সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে আমির খান অভিনিত পিকে মুভি।এটি রিলেজিয়াস স্যাটায়ার । হাস্যরসে ভরপুর ছবিটির পরিচালক থ্রি-ইডিয়ট ছবির পরিচালক রাজকুমার হিরানি ।যাকে এখন সবাই বলিউডের সেরা পরিচালক বলে স্বীকৃতি দিচ্ছেন অনায়াসে ।শুরুতে ছবির পোস্টারে আমির খানের ন্যুড ছবি নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। শাহরুখ খান জুহি চাওলা প্রমুখ সরব হয়ে ওঠেন আমির খানের এহেন নীচু কর্মে !আমির খানের বন্ধু সালমান খানও তা ব্যাঙ্গাত্বক ভাবে উপস্থাপন করেছেন বিষয়টি ।অবশ্য খান রাজার পক্ষেও লোকের অভাব হয়নি ।তাদের অভিমত ছবিটির প্রচারণার জন্য আমির খান আর রাজকুমার হিরানীর মত দু দুজন মহাতারকার ওরকম কিছু করা অযোক্তিক। এরকম একটা অবস্থায় ১৯ ডিসেম্বর ছবিটি মুক্তি পায় ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রিলিজ হিসেবে (৫২০০০ টি প্রিন্ট)। বিশ্বক্রিকেটের ওয়ান্ডার বয় ছবির প্রিমিয়ায় দেখে কমেন্ট করলেন এটি আমির খানের এযাবৎ করা সেরা কাজ ।ছবিটি সবার দেখা উচিৎ।
তারপরের অংশ ইতিহাস ।ব্যবসায়িক দিক দিয়ে মুভিটি ধূম থ্রী ছবির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। সেটিকে পিছনে ফেলে বলিউডের এক নম্বর ব্যবসা সফল ছবি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করাটা অসম্ভব নয় ।২০১৪ সালে সালমান খান অভিনিত কিক আর শাহরুখ খান অভিনিত হ্যাপী নিউ ইয়ার মুভির ব্যবসাকে টপকিয়ে ইতিমধ্যে আমির -হিরানীর ছবি এবছরের সেরা ব্যবসা সফল ছবি । সালমান খান ভারত আর শাহরুখ খান অভারসিস মুলুকের সম্রাট হলেও আমির খান একই সঙ্গে ভারত ও অভারসিস মুলুকের রুপালী পর্দার সম্রাট হিসেবে নিজের আসন পাকাপোক্ত করলেন এই ছবিটির মাধ্যমে । বলিউডের সর্বকালের সেরা ব্যবসা ছবির লিস্টে এখন আমির খানের প্রতিদন্ডি আমির খান ।
ছবিটি সমালোচক মহলে দারুন প্রশংসিত হয়েছে।পুরো ছবিটিতে আমির খানকে আট ধরনের পোশাকে দেখা গেছে যেগুেলো অন্যদের ব্যবহার করা পুরোনো কাপড়। আমির খান এলিয়েনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার গুরুত্বপূর্ণ একটি ডিভাইস যেটি দিয়ে এলিয়েন রাজ্যের সঙ্গে তার যোগাযোগ সেটি চুরি মধ্যে দিয়ে ছবির ঘটনা এগুতে থাকে ।ডিভাইসটি খুঁজে পেতে এক পর্যায়ে সে স্রস্টার দ্বারস্থ্য হয় ।স্রস্টাকে খুশি করতে যত মত বা পথ আছে সবগুলো অবলম্বন করে চলতে থাকে তার উদ্ধার কার্জ ।
ঘটনার পরিক্রমায় সাংবাদিক জগৎজননী রুপী আনুশকার সঙ্গে তার দেখা ।সেখান থেকে তাদের বন্ধুত্ব ।তারপর দুজনে মিলে নেমে পড়েন তাদের কর্মযজ্ঞে।
