somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কতিপয় কর্পোরেট নারীর স্বামী (কবি আবদুল গণি হাজারীর ‘কতিপয় আমলার স্ত্রী’ কবিতাটি মনে রেখে)

০৪ ঠা জুলাই, ২০১১ রাত ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সকাল থেকে সন্ধ্যা এবং
সন্ধ্যা থেকে রাত্তির-
এই অনুপুক্সক্ষ সময়টা আমাদের গড়িয়ে চলে ঠেলাগাড়ির মতোন,
উঁচু নিচু রাস্তায়
এ-ধারে ও-ধারে খানাখন্দ, তাতে ঠুস খায়
আবার গড়িয়ে গিয়ে থামে- ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত।
আমরা স্বামী-;
যুগ যুগ ধরে ‘পতি’, ‘দেবতা’, ‘বেহেশত’ শিরোনামে
আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছি
ঘরে-বাইরে-বিছানায়।
এবং আরও অন্যখানে- যেখানে চিতার চোখের মতো জ্বলে ওঠে
স্বামীত্বের আয়োজন।
আমাদের পূর্ব-পুরুষদের মাঝে (এমনকি আমাদের মাঝেও)
এমন অনেক হারামি-শুয়োরকে পাওয়া যাবে
যারা বউ-পেটানোকে স্বামীত্বের স্বঘোষিত অধিকার মনে করে!
তবে, ও-দলে নই আমরা।
আমরা নিতান্তই আলাদা;
একেবারে ভিন্ন গোত্র
আমরা স্বামী- কতিপয় কর্পোরেট নারীর স্বামী।
আমাদের স্ত্রীদের বহুরূপী দরজায় আমরা কড়া প্রহরী-
তাদের রুটিনমাফিক জীবন জুড়ে
আমরা বেঁচে থাকি বুকে নিয়ে সুড়সুড়ি।
রাতে তারা কখন ঘুমায়, আমরা জানি না-
সোশ্যাল নেটওয়ার্কে সময় না কাটালে তাদের চলে না;
ঘরময় হেঁটে বেড়ায় বিবসনা স্ত্রী
তাদের স্তনের বাহারে আমরা উৎফুল্ল হই
তবে ছুঁই না কখনো, যদি স্তনের সুস্বাস্থ্য নষ্ট হয়!
তারপর পাশ ফিরে ঘুমোই-
আমরা কতিপয় কর্পোরেট নারীর স্বামী।
আমাদের স্ত্রীদের ভোরবেলা কাটে খবরের কাগজে
নারী-নির্যাতনের খবরে আঁতকে উঠে তারা (দুর্বল হার্ট কোনো রকমে অ্যাটাক সামলায়)।
অর্থনীতির পাতায় খুঁজে মিটিং এর সাবজেক্ট (যেহেতু অর্থ বরাদ্দ আছে মিটিং এর জন্য)।
গোল টেবিল বৈঠকের ছাপানো ছবিতে নিজেকে আবিস্কার (চেহারার মলিনতায় চিন্তিত)।
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিইও’দের চেহারা (অতঃপর নূতন চাকরির চিন্তা)।
স্টার মুভিজের শিডিওল (দুবার ‘রাবিশ’ এবং একবার ‘শিট’ উচ্চারণ)
এছাড়াও, লাইফ-স্টাইল ম্যাগাজিনের অর্ধ-নগ্ন প্রচ্ছদ,
‘স্বামী মানে বন্ধু’, ‘আজকের ইন্টেরিয়র’, ‘ইটিং আউট’, ‘ম্যানিকিওর’, ‘প্যাডিকিওর’
‘বয়সের ছাপ আর নয়’, ‘ম্যানোপজে করণীয়’- ইত্যাদি ঢোষ্কা নিবন্ধমালায় ডুব দেয় তারা।
তারপর বিলাতী কায়দায় গোসল সেরে যখন স্লিভলেস ব্লাউজের সাথে
মুনিয়া ব্রুকেড শাড়ি পড়ে-
আমাদের তখন অফিসে যাবার সময় হয়ে যায়।
‘বাই ডিয়ার’ বলে আমাদের বিদায় জানায় স্ত্রী-
আমরা, কতিপয় কর্পোরেট নারীর স্বামী।
মাঝে মাঝে আমাদের স্ত্রীদের ছবি ছাপে পত্রিকায়
অমুক পুরস্কার, তমুক আয়োজন
এমনকি রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তীতেও আজকাল দেখা যায় তাদের;
সেদিন তাদের স্লিভলেস ব্লাউজ থাকে না,
হাত-ঢাকা ব্লাউজের সাথে উড়ে আসে
ঠাকুরবাড়ির ফ্যাশন কিংবা চুরুলিয়ার আদব-কায়দা।
এমন গৌরবে হঠাৎ গর্ভবতী হওয়া থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যাই আমরা
কারণ, আমরা কতিপয় কর্পোরেট নারীর স্বামী।
মাঝে মাঝে আমাদের স্ত্রীদের সাথে নিয়মরক্ষার পার্টিতে যেতে হয়;
সেখানে আমরা ‘মিস্টার অমুক’ বলে পরিচিত হই।
পার্টির এক কোণে বসে থাকি গোবেচারা স্বামীরা;
আমাদের স্ত্রী’রা তখন নানা আলোচনায় মত্ত-
ডিভোর্সের সাহসিকতা
সেপারেশনের সুবিধা
নিজস্ব শরীরের আবেদন
পুরুষ সহকর্মীর ব্যক্তিত্ব
স্বামীদের (মানে আমাদের) অযোগ্যতা
রিসেন্ট ট্যুর
সাম্প্রতিক লিভ টুগেদার
পত্রিকায় ছাপানো ছবি
মন্ত্রী-আমলাদের শোবার ঘরের খবর
এবং, আমরা, কতিপয় কর্পোরেট নারীর স্বামীরা
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে ঝিমুই
অন্য নারীর শরীর দেখে চোখ জুড়াই-
এবং বসে থাকি-;
যতোক্ষণ না আমাদের কর্পোরেট স্ত্রী’রা এসে বলে,
‘এবার চলো, সবাইকে বলে নাও’।
সবার উদ্দেশে আমরা ‘থ্যাঙ্কস ফর দ্য ট্রিপ’ বলে মাথা নোয়াই;
এসব দেখে
আমাদের স্ত্রীদের পুরুষ সহকর্মীরা (সকল কর্মের সহায়ক)
ব্যাঙাচির মতো হাসে।
আমরা স্ত্রীদের পেছন পেছন নেমে আসি;
আমাদের গাড়ি চলতে শুরু করে
অর্ধ-কোটি টাকায় কেনা গাড়িটা
তাড়া খাওয়া কুকুরের মতো ছুটতে থাকে।
আমাদের কর্পোরেট স্ত্রীরা তখন
নির্জনে কাছে আসে। সঙ্গোপনে শিহরিতো হই আমরা।
আমাদের কাঁধে মাথা রাখে, হাতে হাত রাখে
সামান্য মদের নেশায় ধরা গলায়-
‘লাভ ইউ ডিয়্যার’ বলেই
আমাদের মসৃন গালে চুমু খায়।
গালের দেয়ালে লেগে থাকে স্ত্রীর ম্যাক লিপস্টিকের আয়োজন।
আমরা প্রফুল্ল হই,
হবুচন্দ্রের মতো বেহুদা লাফাই
খুশির মনোরম চোটে-
তিন নম্বর ছাগশিশুর রূপ ধারণ করি
আমরা, কতিপয় কর্পোরেট নারীর স্বামী।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×