ভাবীকথন
ভাবীকথন সবসময়ই এক বিপদজনক কাজ, বিশেষত সেটি যদি কয়েক শতাব্দি বা হাজার শতাব্দি পরের কথা হয়। নীল বোর বলতেন, “ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন এক কাজ।” তবে জুল ভার্নের যুগ আর বর্তমান যুগের মাঝে এখন বেশ ফারাক। বর্তমানে আমরা পদার্থবিদ্যার মৌলিক নীতিগুলি বুঝতে পারছি। বর্তমানে আমরা পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ৪৩ মাত্রায় বিশ্বের বিষয়াবলী ব্যাখ্যা করতে পারছি, প্রোটনের সারবস্তু থেকে ... শুরু করে ... প্রসারণশীল মহাবিশ্ব পর্যন্ত। এ কারণে পদার্থবিদরা এখন বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারেন, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি কেমন হতে পারে এবং কোন প্রযুক্তি আপাতপক্ষে অসম্ভব আর কোনগুলি আসলেই অসম্ভব তারও ব্যাখ্যা দিতে পারেন।
এ কারণে আমি এই বইয়ে ‘অসম্ভব’ প্রযুক্তিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছি। প্রথমটি হলো ১ম শ্রেণির অসম্ভাব্যতা। এগুলো সেই প্রযুক্তি যা বর্তমানে অসম্ভব কিন্তু বর্তমানে জানা পদার্থবিদ্যার নীতি-সূত্রের বিপক্ষে যায় না। তাই এগুলি এই শতাব্দি বা পরবর্তীতে ভিন্নরূপে হলেও সম্ভবপর হবে।
দ্বিতীয় শ্রেণিটি হলো ২য় শেণির অসম্ভাব্যতা। এগুলি তেমন প্রযুক্তি যা ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ে আমাদের অনুধাবনের পরিধির সীমায় অবস্থান করছে। এগুলি যদি সম্ভব হয়, তবে তা হবে সহাস্রাব্দ বা লক্ষ কোটি বছর পরে। টাইম মেশিন, হাইপারস্পেস ভ্রমণ ও ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে পরিভ্রমণের মত প্রযুক্তিগুলি এই শ্রেণির অন্তর্গত।
সর্বশেষ শ্রেণিটি হলো ৩য় শ্রেণির অসম্ভাব্যতা। এগুলি আমাদের জানা পদার্থবিদ্যার নীতিকে লঙ্ঘন করে। অবাক বিষয় হলো, এমন প্রযুক্তির সংখ্যা অনেক কম। এগুলি সম্ভব হলে পদার্থবিদ্যায় আমাদের জ্ঞানের মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
এমন শ্রেণিবিভাগের গুরুত্ব আছে। কারণ আমরা অনেক প্রযুক্তিকেই কল্পকাহিনীর সাথে তুলনা করে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিই। পৃথিবীতে ভিনগ্রহের প্রাণীর আবির্ভাবকে অসম্ভব মনে করি কারণ তারকাগুলোর মাঝের দূরত্ব এত বেশি যে বর্তমানের বিদ্যায় আমরা এই দূরত্ব পরিভ্রমণকে সম্ভবপর বলে মনে করি না। কিন্তু সহস্রাব্দ বা লাখ-কোটি বছর পরে মানব সভ্যতা সেই প্রযুক্তি অর্জন করতে পারে।
কার্ল সাগান বলেছেন,“কোনো সভ্যতা মিলিয়ন বছরের পুরানো হলে প্রকৃতপক্ষে কি ঘটতে পারে? আমরা মাত্র কয়েক দশক হলো রেডিও টেলিস্কোপ এবং স্পেসশিপ পেয়েছি; আমাদের প্রযুক্তিগত সভ্যতার বয়স মাত্র এক দশকের মত পুরানো… তাহলে কয়েক মিলিয়ন বছর পরের সভ্যতার দৃষ্টিতে আমরা তো ন্যাংটো হয়ে থাকা বুনো মানব বা স্রেফ এক ম্যাকক বানর।”
আমার গবেষণায় আমি ব্যক্তিগতভাবে আইন্সটাইনের “সবকিছুর তত্ত্ব” খুঁজে পাওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করি। আমি এখনও দিবাস্বপ্ন দেখি, অসম্ভবের সাথে আমার চিরজীবনের প্রণয়ের কথা ভাবি এবং কখন ও কোন কোন অসম্ভব বিষয়গুলি ভবিষ্যতে একদিন নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হবে সেকথা ভাবি।
এভাবেই আজ ড. কাকুর Physics of the Impossible বইটির ভূমিকা শেষ হলো, তবে অতি অবশ্যই অনুবাদকের সংক্ষেপন-কাঁচির ছোঁয়া এতে আছে।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সূচিপত্র (পরবর্তী দিনগুলিতে যা আসছে)
১ম শ্রেণির অসম্ভাব্যতা
১. বল ক্ষেত্র
২. অদৃশ্য হওয়া
৩. ফেজার এবং ডেথ স্টার স্পেশশিপ
৪. টেলিপোর্টেশন
৫. টেলিপ্যাথি
৬. সাইকোকিনেসিস
৭. রোবোট
৮. বহির্জাগতিক প্রাণী ও উড়ন্ত সসার
৯. স্টারশিপ
১০. অ্যান্টিম্যাটার ও অ্যান্টি-ইউনিভার্স
২য় শ্রেণির অসম্ভাব্যতা
১১. আলোর চেয়ে দ্রুত
১২. সময় পরিভ্রমণ
১৩. প্যারালেল ইউনিভার্স
৩য় শ্রেণির অসম্ভাব্যতা
১৪. জ্বালানীবিহীন বিরামহীন ঘূর্ণন যন্ত্র
১৫. পূর্বজ্ঞান
পর্ব দুই: Click This Link
পর্ব এক: Click This Link
[চলবে]