বাংলাদেশের চা শিল্প ও চা শ্রমিকরা হুমকীর মুখে। প্রতিকার কী?
( ধারাবাহিক-১৬ )
-সৈয়দ আমিরুজ্জামান
চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'বিটিআরআই'-এর ইতিকথাঃ
বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে অবিভক্ত ভারতবর্ষে বর্তমান বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে অবস্থিত চা বাগানগুলোকে আসামের জোরহাটস্থ 'টোকলাই' চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে সাইন্টিফিক এন্ড টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়া হতো। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর এই সাপোর্ট বন্ধ হয়ে যায়। দেশ বিভক্তির প্রায় ৩ বছর পর এ অঞ্চলের চা শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন ও বিপননের প্রয়োজনে ১৯৫০ সালে পাকিস্তান টি এ্যাক্ট প্রণয়ন এবং এই এ্যাক্টের আওতায় পাকিস্তান টি বোর্ড গঠিত হয়। পরবর্তীতে চা শিল্পের বিকাশে সাইন্টিফিক এন্ড টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য পাকিস্তান টি বোর্ড ১৯৫২ সালে একটি চা গবেষণা স্টেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। একজন মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়োগ করে তৎকালীন ঢাকাস্থ কার্যালয়েই চা গবেষণা স্টেশনের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৫৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী শ্রীমঙ্গলে 'পাকিস্তান চা গবেষণা স্টেশন' নামে স্থায়ী গবেষণা কার্যক্রম স্থাপিত হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধত্তোরকালে এ প্রতিষ্ঠানের নামকরণ পরিবর্তন করে প্রথমে রাখা হয় 'বাংলাদেশ চা গবেষণা স্টেশন' ও পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( বিটিআরআই )-এ উন্নীত হয়। বর্তমানে এ ইনস্টিটিউটটি বাংলাদেশ ন্যাশনাল এগ্রিকালচার্যাল রিসার্স সিস্টেম (নার্স)-এর অন্তর্ভূক্ত ১০টি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। বিটিআরআই শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৩.২ কি.মিঃ দূরে সমুদ্র সমতল থেকে ২৩.১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এ প্রতিষ্ঠানের সারাদেশে ৪টি উপকেন্দ্র রয়েছে। উপকেন্দ্রগুলোর ১টি মৌলভীবাজার জেলার কালিটিতে, ১টি সিলেট শহরে, ১টি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়িতে ও সর্বশেষ ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ১টি উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়ায় অবস্থিত। বিটিআরআই-এর ৮টি গবেষণা বিভাগ রয়েছে।
গবেষণা বিভাগগুলো হচ্ছেঃ- ১. মৃত্তিকা রসায়ন, ২. উদি্ভদ বিজ্ঞান, ৩. কৃষিতত্ত্ব, ৪. কীটতত্ত্ব, ৫. উদি্ভদ রোগতত্ত্ব, ৬. প্রাণ রসায়ন, ৭. প্রকৌশল, ৮. পরিসংখ্যান ও অর্থনীতি। এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যান্য চা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমতুল্য। এই প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ভিত্তিক ফলিত গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবিত লাগসই ও টেকসই প্রযুক্তি নিয়মিত চা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হলেও অধিকাংশ চা বাগানের মালিক বা কর্তৃপক্ষ তা কাজে লাগাচ্ছেন না। বিটিআরআই বার্ষিক কোর্স, সেমিনার, কর্মশালা, বার্ষিক প্রতিবেদন, প্রজ্ঞাপন, জার্নাল, প্যামপ্লেট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সহায়তায় প্রযুক্তি হস্তান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ চা বোর্ড