হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির খড়্গ নেমে আসছে যাত্রীদের ওপর। দেশের প্রধান বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কানাডীয় কোম্পানি ভিজুয়াল ডিফেন্স ইনকরপোরেশনকে (ভিডিআই)।
বিমানন্দরের নিরাপত্তার নামে বহির্গমনে যাত্রীপ্রতি ৩৫ মার্কিন ডলার (প্রায় আড়াই হাজার টাকা) নিরাপত্তা ফি আদায় করবে এই কোম্পানি। এ প্রকল্পে তারা বিনিয়োগ করবে ২৮০ কোটি টাকা। বিনিময়ে মাত্র এক বছরেই তারা তুলে নেবে ৯৩৪ কোটি টাকা। বর্তমান হিসেবে ধরলেও ২৫ বছরে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভিডিআই প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাবে। আর যাত্রীবাড়ার হারের সঙ্গে তুলনা করলে এই অর্থের পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, প্রাপ্ত ফির ১৫ শতাংশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাবে বাংলাদেশ সরকার। বাকি অর্থ পাবে ভিডিআই। এভাবে ২৫ বছরে তারা খরচসহ লাভ তুলে নেবে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহির্গমন যাত্রীসংখ্যা ছিল ৪১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৮৫ জন। এ হিসাবে প্রতি বছর টোল থেকে আয় হবে প্রায় এক হাজার ৯৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
এর ১৫ শতাংশ হিসেবে প্রায় ১৬৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাবে বাংলাদেশ সরকার। বাকি ৯৩৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা আইসিএও কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাবে ভিডিএল। প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রক্রিয়া বলবে ২৫ বছর।
শাহজালাল বিমানবন্দরের বহির্গমন যাত্রীসংখ্যা বর্তমান হারে থাকলেও ২৫ বছরে আইসিএও নিরাপত্তা চেকিং বাবদ টোল পাবে ২৩ হাজার ৩৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি। যেখানে বাংলাদেশ সরকার ২৫ বছরে আয় করবে ৪ হাজার ১২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যেভাবে যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে তাতে ভিডিআইয়ের আয়ের পরিমান কম করে হলেও ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটিতে বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। কোম্পানিটি বলছে, বিমানবন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় বায়োমেট্রিক ফিচারযুক্ত স্বয়ংক্রিয় প্রবেশ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রম তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সমন্বিত নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
আর এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। আটাবের সভাপতি এমএ মোহাইমিন সালেহ বাংলানিউজকে বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায় করবে। এতে করে টিকিটের দাম বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এর নামে যাত্রীদের ওপর এত টাকার ফি ধার্য করা ঠিক হয়নি।
বাংলাদেশ এখন উড্ডয়ন নিরাপত্তা উদ্বেগের (এসএসসি-সিগনিফিক্যান্ট সেফটি কনসার্ন) তালিকাভুক্ত। ভবিষ্যতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা (এসসিইসি-সিগনিফিক্যান্ট সিকিউরিটি কনসার্ন) উদ্বেগের তালিকায় পড়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বিমানবন্দরে নিরাপত্তাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (আইকাও) ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (টিএসএ) অনুমোদিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বলছে বেবিচক।
প্রকল্পের অধীন বিমানবন্দরে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমানাপ্রাচীরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্যারামিটার ইনট্রুডার ডিটেকশন সিস্টেম (পিআইডিএস) স্থাপন করা হবে। এতে থাকবে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম ও ভিডিও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। এ ছাড়া বিমানবন্দরে বিদ্যমান বিমানবন্দর নিরাপত্তা কর্মসূচির উন্নয়নসহ একটি সমন্বিত পরিচালনার পদ্ধতি তৈরি করা হবে।
বিমানবন্দরে যাত্রীদের দেহ তল্লাশিসহ হ্যান্ডব্যাগ, কেবিন ব্যাগ স্ক্যান করার পদ্ধতি আধুনিক করা এবং এর কার্যক্রম বৃদ্ধিতে টিএসএসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রত্যয়ন করা প্যাসেঞ্জার স্ক্যানিং ডিটেকশন ব্যবস্থা এবং মালামাল, ব্যাগ স্ক্যানিংয়ের জন্য কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত স্ক্যানিং যন্ত্র স্থাপন করা হবে, যাতে বিস্ফোরক, ধাতব ও অধাতব হুমকিমূলক বস্তু শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুত্র: লিংক