taare Zameen Par
যারা দেখেছেন তারা অবশ্যই ডিসলেক্সিয়া শব্দটির সাথে পরিচিত।
ছবিটির প্রধান চরিত্র ঈশান পড়া ও লিখার মধ্যে যে সমস্যায় পড়েছিল তা-ই হলো ডিসলেক্সিয়া।
ছবিতে তাকে এজন্য প্রচুর বকাঝকা অপমান সহ্য করতেও হয়েছে।
ছবিটি দেখে আমার ভাল লেগেছে, যতটা না ঘটনার জন্য, তার চেয়ে বেশী
নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মিল পাওয়ার কারনে।
পড়তে বা লিখতে সমস্যা কিন্তু কোন চোখের সমস্যা না।
বরং এটি একটি স্নায়ুগত সমস্যা যা জন্মগত ভাবেই অনেক শিশুর মধ্যে থাকে।
এ ধরনের শিশুরা পড়া, লিখা বা শুনে লিখা ইত্যাদি সঠিকভাবে অন্যরা যত দ্রুত পারে, তত দ্রুত পারেনা। এজন্য তাদের লেখা অসুন্দর (কখনো কখনো উল্টো বা বিভিন্ন পেটার্নের) হয়। এক পৃষ্ঠায় এক বানানের সাথে অন্য বানান মিলেনা।
এতে তাদের শিক্ষকদের কাছে প্রচুর হেনস্থা হতে হয়। রেজাল্টও খারাপ করে।
এই সমস্যার পাশাপাশী এই শিশুদের আরো কিছু উপসর্গও থাকে, যেমন ১. ভুলে যাওয়া (বিশেষ করে পড়া),
২.সামষ্টিকাজে অনগ্রসরতা, একা থাকা,
৩.খেলা দুলায় অপারদর্শিতা ( গতি ও অবস্থান নির্ণয়ে অসামন্জস্যতা)
৪.শুদ্ধ উচ্চারনে সমস্যা।
৫. বিদেশী ভাষার গ্রতি ভিতি।
৬. অমনোযোগ।
৭. দিবাস্বপ্ন দেখার প্রবণতা।
৮. অতিরিক্ত লজ্জা।(নিজের প্রতিভাকে লুকানো)
ইত্যাদি।
কিন্তু, এই সমস্যার সাথে তারা কিছু সুবিধাও পেয়ে থাকে,
১. প্রচন্ড ভাল চিন্তাশক্তি।
২. কখনো কখনো ভাল গানিতিক প্রতিভা।
৩. চারুকলা, সংগীত প্রভৃতি সাংস্কৃতিক ব্যাপারে আগ্রহ।
৪. হাতের কাজে পারদর্শীতা।
৫. মনে মনে ঘটনা তৈরী।(দিবাস্বপ্ন)
ইত্যাদি।
সমস্যা গুলো জন্মগত হলেও বিশেষ ভাবে দেখলে সেগুলো অনেকাংশে দুর করা যায়।
আর তাদের গুণগুলো এগিয়ে নিতে পারলে খুব জিনিয়াস কিছু মানুষ পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু আমাদের দেশে এ সম্পর্কে কয়জনই বা জানে । আর কয়জনই বা তা আমলে নেয়?
তাই এই সুপ্ত প্রতিভাগুলো কেবল বকাঝকা আর অপমান সয়েই বড় হয়। তারা যেমন সমাজের সামনে আসতে পারেনা, সমাজও হারায় আইন্সটাইন , ভিঞ্চির মত কিছু প্রতিভাকে।
বিজ্ঞান মানসিকতার অভাবে এরকম কত সুযোগ যে হেলায় হারাচ্ছে, তার হিসাব রাখে কে?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:৫৮