যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের পাটশিল্প বিভিন্ন সমস্যার মোকাবেলা করে আসছে। স্থবিরতা বা রপ্তানি মূল্য হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ নানা কারনে পাটশিল্প ঔজ্জ্বল্য অনেকাংশে হারিয়ে ফেলেছিল। গত কয়েক বছর দেশীয় ও রপ্তানিতে বাজার সংকুচিত হওয়ার প্রভাব পড়ে পাটের উৎপাদনেও। মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গত পাঁচ বছর কাঁচা পাট, জুট ইয়ার্ন, চট ও বস্তাসহ সব ধরনের পাটপণ্যের রপ্তানি ছিল পড়তির দিকে। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন কৃষক। উন্নত জাতের অভাবে হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতাও প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছিল না। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা পাটের দাম বেড়েছে টনপ্রতি ৪-৫ হাজার টাকা। রফতানি পণ্যের মধ্যে জুট সিবিসির দাম বেড়েছে ৪-৫ শতাংশ, স্যাকিং ৪-৬ শতাংশ ও হেসিয়ানের ৩-৪ শতাংশ। আর দেশীয় বাজারে পাটের বস্তার চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এটি সম্ভব হয়েছে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ বাস্তবায়নের কারণে। আগে প্রতি বছর গড়ে সাড়ে তিন কোটিতে পাটের বস্তার চাহিদা থাকলেও এখন তা সাড়ে চার কোটিতে উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ তা ছয় কোটিতে উন্নীত হতে পারে। ২০১০-১১ অর্থবছর দেশে ৮৩ লাখ ৯৬ হাজার বেল পাট উৎপাদন হলেও গত অর্থবছর তা ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার বেলে নেমে আসে। তবে দেশীয় ও রফতানি চাহিদা বৃদ্ধির কারণে আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ বেল বাড়িয়ে চলতি অর্থবছর ৯৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ বেলে পাট উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। চার বছর আগেও কাঁচা পাট রফতানি হতো বছরে ২১-২৩ লাখ বেল। এর মধ্যে ভারতে রফতানি হতো ছয় লাখ, পাকিস্তানে সাড়ে পাঁচ লাখ ও চীনে আড়াই লাখ বেল। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমদানি কমিয়ে দেয় ভারত ও পাকিস্তান। ফলে পণ্যটির রফতানি নেমে আসে ১০-১২ লাখ বেলে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও সরকারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কারণে গতি ফিরতে শুরু করেছে পণ্যটির রফতানিতে। অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কাঁচা পাট রফতানি বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি।