বাতাসের দাপটে জানালাটা ধপ করে বন্ধ হয়ে গেল। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে, ঝুম বৃষ্টি। দেখা যাচ্ছে না তা রাতের অন্ধকারে। তবুও বোঝা যাচ্ছে। বুঝতে পারছে নাহিন বৃষ্টির ব্যাপারটা। কিন্তু কোনভাবেই বুঝতে পারছে না ঘরের মধ্যে কেন ঘুর ঘুর করছে তিনা। তিনা নাহিনের বিবাহপূর্ব প্রেমিকা। যার সাথে চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে হয় নি। নাহিনের সামনে একটা চায়ের কাপ রেখে, খেয়ে নাও, বলে চলে গেল আবার তিনা। সব প্রেমের সম্পর্ক পরিণতি পায় না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সমবয়সী ভালবাসা গুলো প্রেম হয়, বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় না। তিনার বেলায়ও তাই হল। নাহিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়বার সময় তিনার বিয়ে হয়ে গেল। সে বিয়েতে না করার পথ ছিল না তিনার। না চাইলেও মেনে নিতে হয়েছিল সে বিয়েটা। যাকে ভালবাসে সে পাশ করবে, চাকরি করবে, স্বাবলম্বী হবে, এতদিনের অপেক্ষা মেনে নিবেন না বাবা মা। ছয় বছর বিয়ের বয়স, সে সংসার ছেড়ে কেন কোন কারণে তিনা এই রাতের বেলা নাহিনের ঘরে এসেছে জানে না নাহিন। নাহিনও বিবাহিত। মাস তিনেক হল বিয়ে করেছে। ইদানীং ঘটে যাওয়া কিছু মনে করতে নাহিনের কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। নিজের বউয়ের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে পড়ল। নাম যূথী। পুরো নাম ভুলে গেছে নাহিন। যূথীর এই রাতের বেলা নাহিনের পাশেই থাকার কথা। কিন্তু কোথায় গেল? সেটা ভেবেও উত্তর পাচ্ছে না। হুট করেই মনে হল নাহিনের, যূথী বাবার বাড়ি গিয়েছে। নাহিন নিজে সি এন জি ভাড়া করে উঠিয়ে দিয়েছে বিকেল বেলা। কেমন অস্থির একটা ভাব হচ্ছে ভিতরে ভিতরে নাহিনের, পানি খাওয়া প্রয়োজন। পানির গ্লাসের জন্য টেবিলের উপর হাত রাখতেই চমকে উঠল। খানিক আগেই এখানে গ্লাস রাখল, এখন উধাও। নিচে আশেপাশে খুঁজল, নেই। একটু আগে চায়ের কাপটা রেখে গেল তিনা, সেটাও খুঁজে পাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, কিছু একটা ভুল করছে নাহিন। কিন্তু সে ভুলটা ঠিকভাবে ধরতে পারছে না। কিছু চিন্তা করতে গেলেই, মাথার ভিতর সূক্ষ্ম একটা ব্যথা হচ্ছে। চিন্তা করার শক্তিগুলো বড় ভোঁতা লাগছে। এ সমস্যাও অনেক দিন ধরেই হচ্ছে। নাহিন সব ওলটপালট করে ফেলছে। তিন চার দিন আগের ঘটনা একটু আগেই ঘটেছে মনে করছে। সময়ের ব্যবধান বুঝতে পারছে না। এইতো সেদিন যূথীর আলু কাটতে গিয়ে আঙুল কেটে গেল। নাহিন হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে স্যাভলন আর কাপড়ের ব্যান্ডেজ নিয়ে আসল, যূথীর আঙুল বেধে দেবে বলে। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে যূথী দিব্বি পেয়াজ কেটে যাচ্ছে। আশেপাশে কোন রক্ত নেই। নাহিনকে দেখে অবাক হওয়া চোখে তাকিয়ে যূথী বলে, স্যাভলন নিয়ে এসেছ কেন?
- তোমার না হাত কাটল?
- সেটা তো ভাল হয়ে গিয়েছে। স্যাভলন দিয়ে কী করব এখন?
- এর মধ্যেই ভাল হয়ে গেল?
- পরশুর আগের দিন কেটেছে, চার দিনেও যদি ভাল না হয়। আর আলু কাটতে গিয়ে একটু মাত্র হাতের আঙুল কেটেছে, তা নিয়ে আমি সারাজীবন পার করে দিব, কাজ না করে?
- চারদিন আগে?
- হ্যাঁ, তুমিই তো স্যাভলন দিয়ে আঙুলে ব্যান্ডেজ করে দিলে।
কপালটা ঘামছিল নাহিনের। একটু আগে যে ঘটনা ঘটল, তা বলছে যূথী চার দিন আগে। স্যাভলনটা রেখে কপালের ঘাম মুছল। যূথী পেয়াজ কাটা রেখে নাহিনের পাশে এসে বলল, ঠিক আছ তুমি?
