয়া হল। একবার অতিরিক্ত মাত্রায় ডেক্সপ্রোটিন খেয়ে মরার মত অবস্থা, অন্যবার ব্লেড দিয়ে দুই হাতে ইচ্ছা মত কাটা। ভাগ্য ভাল ছিল দুইবারই বেঁচে যায় অভি ভাই। কিন্তু পাগলামি কমে না। সবাই বুঝায় তিনি বুঝেন না। একবার জামা কাপড় ছাড়া উলঙ্গ হয়ে পুরো হলে দৌড়ে বেড়ালেন। আর চিৎকার করে বললেন, এগার, এগার, একটা ১ আছে, আর একটা ১ লাগবে। কোন ডাবল চলবে না।
অভি ভাইকে এরপর তার বাবা মা এসে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। ঐ রুম আবারও বাকী দুজন ছেড়ে দেয়। আর এবার উঠেছে নাবিদরা। নাবিদের মনের মধ্যে খচখচ করছে। কিছু ভাবনা মাথার এপাশ ওপাশে ঘুর ঘুর করছে। ঘড়িতে দেখল সময় বারোটা পাঁচ। সময় যাচ্ছে না। কেন যেন চাচ্ছে, দ্রুত রাতটা কাটুক। নাবিদের রাত জাগা অভ্যাস। ঘুমও পাচ্ছে না। রাহিকে অনেক বার কল করেছে। ফোন ওয়েটিং কল ধরছে না। রাহির সাথে কথা বললে অন্তত ভাল লাগত। বাহিরে কুকুর গুলো অবিরাম কেঁদে যাচ্ছে। নাবিদের বড় ভয় হচ্ছে। বিশ্বাস অবিশ্বাস যাই হোক, ভয় সবারই থাকে। নাবিদ কাঁথাটা মুড়ি দিয়ে শুয়ে রইল। নাবিদের মনে হচ্ছে নাবিদের খাটটা অল্প কেঁপে উঠল। চমকে উঠল নাবিদ। পরে খেয়াল করল মোবাইল ভাইব্রেশন হয়েছে। কেউ নাবিদকে ফেসবুকে মেসেজ পাঠিয়েছে। নাবিদ মেসেজটা ওপেন করে হাঁ হয়ে গেল। অপরিচিত একটা ছেলের মেসেজ, মেসেজের সাথে কিছু ছবি। রাহির সাথে অন্য কারও ছবি, বেশ অন্তরঙ্গ। নাবিদের কোন অনুভূতি হচ্ছে না, না ভাল লাগা, না খারাপ লাগা। অনুভূতিগুলো লোপ পাচ্ছে মনে হচ্ছে। ছবি গুলোর নিচে লেখা, তুমি যা জানো, যা বিশ্বাস কর, তার সবটাই ভুল হতে পারে। যা অবিশ্বাস কর, তাই হয়ত তোমার বিশ্বাসের জায়গা।
নাবিদ মোবাইলটা পাশে রেখে দিল। মাথাটা ধরে আসছে। খাটটা মনে হচ্ছে আবার নড়ে উঠল। এবার কোন মেসেজ আসে নি। নাবিদ একটা ঘোরের মধ্যে আছে মনে হচ্ছে। ভয় লাগাটা কমছে না। একটা ফিসফিসানি শব্দ শুনল নাবিদ। কেউ ফিসফিস করে ডাকছে, নাবিদ, এই নাবিদ।
নাবিদ কাঁথাটা আরও শক্ত করে জড়িয়ে রইল। শরীরটা দরদর করে ঘামছে তবুও। হঠাৎ নাবিদের বিছানা থেকে একটু দূরে কিছু একটা ভাঙার শব্দ পাওয়া গেল। নাবিদ অবচেতন মনে কাঁথাটা খুলে মাথাটা বের করে দেখল, একটা গ্লাস ভেঙে পড়ে আছে। আরও একটু খেয়াল করে দেখল, ভাঙা গ্লাসের পাশেই একটা চকচকে ব্লেড, একটা বেশ পুরনো দড়ি।
নাবিদ উঠে বসল। জিনিস গুলোর দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। কানের ভিতর কেন যেন অভি ভাইয়ের কথাটা বাজছে, এগার, এগার, একটা ১ আছে, আর একটা ১ লাগবে। কোন ডাবল চলবে না।
বার বার কথাটা বাজছে। এর সাথে ফিসফিসিয়ে ডাকছে কেউ, নাবিদ, এই নাবিদ।
নাবিদ রুমের দরজার দিকে তাকাল। ভিতর থেকে লাগানো। সে দরজায় রুম নাম্বার লেখা, ২১৮।
নাবিদ নাম্বারটা দেখেই চমকে উঠল। ২১৮ এর ২+১+৮=১১।
একটা ১ মানে সিঙ্গেল হয়ে গেছে, আর একটা দরকার। মাসুদ ভাই একজন ছিলেন। পরবর্তী জন কে?
- রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)