অসম্পর্কের ঋণ সুপ্রিয় খলিল মাহমুদের সদ্য প্রকাশিত কবিতার বই। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন জাদিদ (ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসা)।প্রকাশক নীল সাধু ,এক রঙা এক ঘুড়ি।বইটির উৎসর্গে অবাক হয়েছি। এটি কবি উৎসর্গ করেছেন যারা কথা রাখেনি ও যারা কথা রেখেছে। আমি কোন দলে কবি বলতে পারবেন । আসলে তার সঙ্গে আমার কোন কথাই হয়নি ।রাখারাখি পরের ব্যাপার।
শুরুতেই
"তুমি ছিলে সেই অমরাবতী পাখি
যাহার লাগিয়া একটি জীবন নদী
তোমার অধরে তীব্র আলোর ক্ষুধা
নীরব দহনে দুঃখী বনষ্পতি
ঘাসের শরীরে শিশিরের বেদনারা
চাঁদের আলোয় মৃত ওষ্ঠেরা কাঁদে
যে ফুল ফুটিল শুধুই তোমার লাগি
ক্ষয় হলো সে-ই নিষ্ঠুর সম্পাতে"
বেশ লাগলো ।রীতিমত মুগ্ধ ।অথচ তিনি নাম নিয়েছেন ধূলো বালি ছাই।
মনে হলো কবিতাতে দারুন সব রুমান্টিক উপাদান পাওয়া যাবে । কম বেশি আশিটির মত কবিতার সমাবেশ ঘটিয়েছেন কবি । তার ১ম কবিতা তোমার নির্দেশ
তুমি কি নজরুল হবে? কিংবা সুকান্ত?
রবীন্দ্রনাথও বাচবেন আর বড়জোর দুশোটি বছর
ঈশ্বরপূর্ব কজন কবিকে মানুষ রেখেছে মনে?
অতঃপর অচিরেই তুমিও নিমজ্জিত ইতিহাস
তুমি তো মাইকেল হবে না ,অথবা জীবনন্দদাশ।
এত লিখোনা
কী কাজ প্রতিদিন মহাকাব্য লিখে?
...........
..........
আর শোনো
আমায় নিয়ে কবিতা লিখোনা আর কোনদিনও।
কি বলেন কবি? গুরুজন হিসেবে মানি তাই বলে কবিতা লিখতে না বললে মানবোনা বোধ হয় !শায়মা না বললে তারপর লিখা বাদের কথা ভাবতে পারি ।
যাই হোক ক্ষণজন্মাপড়লাম এবং মুগ্ধ হলাম।
পাঁজর ফুঁড়ে তীব্র বেরিয়ে পড়ে জ্বলন্ত আগুন, টগবগে বাঘ। তোমার বুক খুঁড়ে হন্যে হয়ে খুঁজি, গহিন অরণ্যে গেঁথেছো কার নাম ।
তারপর এলো বুবুর কথা শিরোনামে তুই চলে যাবার পর ও ভ্রম ছায়া
এখনো মনে হয় সুতীব্র অভিমানে তুই
মেঝের উপর আছড়ে ফেলিস মুঠেফোনে আর আমি আবেগে ছুটে এসে
নীরবে পেছনে দাঁড়াই,সন্তর্পনে তোর ঘাড়খানা ছুঁই।
তারপর অসম্পের্কের ঋণ শিরোনামে দুটি কবিতা অমর্ত্যবর্তিনী আর প্রাপ্তি
অমর্ত্যবর্তিনী
তুই তো বউ হলিনা, হলিনা প্রেমিকাও
সম্পর্ক আর অসম্পর্কের মাঝগাঙে তোর নাও
বউকে দিব্যি প্রেম দিই,যার চেয়ে ঐশ্বর্য কিছু নেই
তোকে দিই মুহুর্তকবিতা, না চাইতেই
গৃহের ধ্যানে বড্ড গুটিয়ে গেছিস, আমিও তাই
আজও এক গৃহেই জ্বালি তোর রোশনাই।
প্রাপ্তি
.........................
যৌবন বনস্পতি
বরিখে বরিখে নীরবে অশ্রু ফেলে
কী এমন হতো রে ক্ষতি
একজনমে এ প্রাসাদটুকু না পেলে ?
কেন এই বইয়ের নাম অসম্পর্কের ঋণ? রক্ত সম্পর্কের বাইরের সে সম্পর্ক সেটিই বোধ হয় অসম্পর্ক । কবি দুটি কবিতায় ঋণ স্বীকার করেছেন সুপ্রিয় ব্লগার শায়মার । কবিতা দুটি হলো নাম না জানা ঘাসের ঘ্রাণে আর অধরা , শৈশবের দুঃখগুলো কবি ব্লগার স্বদেশ হাসনাইন , প্রমীলা এখন যে কোন নারী; তার বুকে অচেনা গন্ধ বরুনা ও নীল লোহিত এবং অভিলাষ ব্লগার রাইসুল নয়ন ।
এবার কবিতা সম্পর্কে বলি। কবিতাগুলোর উপজীব্য নারী ,প্রকৃতি আর বিশেষকরে মানুষের পারস্পরিক মিথোজীবিতা তথা সম্পর্ক । দারুন সব শব্দ সুষমায় তার কবিতাগুলো হয়ে ওঠেছে বাঙময় । আমারতো ভাল লেগেছে খুব । তিনি কত বড় মাপের কবি এটি না পড়লে বুঝা যাবেনা ।
উল্লেখিত কবিতা গুলো ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি কবিতা যেগুলোর নাম না বলাটা সমীচিন হবে না । মোদ্দাকথা আমার অন্য বিশেষ ভাল লালাগার কবিতা হলো যে মেয়েটি আমায় ভালবাসতো , মেয়েরা ফুলের মত , আমার স্ত্রীকে হতে হবে , কবিতার মেয়ে। কত কাব্যিক ঢঙে নারীর চিত্র এঁকেছেন তিনি সেটি অনুভব করতে হলে পড়তে হবে অসম্পর্কের ঋণ ।
আমি মুগ্ধ হয়েছি। কবির কবিতা পাঠ করে। কত চমৎকার করেই না তিনি লিখেছেন ! হৃদয়ে গেঁথে আছে কত কত লাইন !! তার কবিতা দিয়েই শেষ করি । আমার কবিতার মেয়েকে এমনটাই প্রশ্ন করেছিলাম আমি!!
সময় দৌড়ায়। আমিও গুণে যাই দিন
একদিন ঠিক তুমি বলবেই ;
কেন তুমি কবিতা লিখো নি?
কেন তুমি নিষ্ঠুরিয়া
লিখো নি একটি কবিতাও, আমায় নিয়ে?
-----------------------------------------
বিঃদ্রঃ বইটির মূল্য মাত্র ১০০টাকা । প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার জন্য এর চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৪