- হ্যাঁ হ্যাঁ, একদম ঠিক আছি। আচ্ছা সত্যিই চার দিন আগে কেটেছে?
যূথী একটু জোর দিয়েই বলল, হ্যাঁ, কেন কী হয়েছে?
- না কিছু না।
বিষণ্ণ একটা ভাব করে মুখের, স্যাভলনটা নিয়ে চলে আসল নিজের ঘরে। কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছিল না সে সময়টায়। নাহিনের মনে হচ্ছে একটু আগে ঘটেছে, আর যূথীর চারদিন আগে। তাহলে মাঝের সময়টা কোথায় ছিল নাহিন। অন্য কোথাও? অন্য কারও সাথে?
এমন হচ্ছে ইদানীং অনেক বার। বুঝতে পারছে না নাহিন, পানি খাবার গ্লাসটা একটু আগেই টেবিলের উপর রাখল নাকি কয়েকদিন আগে, যূথীকে সি এন জি তে তুলে দিয়ে এসেছে আজ বিকেলেই নাকি কয়েকদিন আগে? তিনা কি নাহিনের বাসায় আজই এসেছে? ব্যাপারটা কি নাহিনের জানা, নাকি অজানা। নাহিনই কি বলেছে তিনাকে আসতে নাহিনের বাসায়, যূথী নেই এই সুযোগে? প্রশ্ন গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার ভিতর, কিন্তু উত্তর গুলো উধাও, খুব করেও সে উত্তর পারছে না ধরতে, চিন্তার বেড়াজালে বাঁধতে। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করল নাহিন। চোখ বন্ধ করতেও ইদানীং ভয় করে। নাহিন স্বপ্ন আর বাস্তব আলাদা করতে পারছে না কেন যেন। এইতো সেদিন, ঘুম থেকে উঠে দেখল যূথীর খুব মন খারাপ। নাহিন পাশে গিয়ে জানতে চায়, কী হয়েছে? এমন মন মরা হয়ে বসে আছ কেন?
- কিছু না।
সে 'কিছু না' বলার মাঝে ছিল প্রচণ্ড অভিমান। গলার কেঁপে ওঠা থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। নাহিনের হুট করেই মাথায় আসল, কাল রাতের ঘটনা। যূথীর হাত ধরে নাহিন বলেছে, যূথী তোমাকে একটা কথা বলব।
- বল।
- কীভাবে বলব, ব্যাপারটা তুমি নিবে কীভাবে আমি বুঝতে পারছি না।
- আরে বল।
- না মানে বলা উচিৎ কিনা আমি জানি না। তবে জানি না বললে তোমার সাথে খুব মিথ্যে করা হবে।
- তুমি বল আমাকে।
- আমার বিয়ের আগে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল।
- হ্যাঁ থাকতেই পারে। কলেজ ভার্সিটি জীবনে এমন দু একটা প্রেম সবাই করে।
- না, ব্যাপার সেটা না। ব্যাপার হল, মেয়েটার সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল।
যূথী শূন্য দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে ছিল নাহিনের দিকে। একটা কথাও মুখ থেকে বের হচ্ছিল না। চুপচাপ কিছু না বলে পাশে শুয়ে বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিল যূথী। এ কারণেই হয়ত সকাল বেলাতেও এমন মন মরা হয়ে আছে। হয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক। বরং হাসি খুশী থাকলে এই কথা শোনার পরও সেটাই অস্বাভাবিক ছিল। নাহিন যূথীর হাত ধরে বলল, যূথী, তুমি কালকের ব্যাপারটা নিয়ে বেশী মন খারাপ করেছ?
- কালকের কোন ব্যাপার?
