একটা সরকারের দল চালাতে কিছু ভালো লোকজন লাগে। লক্ষীপুরের খুনি বিপ্লবকে আওয়ামী লীগ তেমন পদের কেউ মনে করেই কি এত বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
শেখ হাসিনা কেন সবকিছুতে এমন ড্যাম কেয়ার জেদাজেদির পথে হাঁটা শুরু করেছেন, এর জবাব কি?
রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতার কথা বলে একদল আমাদের জ্ঞান দিচ্ছেন। খুব সত্যি কথা। সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে এ ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু এই ক্ষমতা কি আপনি যেভাবে খুশি অপব্যবহার করবেন?
আর রাষ্ট্রপতিতো নিজে কিছু করেন না। সরকার যা তৈরি করে পাঠায় সেটিতেই তিনি স্বাক্ষর করেন। সরকার কেন এভাবে রাষ্ট্রপতিকেও বিতর্কিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এমন সময় কাজটা করানো হলো যখন ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বর্ধিত চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই ওই ঘটনাটির বিচার চাই।
কিন্তু বিপ্লবের মতো একজন চিহ্নিত খুনিকে ক্ষমা ঘোষণার পর তার বর্বরতার শিকার অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের স্ত্রীর অসহায় আর্তনাদ কি কানে বেজেছে? রাষ্ট্রপতি, আপনার স্ত্রীর হত্যাকারীকেও কি আপনি ক্ষমা করে দেবেন?
আগামী নির্বাচনে ভোট চাইতে গিয়ে ভোটারদের এর জবাব কি দেবে আওয়ামী লীগ? গত নির্বাচনে এতবড় বিজয়ের পরও আওয়ামী লীগ এখনও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাজী হচ্ছে না। এ পরিস্থিতি দেখেও কি অনেকের হুশ হয় না?
এখানে বিরোধীদল সংসদে যায় না, নির্বাচন কমিশন মানে না, বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত বিপক্ষে গেলে যা খুশি মন্তব্য করে। ব্যতিক্রম ছিলেন রাষ্ট্রপতি।
এখন সরকার কি সিদ্ধান্ত নিয়ে রাষ্ট্রপতিকেও সেখানে নিয়ে যেতে চাইছে--যাতে তাঁর ডাকেও কেউ সাড়া না দেয়!
অনেকটাই এমন পরিস্থিতি ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে সৃষ্টি করেছিল বিএনপি। ‘ইয়েস উদ্দিন’ হিসেবে আওয়ামী লীগসহ সবার আস্থা হারিয়েছিলেন সারাজীবন শিক্ষকতা করা অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমদ। এমনকি মানসম্মানের স্বার্থে তাঁর কেবিনেট থেকে সুলতানা কামালসহ কয়েক উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছিলেন।
সব দরজা বন্ধ দেখে ১/১১ এসেছে। ক্ষমতায় বসে ব্যারিস্টার মইনুলের মতো বিএনপিপন্থীদের পাওয়ারফুল করেছে। এরা তাদের পাওয়ারের গরমে ক্ষমতায় না থেকেও সবার আগে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করলেন, আওয়ামী লীগের লালু-পাঞ্জুসহ অনেকের গ্রেপ্তারের পর ডিম থেরাপি হলো, অনেকে দেশত্যাগ বা পলায়নে বাধ্য হলেন এসব বৃত্তান্ত কি সবাই ভুলে গেছেন?
ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, মোহাম্মদ নাসিম, বাহাউদ্দিন নাছিম বা ড. মুনতাসির মামুন-শাহরিয়ার কবির-সালিম সামাদ-প্রিসিলা পারভিনদের শারীরিক উপসর্গগুলো কি এখনো মনে করিয়ে দেয় না দুঃসহ সেইসব দিনরাত্রি? (মজার ব্যাপার এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা সুবিধামতো ড. ফখরুদ্দিন, জেনারেল মঈনদের গোষ্ঠী উদ্ধার করেন। কিন্তু হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও ভাসুরের নামের মতো ব্যারিস্টার মইনুল, মেজর জেনারেল মতিনদের নাম উল্লেখ করেন না।)
গত নির্বাচনে ল্যান্ডস্লাইড জয়ের পরও শেখ হাসিনার পরিকল্পিত পথচলায় দেশ নিয়ে অনেকে নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। সেই অবস্থা কি আর বহাল আছে? দূর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন শেখ হাসিনাকে যতটা আন্তরিক ও সোচ্চার মনে হয়েছিল, শেয়ার বাজার কেলেংকারির চিহ্নিত কালপ্রিটদের পাকড়াওয়ে অনীহা দেখে সে বিশ্বাসটি এখন কোথায়? এখন কি কেলেংকারির সুবিধাভোগী হিসাবে সন্দেহের কিছু পারিবারিক নাম চলে আসছে না? হয়তোবা তা সত্যিও না।
লিমনের ঘটনাটি কি `তিন কন্যার মা`, শেখ হাসিনার কোনও মানবিক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছে? লিমনের ব্যাপারে জনমতের চাপে তিনি একটি বিবৃতি দিলেন, আবার সেনাবাহিনীর চাপে প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো সে বিবৃতি! ওই প্রত্যাহার উল্টো সরকারি দুর্বলতাকেই প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কারণ দেশের অন্যতম সিনিয়র সাংবাদিক এবিএম মুসার লেখার সূত্রে মানুষ জেনেছে এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অনুতপ্ত। কিন্তু তাঁর চেয়েও প্রভাবশালী কারো চাপের কাছে তাঁকে নতিস্বীকার করতে হয়েছে।
দেশের সেরা লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের সমর্থক। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখবেন তাদের প্রায় সবাই এখন নিরব। মাঝে মাঝে কেউ কিছু বলার চেষ্টা করেছেনতো স্বয়ং শেখ হাসিনা ও চেলাচামুন্ডারা এমনভাবে আক্রমণ করেন যে, লজ্জা ও মানসম্মানের ভয়ে এখন আর কেউ কথা বলেন না।
আর নিজের ঘরের সম্মানিত ব্যক্তিদের অপমানিত গৃহবন্দী রেখে (ভাবখানা এইগুলান যাবে কোথায়) এরশাদ ঘরানার মিত্র খুঁজতে গামছা গলায় ওবায়দুল কাদেরদের মাঠে নামানো হয়েছে।
শেয়ার কেলেংকারির নরকীটদের নিরাপত্তাবর্মের পিছনের লাভবানরা আসলে কারা? ঠিক একইভাবে নতুন আরেকটি প্রশ্ন চলে এসেছে সবার সামনে। একজন ভালো মানুষের জন্য ঝুঁকি নিয়ে অনেককিছু করা যায়।
বিএনপির আমলে বিতর্কিত জিন্টুর ক্ষমা বাতিল উপলক্ষেও বড় লেনদেন হয়। খুনি বিপ্লবর ক্ষেত্রেও কি তাই হয়েছে? টাকা বা অন্য কিসের বিনিময়ে শেখ হাসিনা আর রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এমন `খারাপ` ও সরকারের ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ কে করিয়েছেন?
ফজলুল বারী, সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:০২