হুমায়ূন ফরীদি একজন বড় মনের বড় মাপের মানুষ।একটি প্রতিভা।বাংলাদেশের সংস্কৃতি ধারন করেছিলেন।লালন করেছিলেন।মধ্যবিত্ত,দরিদ্র কিংবা ধনকূবের চরিত্রে;নায়ক কিংবা প্রতিনায়ক প্রতিটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলতেন।অসামান্য দক্ষতায়।তিনি অভিনয় খেয়ে হজম করে ফেলেছিলেন। তিনি নিজেই অভিনয় হয়ে গিয়েছিলেন।
অভিনয়ের মানদন্ড হয়ে গেলেন ফরীদি।এবং সেটা যে কোন অভিনয়।এই রকম বহুমূখী প্রতিভা বিরল।বলতে গেলে অপ্রাপ্য।তিনি ছিলেন সেরা কমেডিয়ান,ট্র্যাজেডি কিং,রুমান্টিক হিরো,মন্দ চরিত্রে অপ্রতিদন্দ্বী।পার্শ্বচরিত্র আর মূলচরিত্র বলে কিছু নেই তার কাছে।তিনি যা করেন তাই মূখ্য হয়ে যায়।ফরীদির উপস্থিতিতে সবকিছুই ফরীদিময়।তার অট্টহাসি।শরীরের লোম দাড়িয়ে যায়।তার কন্ঠস্বর ইউনিক।তার চেহারা ব্যতিক্রমী।ফরীদির পিঠটা অভিনয় করতো।হাত,পা,চোখ সব।তার উপস্থিতিতে অন্যরা ম্লান।ফরীদি ওয়ান পিছ।তিনি একজনই।
সকল অভিনেতার উন্নততর বিকল্প ফরীদি হতে পারেন।ফরীদির বিকল্প কে?এত বড় অভিনেতা। এত বড় মানুষ।কিন্তু বিনয়ী।একজন মুক্তিযোদ্ধা।আসলে স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের অভিনয় শিল্পটা এগিয়ে নেয়ার কান্ডারী কিছু বুদ্ধিদীপ্ত মেধাবী দেশপ্রেমিক।তাদের ছিল দেশের জন্য কিছু করার আকূতি আর প্রত্যয়।শেকড়ের টান। তাদের মধ্য থেকেই একজন হুমায়ূন ফরীদির সৃষ্টি ।
হুমায়ূন আহমেদ স্বনামধন্য লেখক।মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করে কূতসিত দৃষ্টান্ত রাখলেন।আর ফরীদিকে তার স্ত্রী তালাক দিল।ফরীদি আর বিয়ে করেননি। তার সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে অসম্মানজনক কিছু বলেন নি।সঙ্গীহীন একাকিত্বের দংশনে জর্জরিত।অসুস্থ।বৃদ্ধ।এমতাবস্থায় বৃদ্ধার ভীমরতি। ফরীদিকে তালাক দিয়ে পুতুলবালককে বিয়ে করে মধুচন্দ্রিমায় ব্যস্ত।পুতুলবালক এক বন্ধ্যা নারিকে বিয়ে করেছেন।মিডিয়ার আলোচিত জুটি।একজন পাঙ্কু আর একজন কামুকি বৃদ্ধা। বৃদ্ধার মৃত্যু সংবাদ্ও অনেক রসালো হবে।ফরীদির অনেক বন্ধু। অনেক কাছের মানুষ।আফজাল,মামুনুর রশিদ,পিযুষ,আসাদ,নূর,শিমুল,মিমি…………..। ফরীদির মৃত্যু হলো।সবাই কাদলেন।রাক্ষুসীটাও।তারপর সবাই কি ফরীদিকে ভুলে গেলেন?কার ও অনুপস্থিতিতে দোষ তার ঘারে পরা জগতের রীতি।ফরীদি নন্দঘোষ আর রাক্ষুসী নির্দোষ হলো নাকি? ফরীদিকে নিয়ে আর লেখালেখি হয়না।তার বন্ধুমহল এখন সুবর্ণাময়।সাথে সেই পাঙ্কু।তার বক্তব্য “আমি আর সুবর্ণা খালা রাতে একসঙ্গে থাকি”।সত্যি মিডিয়ার মানুষ মানুষ নন।তাদের ব্যক্তিগত ব্যপারে কথা বলা যাবে না।বা কি দারুন চারিত্রিক দৈন্যতা।নাকি দুই একজন তাদের পচিয়ে দিচ্ছে।তারা কি সমাজের উর্দ্ধে?সামাজিক,সাংস্কৃতিক দায়িত্ববোধ তাদের নেই? আফজাল মারা গেলে ফরীদি কি করতেন? আফজাল কি কখনো ভেবেছেন?
ফরীদি যত বড় মাপের অভিনেতা সেই অনুযায়ী সুযোগ পেলেন কোথায়?দেবদাস চরিত্রে তিনি কেমন অভিনয় করতেন?শ্রাবণ মেঘের দিনে গায়েন এর চরিত্রে?এরকম অনেক উদাহারণ দেয়া যেতে পারে।পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতে তারকা তৈরী করা হয়।একজন অমিতাভ, একজন আমির খান হয়ে উঠেন।আমাদের দেশে তাদের দশগুণ প্রতিভা নিয়েও ফরীদি কি পেলেন?
হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে মাতামাতি চলছে।তিনি কি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ্য সাহিত্যিক?কখনই নন। হুমায়ূন ফরীদি জীবিত এবং মৃত সকল অভিনেতার মধ্যে্ শ্রেষ্ঠ্।এতে সন্দেহ নাই।কয়শত বছরে একজন হুমায়ূন ফরীদি জন্মায়?আসলে কি জন্মায়?একজন রবীন্দ্রনাথ কিংবা একজন নজরুল। জন্মায়? একজন হুমায়ূন ফরীদি ?তার অভিনয় আমাদের আনন্দ দিত।নির্মল আনন্দ।ছোট্ট একটি চরিত্রকে মূল আকর্ষন বানিয়ে ফেলার ক্ষমতা আর কার আছে?কিংবদন্তীর অভিনেতা।তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। সকালবেলা ঘুম ভাঙলেই ভাবি ফরীদি নাই।কষ্ট অনুভব করি।সুবর্ণাকে অভিশপ্ত মনে হয়।
হুমায়ূন ফরীদি থাকবেন নিরবে।আমাদের হৃদয়ে।বাংলাদেশ যতদিন থাকবে।বাংলাভাষা যতদিন থাকবে।মၒ নাটক যতদিন থাকবে । অভিনয় শিল্পটা যতদিন থাকবে।