- ঐ যে রাতে বললাম তোমাকে।
- রাতে তুমি আমাকে কী বলেছ? আমি ঘরে যেতেই তো দেখলাম তুমি ঘুমাচ্ছ।
নাহিন ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল। নাহিন যখন শুয়ে পড়েছে, যূথী তখন ছিল না ঘরে। টেলিভিশন দেখছিল পাশের ঘরে। এর মধ্যেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল নাহিন। বাকী যে ঘটনা ঘটেছে সবটাই স্বপ্নে। স্বপ্ন আর বাস্তবে ওলটপালট করে ফেলেছে নাহিন।
এ সমস্যার শুরু আজ না, বহুদিন আগেই। আস্তে আস্তে ব্যাপারটা মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। যূথী এসে পাশে শুয়ে পড়ল। যূথীকে দেখে চমকে উঠল নাহিন। একই সাথে ঘরে তিনা আর যূথী। তিনাকে একটু আগে দেখল আর যূথীকে এখন। বুকের ভিতর ধুকপুক করছে। দুজনের দেখা হয়ে গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে ব্যাপারটা। যূথী ঘরে আছে মানে, যূথীকে বিকাল বেলা সি এন জি করে তুলে দিয়ে আসে নি নাহিন। ঘটনাটা আরও আগের। মাঝের সময়টার কিছুই মনে নেই নাহিনের।
যূথীর পাশে শুয়ে অন্য দিকে ফিরে তাকাল নাহিন। দরজাটা খুলে রাখা। সে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে তিনা। সরল স্বাভাবিক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে নাহিনের দিকে। কিন্তু সে দৃষ্টিও অনেক কথা বলছে, সে কথা বুঝতে পারছে, সে কথা খুব ভাল করেই পড়তে পারছে নাহিন। ছোট করে একটা নিঃশ্বাস গোপন করে, যূথীর দিকে ফিরে তাকাল। যূথী মেয়েটার ঘুমাতে সময় লাগে কম। ভারী নিঃশ্বাস নিশ্চিত করছে ঘুমিয়ে গেছে যূথী। বড় তৃপ্তির ঘুম, চোখ মুখের অবয়বে তৃপ্তির ছাপ। আর একবার পিছন ফিরে তাকাল। তিনা এখনও দাঁড়িয়ে, অমন দৃষ্টি নিয়ে। নাহিন বড় সংশয়ে আছে, কীসের মধ্যে আছে? কল্পনা, স্বপ্ন না বাস্তব? যার মধ্যেই থাকুক, কাজটা সেরে ফেলতে হবে। তিনার দৃষ্টির চাওয়াটা অগ্রাহ্য করার কোন পথ নেই। মাথার নিচের বালিশটা টেনে বের করে যূথীর ঘুমিয়ে থাকা নিষ্পাপ মুখটার উপর চেপে ধরল। একবারের জন্যও হাতটা কাঁপল না। হাত কাঁপলে কাজটা হবে না ঠিকঠাক। যূথী ছটফট করতে লাগল, শ্বাস রোধ হয়ে যাচ্ছে। যূথী সব অন্ধকার দেখছে। জানে না বালিশ হাতে মুখটা চেপে ধরে আছে, যাকে জীবনে সবচেয়ে বেশী ভালবেসেছে, আপন ভেবেছে সে মানুষটা। যে মানুষটার নানা রকম অস্বাভাবিক আচরণের মাঝেও কখনও বিরক্তি দেখায় নি। বরং ভালবাসা দিয়ে চেয়েছিল সব ঠিকঠাক করে নিতে। কিছুই ঠিক হল না। একসময় বেঁচে থাকার লড়াইটা পরাজিত। যূথীর প্রাণহীন দেহটা পড়ে আছে বিছানায়। নাহিন একটু হাসি দিয়ে তাকাল, তিনার দিকে। তিনার মুখেও মিষ্টি হাসি। এখন আর তিনা নাহিনের মাঝে ঝামেলা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না যূথী। তিনা নাহিনের সম্পর্ক বেশ ভাল চলবে, যেমন চলছে গত পাঁচ বছর ধরে। তিনার স্বামী মারুফ, অফিসে কাজে যখন বাহিরে থাকত, নাহিন তখনই সময় করে তিনার ওখানে চলে যেত। একান্ত সময় কাটাত দুজন। যে ভালবাসা প্রেম হয়ে পরিণতি পায় নি বিয়েতে। সে ভালবাসা দুজন চালিয়ে গেছে, বিয়ে না করেই। কাগজে কলমে সমাজ পরিবারের কাছে মারুফ তিনার স্বামী হলেও, সম্পর্ক আর মন থেকে মেনেই নিয়েছে নাহিনকে স্বামী করে তিনা। তবে নাহিনের বিয়ের পর থেকে তিনা আর নাহিনের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না। তিনার এক কথা, আমার সাথে তুমি এসে থাকছ, আবার বিয়ে কেন করেছ?
সে প্রশ্নের উত্তর ছিল না কিছু। প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় একটা সময় সব ওলটপালট লাগা শুরু করল। মনে প্রাণে চাইত তিনাকে নাহিন। কিন্তু ভালবাসা দেখাতে হত যূথীর প্রতি। আবার যূথীকে সরিয়ে আগের মত তিনাকেও কাছে চাইত নাহিন। সে কাছে চাওয়া, চাওয়ার টানে পাওয়ার জন্য কাজটা শেষ করেই ফেলল। এখন আর যূথী নেই। তিনার কোন আপত্তি থাকবে না আর নাহিনের কাছে আসাতে। তিনা কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল। নাহিনের চোখ লেগে আসছে, তবুও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তিনা দাঁড়িয়ে। নাহিন বলল, এখন আর কোন ঝামেলা নেই আমাদের মাঝে।
নিঃস্পৃহ গলায় বলল তিনা, আছে তো।
- কী?
