'এ ব্রিফ হিস্টোরী অফ টাইম' গ্রন্থে স্টিফেন হকিং বলেছেন, প্রসারমান মহাবিশ্ব স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করেনা।
অাবার, অাইনস্টাইন একটা প্রশ্ন করেছিলেন, মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় ঈশ্বরের কি অন্যরকম কিছু করার সম্ভাবনা ছিলো? স্টিফেন হকিং তার একটা উত্তর দিয়েছিলেন, হকিং বলেছিলেন, তিনি ঈশ্বরের মন বোঝার চেষ্টা করছেন। শেষমেষ একটা উত্তর দিলেন, এই মহাবিশ্বের স্থানে কোন কিনারা নেই; কালে কোন শুরু কিংবা শেষ নেই এবং স্রষ্টার করার মত কিছুই নেই।
যাহোক, তিনি কিভাবে ঈশ্বরের মন বুঝবেন সেটা তিনিই জানেন। অার "ঈশ্বর থাকতে পারেন" অাবার "স্রষ্টার করার মত কিছুই নেই"; দুটি বিপরীতমূখী বক্তব্য দিয়ে তিনি অাসলে কি বুঝাতে চাচ্ছেন সেটা সমাধানযোগ্য নয়। তিনি হয়তো সংশয়বাদী হতে পারেন। যেহেতু, তিনি একজন অনেক বড় মাপের বিজ্ঞানী; সুতরাং তার কথা মানুষ একটু গুরুত্বের সাথেই বিবেচনা করে। তার মানে এই নয় যে, তিনি সব সঠিক বলবেন।
মিষ্টি কুমড়ার উদাহরণ কেন টানলাম সেটা পরে বলছি। অাগে বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে দুটো বাক্য তুলে ধরি।
বিজ্ঞানী হোয়াইট হেড, আর্থার এডিংটন, জেম্স জীন্স সহ বিরাট সংখ্যক বিজ্ঞানী স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, Nature is alive ‘প্রকৃতি এক জীবন্ত সত্তা’।
ডব্লিউ.এন. সুলিভানের ভাষায় বিজ্ঞানীদের বক্তব্যের সার নির্যাস হল, The ultimate nature of the universe is mental. ‘বিশ্বলোকের চূড়ান্ত প্রকৃতি হল মানসিক’।
তার মানে বোঝা গেলো, এই মহাবিশ্ব কোন জড় বস্তুর মত অসাড় নয়। রীতিমত একটা জীবন্ত বা মানসিক বুদ্ধিদীপ্ত কর্ম করে চলেছে।
তবে, এই বিষয়টার একটা শুরু ছিলো। যাকে বিজ্ঞানে বিগ ব্যাং বা মহাবিষ্ফোরণ বলা হয়।
ধরুন, পুরো মহাবিশ্ব একটা মিষ্টি কুমড়া অাকৃতিতে ছিলো। হঠাৎ একদা এটার ভীতর মহাবিষ্ফোরণ হলো। এবং এই কুমড়ার বিভিন্ন অংশ মহাশূন্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। এই ছড়ানো ছিটানো অংশগুলোই বর্তমানে বিভিন্ন গ্যলাক্সি; যার ভীতর রয়েছে অসংখ্য সৌরজগত এবং এই সৌরজগতে রয়েছে বহু গ্রহ এবং উপগ্রহ। এরপর এগুলো যে গতিপথ প্রাপ্ত হলো; সেটা সেই শুরু থেকে একই গতিপথে ( নিয়মের বাইরে না গিয়ে) চলতে থাকলো এবং এখনো চলতে অাছে একইভাবে। কোনরকম গতি কম বা বেশি না করে ।
এবং সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো, এই মহাবিশ্ব ক্রমশঃ প্রসারিত হচ্ছে। উদাহরণ দেয়া যায় এভাবে, একটা বেলুনে কলম দিয়ে কয়েকটা ফোটা দিলেন। এবার এই বেলুনের ভেতর বাতাস ঢুকাতে থাকুন। দেখা যাবে বেলুনটি যত বড় হচ্ছে, বেলুনের গায়ের ফোটাগুলো একে অপর থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। মহাবিশ্বের প্রসারণগুলো মুলত এরকম।
যাহোক, এ প্রসারণের শেষ অাছে। এক সময় এগুলো অাবার সংকুচিত হয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবার সম্ভাবনা অাছে বলে বিজ্ঞানীরা মত দিয়েছেন।
শুরুতে স্টিফেন হকিং এর একথা বক্তব্য তুলে ধরেছিলাম সেটা হলো, "এই মহাবিশ্বের স্থানে কোন কিনারা নেই; কালে কোন শুরু কিংবা শেষ নেই..."