ছবি মূল উপজীব্য হয়ে ওঠে ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মুচন ।পিকে নাস্তিক নন। একেবারে প্রথম শ্রেনীর আস্তিক । এই আস্তিকের মুখ দিয়ে বেড় হয়ে আসে ধর্মতত্ত্ব সত্যভাষণ । মুভিটিতে ভালবাসার অনুপ্রবেশ অনেকে ভালভাবে নেননি । অবশ্য লাভ ইজ ভেস্ট অবটাইম নামে একটি গানও মুভিতে আছে যার ভাবার্থ এমন করে লিখেছি ।
ভালবাসা সময়ের অপচয়
তবু ভালবাসে এ হৃদয়
হাজার কাজের মাঝে
অকাজের এই প্রেম রাজা- মহারাজা সাজে
ভালবাসার চোখ রাঙানিতে কাজেদের সংশয়
কাজের মাঝেই হৃদয়মাঝে অকাজের ফুয়ারা বয়
যতই ভালবাসো
তা যে সময়ের অপচয়
ওটুকু অপচয় না হলে জীবন অসফল মনে হয়
তবু জেনে রাখা ভাল এযে শুধু সময়ের অপচয়।
এটির নাচের মুদ্রা সত্যি ব্যাটারী রিসার্জের মত কাজ করবে ।
ছবিতে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় কোন গান নেই । আমির খান প্রচুর পান খেয়ে ভুজপুরি ভাষায় সফলতার সঙ্গে সংলাপ বলেছেন ।তার কান দুটিকে আরোও বড় করা হয়েছে ।চোখে সবুজ লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে ।অসাধারণ অভিনয় করেছেন আমির । আনুশকাও ভাল অভিনয় করেছেন । ছোট চুলে আনুশকা ছিলেন দারুন আকর্ষনীয়া ।সরফরাজ চরিত্রে সুশান্ত শিং রাজ পুত দারুন অভিনয় করেছেন । আর সঞ্জয় দত্ত পিকের বন্ধু ভাইরো সিং চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন । আরেকজনের কথা না বললেই নয় তিনি বোমান ইরানী ।প্রতিটি ছবির মতো এটিতেও তিনি দূর্দান্ত অভিনয় করেছেন । জুটি হিসেবে আমির খান আনুশকা শর্মা দারুন সফল।
তবে মুভিটির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে এই মর্মে যে ছবিটিতে হিন্দু ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে ।‘পিকে’কে হিন্দুধর্মের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র ভিনোদ বানসাল বলেন, “সিনেমাটি হিন্দুত্ববাদ নিয়ে সবদিক থেকেই বিদ্রুপ করেছে। যারা দাবি করছেন, হিন্দু ধর্ম বাদে অন্য ধর্মগুলোকেও সিনেমাটি আক্রমণ করে, তাদেরকে বলছি, খৃষ্ট ধর্ম এবং ইসলামকে হেয় করে দৃশ্য আছে কেবল দুই মিনিটের। বাকি আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ‘পিকে’তে হেয় করা হয় কেবল হিন্দু ধর্মকেই।”
ভিদু বিনোদ চোপড়া প্রযোজিত ছবিটির দৈর্ঘ্য ১৫৩ মিনিট । এর প্রথম অংশ হাসতে হাসতে শেষ ।আর শেষ অংশ মানুষের আবেগে অনুভূতিতে ব্যাপক নাড়া দিবে । হার্ট টাচিং মুভি । ছবির IMDb রেটিং ৮.৮। আমার রেটিং ৯।
ছবি বিষয়ে আমির খানের ভাষ্যই আমি বলবো । আমরা কোন ছবি তার ব্যবসা দেখে মনে রাখি না। মনে রাখি তার কনটেন্ট দেখে।পিকে মুভিটি সত্যি তেমনই মনে রাখার মত মুভি। হৃদয়ে দাগ কাটার মত মুভি ।
ছবি ও তথ্যসূত্র নেট ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১০