- মারুফ। মারুফ না থাকলেই তুমি আমি সারাজীবনের জন্য এক থাকতে পারব।
চোখটা আরও লেগে আসছে নাহিনের। কষ্ট করে টেনে টেনে খুলে বলছে।
'আচ্ছা মারুফের ব্যাবস্থাও আমি করব।'
বলে একটু দূরে টেবিলের উপর রাখা চকচকে ছুরিটা হাতে নিল। মারুফটাকেও শেষ করে দেয়া দরকার। কিন্তু শরীরে এক ফোঁটা শক্তি পাচ্ছে না। চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। পাশ থেকে তিনা ডাকছে, মারুফ, এই মারুফ, শরীর খারাপ তোমার?
নাহিন আশেপাশে মারুফকে খুঁজছে। ওটাকে শেষ করে দেয়া জরুরী।
- অনেক বেলা হয়েছে। ঘুম থেকে ওঠ তো। মারুফ, অফিসে যাবে না? ওঠ।
নাহিন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, তিনা নাহিনের হাত ধরে ধাক্কা দিচ্ছে। উঠতে বলছে। নাহিনকেই ,মারুফ মারুফ বলে ডাকছে।
মাথার ভিতর যন্ত্রণা বাড়ছে ধীরে ধীরে নাহিনের। যন্ত্রণা যত সূক্ষ্ম হচ্ছে, ভোঁতা হচ্ছে তত চিন্তা করার শক্তি। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। মারুফকে সরিয়ে দিলেই তিনা সবসময়ের জন্য, সারা জীবনের জন্য হয়ে যাবে নাহিনের। মারুফকে আশেপাশে দেখতে পাচ্ছে না নাহিন। কিন্তু তিনা নাহিনকেই ধরে টেনে তুলতে চাচ্ছে, মারুফ বলে ডাকছে। হাতের ছুরিটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকাল নাহিন। নাহিনের মাঝেই মারুফ আছে। ডান হাত দিয়ে বা হাতের শিরা ধমনীর উপর দিয়ে আলতো করে ছুরিটা চালিয়ে দিল। রক্ত পড়ছে খুব, আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসছে শরীর। আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে মারুফ।
নিজেকে মারুফ ভেবে হাতের শিরা ধমনী কেটে যতই তলিয়ে যাচ্ছে জ্ঞান শূন্যতায়, ততই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে চিন্তা গুলো। তিনাকে আশেপাশে দেখছে না। দেখবার কথা না। তিনাকে আরও দু দিন আগেই খুন করে ফেলেছে নাহিন। নাহিনের সাথে সম্পর্ক আর না রাখার জেদ ধরে। সেসবের কিছুই এতক্ষণ মাথায় ছিল না। তিনাকে কল্পনা আর স্বপ্নের মিশিলে দেখে, তিনার ইশারা মত খুন করে ফেলল যূথীকে। আর সবশেষে নিজেকে তিনার স্বামী মারুফ ভেবে, নিজেকেই শেষ করে দিচ্ছে। সবটাই ভ্রম, সবটাই কল্পনা। ভ্রম, কল্পনা আর বাস্তবের পার্থক্য না করতে পেরে, তিনটা প্রাণ প্রাণহীন হয়ে হারাচ্ছে। নাহিন, শুনতে পাচ্ছে, পাশে অসাড় দেহের একটা কণ্ঠ থেকে, যূথী বলছে, বেশী কষ্ট হচ্ছে তোমার? স্যাভলন নিয়ে আসব? অনেক রক্ত পড়ছে যে।
আর নাহিন, সে কথা শুনতে চাচ্ছে না। চাচ্ছে তিনাকে। নিজের করে তিনাকে। তিনাকে পাওয়া যাচ্ছে না নাহিনের অন্যায় চাওয়ার সীমার ক্ষেত্রে, না কায়া হয়ে না ছায়া হয়ে।
বড় সংশয়, বড় দ্বিধার পৃথিবীতে, বড় এলোমেলো ভাবনায় কখন যেন সত্য মিথ্যা, ভাল মন্দের হিসেবে বড় কাঁচা হয়ে যায় মানুষ গুলো। সে সংশয়, সে দ্বিধা, সে বিচ্ছিরী রকমের বাসনার আড়ালে মুখ লুকিয়ে সব শেষ হয়ে যাবার ছায়া গুলো, কায়ার রূপ পায়। সুন্দর কিছুকে কুৎসিত কিছু দিয়ে ঢেকে, গ্রাস করে নেয়। একসময় হারিয়ে যায় সব, ভাল মন্দের কাঁচা হিসেবে।
- রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)