একটু বুঝার চেষ্টা করি অামার মত সাধারণ জ্ঞান দিয়ে।
মহাবিশ্ব বলতে অামরা কি বুঝি?
অাচ্ছা, যদি মিষ্টি কুমড়াটা মহাবিশ্বের সূচনার অাদি হয় তবে এই কুমড়াটা বিষ্ফোরনের ফলে যে স্থান দখল করে অাছে সেটার বাইরের স্থানকে অাপনি কি বলবেন? যদি বাইরের বিষয়কে এই মহাবিশ্বেরই অংশ বলেন তবে তার শেষ কোথায়? শেষ যদি থাকে তবে তার একটা সীমারেখা থাকবে। মহাবিশ্বের সীমারেখা দেয়া মানে সেই সীমারেখার বাইরে অন্য কিছুর অস্তিত্বে প্রমাণ দেয়া।
তার মানে দাড়াচ্ছে, এই মহাবিশ্বের কোন সীমারেখা বা শেষ নেই। মানে অসীম। অসীম বলতে কি বুঝায় সেটা খাতা কলমে সংজ্ঞা দিতে পারলেও বাস্তবে বোধগোম্য নয়।
অাবার মহাবিশ্বের শুরু বলতে অামরা যেটা বুঝি সেটা একটা থিউরিক্যাল বিষয়। তার মানে, এই মহাবিশ্বকে গতিশীলতা দানের একটা পর্যায়কে শুরু বলে ধরে নিচ্ছি। কিন্তু, এর অাগের কিন্তু একটা অবস্থা ছিলো । সেটার কি কোন শুরু অাছে? এভাবে যদি শুরু খুঁজতে যাই তবে কোন শুরু খুঁজে পাবোনা। সেটাও অসীম। অসীম মানে কোন লিমিট দেয়া যাবেনা। সুতরাং মহাবিশ্বের শুরু এবং শেষ বলে কিছু নেই। সে শুরু এবং শেষ অামারা বলি সেটা গতিশীলতা বা কার্যকরী হওয়া থেকে অকার্যকর/ধ্বংসকে বলতে পারি। কিন্তু এরপরও একটা স্টেজ থেকে যায়।
সারকথা বোঝা গেল, এই মহাবিশ্বেকে "শুরু" শব্দটি দিয়ে যেমন লিমিট করা যাবেনা; তেমনি "শেষ" কথাটি দিয়ে বেধে দেয়া যাবেনা। বলা যায়, অসীম কাল থেকে এই মহাবিশ্বের শুরু(অাক্ষরিক অর্থে ব্যবহৃত)।
তাহলে দেখা গেল, এই মিষ্টি কুমড়া গবেষনায় কোন কুলকিনারা পাওয়া শুধু অসম্ভব নয় অবাস্তবও বটে।
এটা যখন মেনে নিতে অামাদের সমস্যা নেই সেখানে সেই অসীম মহাবিশ্বকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, তার শুরু খুঁজি কোন যুক্তিতে?
অাচ্ছা, এই পর্যন্ত অাল্লাহ/ঈশ্বর ছাড়া কেউ কি বলেছে যে, এই মহাবিশ্ব অামি সৃষ্টি করেছি। মানে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির দাবি কি কেউ করেছে? তাহলে, দাবিদার যখন একজন তখন তাকে মালিক ভাবতে অামাদের সমস্যা কোথায়?
মানব সৃষ্ট যে কোন যন্ত্রের কার্যবলী বা ক্ষমতার একটা লিমিট থাকে । তার বাইরে সে কিছু করতে পারেনা।
ঠিক তেমনি অাল্লাহ সৃষ্ট মানুষের জ্ঞানের একটা পরিধি অাছে; যার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়।
সুতরাং মানুষ হয়ে অাল্লাহকে নিয়ে গবেষণা না করে তার সৃষ্ট মিষ্টি কুমড়া নিয়ে গবেষণা করলে মনে হয় মানুষ বেশি লাভবান হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১২