ভাষার মাস এলেই আমার কাছে কেন জানি না মনে হয়, পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেব একটি গাধা ছিল। তাও উঁচু মাপের কোন গাধা নয়। খুবই নীচুস্তরের হ্যাবলা টাইপ গাধা।
গাধার গাধা না হলে সদ্য স্বাধীন একটি দেশে ভাষা নিয়ে কেউ ক্যাচাল লাগায়। সে লাগিয়েছিল এবং ইচ্ছা করে লাগিয়েছিল।
কার্জন হলের ওই গুরু গম্ভীর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণরত ছাত্ররা তবু মুখে মানিনা মানিনা বলে প্রতিবাদ করেছিল। আমার তো মনে হয় তোর কপাল লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারা উচিত ছিল ।
ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট ছিল পাকিস্তান। কালচার বা ভাষা ভিত্তিক কোন রাষ্ট্র নয়। ফলে এ রাষ্ট্রটি নানান কারণেই অদ্ভুত ছিল। একটি রাস্টের দুইটি টুকরা। মাঝে খানে প্রায় দেড় হাজার মাইলের ব্যাবধান। এই রাষ্ট্র কখনোই টিকতো না।
পূর্ব বাংলার ভাষা ছিল বাংলা। আর পাকিস্তানের প্রদেশেগুলোতেও একাধিক ভাষা। সুতরাং রাষ্ট্র ভাষা নিয়ে জিন্নাহ সাহেব এর " একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের এক মাত্র রাষ্ট্র ভাষা " একটি গাধাসুলভ কথা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
তিনি যেটা করতে পারতেন সেটা হলো - তিনি একটি আপোষমূলক প্রস্তাব দিতে পারতেন। যেমন - তিনি একটি কমন বা সাধারণ ভাষার প্রস্তাব দিতে পারতেন। সেটা ইংরেজি হতে পারে। বাকি ভাষাগুলো হতে পারতো জনসংখ্যার অনুপাতে। যেমন- বাংলাভাষী লোক সংখ্যা বেশী হলে প্রথম জাতীয় ভাষা হতে পারতো বাংলা। উর্দুভাষী লোকসংখ্যা দ্বিতীয় হলে উর্দু হতে পারতো দ্বিতীয় রাষ্ট্র ভাষা। রাষ্ট্রীয় কাজ চালানোর জন্য কমন ভাষা থাকলে দেশটি টিকে যেতে পারতো। জনগণেরও কল্যাণ হতে পারতো।
শ্রীলংকার কথা এ প্রসংগে বলা যেতে পারে। সেখানে বেশীর ভাগ মানুষ সিনহালা ভাষায় কথা বলে। এরপর তামিল ভাষীদের স্থান । সেখানে কমন ভাষা হিসাবে ইংরেজি খুব গুরুত্বের সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমনকি বেশীর ভাগ সংসদ সদস্য সেখানে সংসদের অধিবেশনে ইংরেজিতে ডিবেট করেন। সরকারী যে কোন ফরমে তিনটি ভাষা ব্যবহা্র করা হয়। রাষ্ট্রীয় টেলিফোন সহ সব ধরনের মোবাইল ফোন ও দপ্তরে তিনটি ভাষার অপশন আছে। তারা সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য যে কাজটি করেছে তা হলো- তাদের জাতীয় সঙ্গীতের তামিল সংস্করণ তৈরী করেছে যাতে তামিল জনগণ তা গাইতে পারে।
আর আমাদের এখানে ঠিক তার উল্টো। জিন্নাহ সাহেব ভাষা চাপিয়ে দিতে গিয়ে তার সাধের পাকিস্তানের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার চেষ্টা করেছিলেন।
বাংলা অনেক সুন্দর একটি ভাষা। কথা বললে বাংলায় বলুন। বিশুদ্ধ বাংলা বলুন। বাংলা আমার ভাষা। বাংলা আমার দেশ।
পৃথিবীতে ভাষার নাম দিয়ে কয়টা দেশ আছে? খুব বেশী নেই বলেই আমার মনে হয়। তবে শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যোগাযোগ ও উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংরেজি ভাষার সঠিক চর্চা করাও খুব জরুরি। উচ্চ শিক্ষা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ইংরেজিতে করা উচিত। তাতে করে বিশাল জ্ঞানের জগতে বিচরণ করতে সুবিধা হবে।
সম্ভব হলে সব ক্লাসেই গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ক বই গুলো ইংরেজিতে পড়ানো উচিত।
ভাষার মাসে ভাষা শহীদ ও ভাষা সংগ্রামীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
শহীদ স্মৃতি অমর হোক। বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।