চারপাশের উচ্চকিত প্রদর্শনীর ভীড়ে
ক্লান্ত হতে হতে -
আর কোন প্রদর্শনী ভালো লাগছিলো না বলে-
স্বস্তি তখন অজ্ঞাতবাসে যেতে চেয়েছিল।
কেননা, গোলাপী কাপড়ে মোড়া উৎসবের রং
তখন বড় উৎকট মনে হচ্ছিল, সোনালী দেয়ালে
আলোর রোশনাই, লাউড স্পীকারে গান-বাজনা ,
চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ দরজায় দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই
বেজে উঠা নুপুর। চোখ ফেরানোর আগেই
গমগম গলাতে কেউ একজন বলে উঠেছিল, দেখ ,
দেখ, কী নিয়ে এসেছি ! যাদুর বাক্স।
যেখান থেকে একে একে বেরিয়ে এসেছে-
সহস্র স্বর্ণ মুদ্রা, নতুন মডেলের গাড়ী , মেডেল,
মুকুট, রাজনীতি, ল্যাং মেরে উপরে উঠে যাওয়া ।
কতকি যে আরও ! বেজে উঠেছে ডুগডুগি।
দিকে দিকে দুন্দুভি !
পাতা খুললেই, বিজ্ঞাপন!
আজ , কৈ মাছে কাঁঠালের ঝোল রান্না হয়েছে !
টমের জন্যে শ্বেত পাথরের বাটিতে
পরিবেশন করেছি অমৃত!
চাঁদের মিহি সুতোয় বুনে বুনে শাড়ী ,
কেমন মানিয়েছে, বল?
গরমের ছুটিতে ভূমি থেকে
তিন লক্ষ সাতাত্তর হাজার পাঁচশ কিলোমিটার
উচ্চতায় পরিবার পরিজন নিয়ে হাসিমুখে আমি ।
দেখ, দেখ আমি গিলেই ফেলেছি
তিনশ কোটি জ্ঞানের বটিকা!
কে, কাকে, কী দেখাচ্ছে, কেন দেখাচ্ছে -
কিছুই স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছিল না!
প্রচারেই প্রবল প্রসারের এই যুগ!
স্বস্তি তখন সৃষ্টির বিসর্জন কামনা করেছিল কিনা
কাউকে জানাবার সাহস পায়নি ।
কেননা উইকিলিকসের এই সময়ে -
বইয়ের ভাঁজে গুঁজে রাখা প্রথম গোলাপের মত
একান্ত, কোমল, অসূর্যস্পৃশ্যা একটুকরো গোপন অনুভব
পাছে আছড়ে পরে মানুষের সজাগ আদালতে !
পাছে, সহস্র বছরের ফেসবুক স্ট্যাটাস দর্শনের
সশ্রম কারাদন্ড ঘোষণা করা হয় !
তাই সে সভয়ে অজ্ঞাতবাসের আড়াল চেয়েছিল।
যেখানে প্রদর্শনী বলতে ময়ূরের সংযত পেখম মেলা
আর মেঘেদের সেজে ওঠা । প্রেম বলতে
ফুলের রং মেখে প্রজাপতির জন্যে প্রতীক্ষা ।
সকালের সূর্য প্রবেশের আগে যেখানে
সলজ্জ অনুমতি প্রার্থনা করে -
জড়াজড়ি করে একে অপরের
বুকের কাছে নত হয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষদের কাছে ।
স্বস্তি সেখানেই আনত কাটিয়ে দিতে চেয়েছিল
বাকীটা সময় ।
——————-
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৪