বাংলাদেশের চা শিল্প ও চা শ্রমিকরা হুমকীর মুখে। প্রতিকার কী?
( ধারাবাহিক-১৪ )
-সৈয়দ আমিরুজ্জামান
দুর্দশাগ্রস্ত চা শ্রমিকরা, সংকটে চা শিল্পঃ সমাধান কীঃ
আমাদের দেশে চা প্রচলনের প্রথম দিকে বৃটিশ বেনিয়া কোম্পানীগুলো বিনামূল্যে চা পান করাতো ও চায়ের বহুমাত্রিক গুণাগুণ বর্ণনাসহ সাথে বিনামূল্যে কিছু চা দিয়ে দিতো। মানুষের মধ্যে চা পানের অভ্যাস গড়ে উঠলে চা বিক্রি হতে শুরু করে। আর সে সুবাধে বৃটিশরা কোটি কোটি টাকা মুনাফা লুটে নিয়ে গেছে এ দেশের মানুষের কাছ থেকে। চা আজ আমাদের দেশের মানুষের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাতসমূহের একটি। বিশ্ববাজারে ও আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা বিপুল হারে ক্রমাগতভাবে দিন দিন বাড়ছে।
শুধু পানীয় হিসেবেই নয়, চায়ের বহুমুখী ব্যবহারের সম্ভাবনাও বাড়ছে। টি কোলো, চকলেট, রং, মৃতদেহ সংরক্ষণ করাসহ বিভিন্ন কাজে চায়ের ব্যবহার বাড়ছে। চায়ের গুণ যতবেশী আবিস্কৃত হচ্ছে ততই এর চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সরকারী পরিকল্পনাহীনতা, লীজভুক্ত বাগানের পতিত অনাবাদী জমিতে চা আবাদের পরিকল্পনা না থাকা, টি বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর ২·৫% হারে চা চাষ সম্প্রসারণে সরকারী চাপ বা উদ্যোগ না থাকা, মালিকদের লুটপাট, চা বাগান রুগ্ন ঘোষণা করে ঋণের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা, বাগানে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা ইত্যাদি কারণে সংকট বাড়ছে। বাগানের নামে লীজ নেয়া জমি অন্য কাজে ব্যবহার, চায়ের গুণগতমান বৃদ্ধির চেষ্টা না করা, ছায়াবৃক্ষ নিধন, চা শ্রমিকদের মজুরী, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ না নেয়া, উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা না নেয়া ইত্যাদি কারণে চা শিল্প আজ হুমকীর মুখে। চিনি'র চাহিদা দিন দিন বাড়ছে অথচ কারখানা বন্ধ, উৎপাদন বৃদ্ধি না করার কারণে আমাদের দেশ আজ আমদানী নির্ভর হয়ে পড়ছে। বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বৃদ্ধি সত্ত্বেও আমাদের দেশের পাটকল বন্ধ হচ্ছে। তেমনি চায়ের চাহিদা দেশে-বিদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও চা শিল্প রক্ষায় উৎপাদন বাড়াতে না পারলে বাংলাদেশ অচিরেই আমদানীকারক দেশে পরিণত হবে। সে আশঙ্কা আজ দেখা দিয়েছে। এর পরিণতিতে বাংলাদেশ একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি অন্যতম প্রধান সুযোগ হাতছাড়া হবে, অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হবে। চা বাগানসমূহের ৭ লক্ষ অধিবাসীর এক বিশাল জনগোষ্ঠী কাজ, জীবিকা ও আশ্রয় হারাবে। জৌলুস হারাবে মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, হবিগঞ্জ, সিলেট-এর মত বড় বড় শহরসহ অসংখ্য ছোটখাটো শহর। তাই আভ্যন্তরীণ চাহিদা, চা শ্রমিক-কর্মচারীসহ বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বার্থ, বৈদেশিক বাণিজ্য-বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কথা বিবেচনা করে চা শিল্প রক্ষা ও বিকাশের পরিকল্পনা-উদ্যোগ নিতে হবে।
একদল শোষক লুটপাটকারী দেশের কৃষি, শিল্প, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদসহ ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ধ্বংস করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। চা শ্রমিকসহ সাধারণ জনগণের উদাসীনতা ওদের শোষণ-লুটপাট বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। ধ্বংস হবে আমাদের দেশের অর্থনীতি, বিপন্ন হবে আমাদের দেশের চা শ্রমিকসহ সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। এটা হতে দেওয়া যায় না।