ইতিহাসের সেই ঘটনাটা কি মনে আছে? দুই মহিলা তার কাজীর কাছে এক শিশু সন্তানকে তার নিজের বলে দাবী করে। কাজি দুই মহিলাকে সন্তান দুই ভাগ করে দেয়ার কথা বলে তলোয়ার উঁচিয়ে ধরলে এক মহিলা চিৎকার করে বলে ওঠে আমি তার মা নই ওনাকেই দিয়ে দেন! কাজি ঘোষনা করে যেই মহিলাটি শিশুটিকে অন্যকে দিয়ে দিতে চাইছে, সেই মহিলাটিই শিশুটির প্রকৃত মা! কেননা একমাত্র রক্তের সম্পর্কের প্রকৃত মা তার নিজ সন্তানকে মৃত অবস্থায় দেখতে চায় না।
আজ যেন সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটল। নোভা,শিলা, বিপাশা আর নুহাশের তার বাবার কাছ থেকে পাবার আর কিছুই নেই। কিভাবে থাকবে? কারন নুহাশের নিজের নামে গড়ে ওঠা নুহাশ পল্লী তো তার বোনের বান্ধনীর মালিকানায়। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে তার বোনের বান্ধবী যাকে সে একসময় “শাওন আপু” বলে ডাকত, সেই মেয়েটি তার বাবার ২য় স্ত্রী!! একজন রক্তমাংস মানুষের কাছে যেটা মানা এক কথায় অসম্ভব।
কিন্তু তবুও শীলা নুহাশের তার বাবার প্রতি ভালোবাসা এতটুকুও কমেনি! তারা শুধু চেয়েছিল শুধু বাবার কবরের কাছে যেয়ে আল্লাহ নিকট প্রার্থনা করে নিজেদের স্বান্তনা দিতে। তারা হয়ত গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে চেয়েছিল আমাদের নুহাশ পল্লিটল্লি দরকার নেই শুধু আমার বাবার কবরের কাছে যেতে দেয়া হোক।
কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি একজন পাষাণির জন্য, যে কিনা তার অপূর্ব অভিনয়ে দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছে! শেষ পর্যন্ত নোভা,শীলা, বিপাশা ও নুহাশকে তাদের ইচ্ছার বিষর্জন দিতে হল। থাকনা, বাবার আত্মা কষ্ট পাচ্ছে, আমরা না হয় তার কবর না দেখতে পেলাম, কিন্তু বাবার আত্মা তো শান্তি পাবে! আমরা না হয় দূর থেকেই তার জন্য দোয়া করব।
রক্তের সম্পর্কের চেয়ে বড় আর যে কিছু নেই সেটা আজ ভোর রাতের ঘটনাতেই আবার প্রমাণিত হল। হয়ত অনেকে বলবেন কেউ তো তাদের নিষেধ করেনি নুহাশ পল্লীতে তার বাবার কবরের কাছে যেতে। কিন্তু একটু শীলা নুহাশের অবস্থান থেকে চিন্তা করুন তো? সেটা কি আদৌ তাদের পক্ষে সম্ভব?
কিছুদিন পরে হয়ত নুহাশ পল্লিতে হুমায়ুন আহমেদকে কেন্দ্র করে বিশাল এক ব্যাবসায়িক যজ্ঞ গড়ে ওঠবে, হয়ত মানুষ সেখানে পিকনিকিকের মুডে সেখানে যেয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে স্ট্যাটাস দিবে, ওখানে লোক সমাগম বাড়বে, কিন্তু কোন কিছুই নোভা,শীলা, বিপাশা ও নুহাশের ভালোবাসা থেকে বড় নয়।
নোভা, শীলা, বিপাশা ও নুহাশকে বলছি, আপনার বাবার সৃষ্টি ও স্মৃতি সবসময় আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় অমর হয়ে থাকবে। এবং আপনাদেরকেও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, একজন পিতার প্রতি তার সন্তানের ভলোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে।